প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ২১ আগস্ট, ২০২৫
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নামাজ কায়েম করো, জাকাত আদায় করো এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা : ৪৩)। আয়াতের শেষাংশে জামাতের সঙ্গে নামাজ পড়ার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। অন্যদিকে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যার হাতে আমার প্রাণ, তাঁর শপথ! আমার ইচ্ছা হয়, জ্বালানি কাঠ সংগ্রহ করতে আদেশ দিই, অতঃপর নামাজ আদায়ের আদেশ দিই, তারপর নামাজের আজান দেওয়া হলে এক ব্যক্তিকে লোকদের ইমামতি করার নির্দেশ দিই। অতঃপর আমি ওই লোকদের কাছে যাই এবং তাদের (যারা নামাজে শামিল হয়নি) ঘর জ্বালিয়ে দিই।’ (মুসলিম : ৬৫১)। আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘লোকেরা যদি জানত, আজান দেওয়া ও নামাজের প্রথম সারিতে দাঁড়ানোর কী মাহাত্ম্য আছে, তা হলে তাতে অংশগ্রহণের জন্য যদি লটারি ছাড়া অন্য কোনো উপায় না পেত, তবে তারা অবশ্যই সে ক্ষেত্রে লটারির সাহায্য নিত’ (বোখারি : ৬১৫)।
নামাজ একদিকে মোমিনের দেহ-মনে প্রশান্তি ও পবিত্রতার পরশ বুলিয়ে চোখের শীতলতা এনে দেয়, অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে বিরত রেখে নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন ও সুশৃঙ্খল জীবনের বার্তা দেয় এবং মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন ও জান্নাতুল ফেরদাউস প্রাপ্তির সুসংবাদ শোনায় ইত্যাদি। অন্যদিকে নিয়মিত জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় ব্যক্তিকে পার্থিব-পরকালে অফুরন্ত নেয়ামত ও কল্যাণের অংশীদার বানায়।
মর্যাদা বৃদ্ধি ও গোনাহ মাফের সুযোগ : মহান আল্লাহ নামাজের মধ্যে বান্দার জন্য অতীত গোনাহ মাফ, সওয়াব অর্জন ও মর্যাদা বৃদ্ধির অবারিত সুযোগ রেখে দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কি তোমাদের এমন বস্তুর সন্ধান দেব না, যা দ্বারা আল্লাহ তায়ালা গোনাহগুলো ক্ষমা এবং মর্যাদা বৃদ্ধি করবেন? তা হলো- কষ্টকর অবস্থায়ও পূর্ণরূপে ওজু করা, মসজিদের দিকে অধিক পদচারণা এবং এক নামাজের পর অন্য নামাজের অপেক্ষা করা। এটিই রিবাত (এতে ইসলামি রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেওয়ার ন্যায় সওয়াব রয়েছে)। এ কথা (তিনি) তিনবার বলেন।’ (মুসলিম : ২৫১)।
পঁচিশ থেকে সাতাশগুণ সওয়াব বেশি : আল্লাহতায়ালা নবীজির মাধ্যমে যে কয়েকটি বিষয়ে অন্যান্য জাতির ওপর এই উম্মতের শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ‘পৃথিবীর সব পবিত্র জমিন এই উম্মতের জন্য মসজিদতুল্য করেছেন।’ অর্থাৎ মুসলমান কোনো পবিত্র স্থানে নামাজ আদায় করলে ব্যাহত তার নামাজ আদায় হয়ে যাবে। তবে নিজ বাড়ি, দোকান অথবা অন্য কোথাও একাকী নামাজের তুলনায় ইমামের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায়কারীর জন্য অধিক সওয়াবের ঘোষণা এসেছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘একাকী নামাজ আদায়ের চেয়ে ইমামের সঙ্গে জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত পঁচিশগুণ বেশি।’ (বোখারি : ৬৪৬)। আরেক হাদিসে বলেছেন, ‘জামাতে নামাজ আদায়ের ফজিলত একাকী নামাজ অপেক্ষা সাতাশগুণ বেশি।’ (মুসলিম : ৬৫০)।
আরশের ছায়ায় আশ্রয়ের সুযোগ : সাধারণত মসজিদে ইমামের পেছনে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের কারণে মসজিদের সঙ্গে ব্যক্তির আলাদা একটা সম্পর্ক গড়ে ওঠে, এক নামাজ শেষে পরবর্তী আজান-নামাজের অপেক্ষায় থাকে; আজান হলে শত ব্যস্ততা ফেলে কালবিলম্ব না করে মসজিদে এসে জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায় করে। এমন ব্যক্তি সম্পর্কে নবীজি বলেছেন, ‘যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, সেদিন আল্লাহতায়ালা সাত শ্রেণির মানুষকে সেই ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। তন্মধ্যে একশ্রেণি হচ্ছে, যাদের অন্তরের সম্পর্ক সর্বদা মসজিদের সঙ্গে লেগে থাকে।’ (বোখারি : ১৪২৩)।
নেফাকি ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা : কোনো মুসলমানের জন্য শোভনীয় নয়- সে শয়তানের অনুসরণ ও জাহান্নামের পথে হাঁটবে এবং কথাবার্তা ও আচার-আচরণে দ্বিচারিতা প্রকাশ করবে। যথাসময়ে নামাজ আদায় ব্যক্তিকে নেফাকি (দ্বিচারিতা) ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য চল্লিশ দিন জামাতের সঙ্গে তাকবিরে উলাসহ (তাকবিরে উলা বলা হয়- ইমাম যখন তাকবির দেন, তখন সেও তাকবির দিয়ে তার সঙ্গে নামাজ শুরু করে) নামাজ আদায় করবে, তার জন্য দুটি মুক্তির নিশ্চয়তা লেখা হয়; একটি হলো জাহান্নাম থেকে আর অন্যটি নেফাকি থেকে মুক্তি।’ (তিরমিজি : ২৪১)। এ ছাড়া সামাজিক সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে জামাতে নামাজ আদায়ের ভূমিকা অপরিসীম। নিয়মিত নামাজিদের দৈনিক পাঁচবার দেখা-সাক্ষাৎ ও খোঁজখরব নেওয়ার সুযোগ হয়। পারস্পরিক একতা ও সম্প্রীতির বন্ধন গড়ে ওঠে এবং সাম্য ও বৈষম্যহীন সমাজ বিনির্মাণে ঐক্যবদ্ধ হয়। এ ছাড়া প্রবল ঝড় ও মুষলধারে বৃষ্টি হলে, প্রচণ্ড ঠান্ডা লাগলে, রাস্তায় বের হলে অসুস্থতা বা রোগ বৃদ্ধির আশঙ্কা থাকলে, রোগীর সেবায় নিয়োজিত থাকলে, সম্পদ নষ্ট হওয়া বা গাড়ি ছেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকলে জামাতে শরিক না হয়ে একাকী নামাজ আদায়ের অবকাশ রয়েছে। তবে স্বাভাবিক অবস্থায় জামাত ত্যাগ করা মোমিনের জন্য শোভনীয় নয়।
লেখক : ইমাম ও খতিব, শহিদ মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতিসৌধ জামে মসজিদ, ঝিনাইদহ