ঢাকা বৃহস্পতিবার, ০৩ জুলাই ২০২৫, ১৯ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সভাপতির অনুরোধে সাড়া দেননি সাবিনারা

সভাপতির অনুরোধে সাড়া দেননি সাবিনারা

এয়িশান ফুটবল কনফেডারেশনের (এএফসি) সভা শেষে মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে বিদ্রোহী ১৮ জন ফুটবলারের সঙ্গে কথা বলেছিলেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। তবে বাফুফে ভবনের সেই সভায় পরিস্থিতি সেভাবে আয়ত্তে আনতে পারেননি। মেয়েরা কেউই তার অনুরোধে গতকাল শনিবার পিটার বাটলারের অধীনে অনুশীলনে ফেরেননি। এমন পরিস্থিতিতে বাফুফে আসলে কী করতে যাচ্ছে! এ নিয়ে তাবিথ সরাসরি পরিষ্কার করে কিছু বলতে চাননি। তবে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার রাতে সাবিনাসহ ১৮ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে আলোচনায় বসে তাদেরকে অনুশীলনে ফেরার অনুরোধ জানিয়ে রাখেন সভাপতি। তবে মেয়েরা আগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেননি। বরং তারা সভাপতিকে যা বলেছেন, তা নিয়ে নানান ধুম্রজাল সৃষ্টি হয়েছে। মেয়েদের কেউই এনিয়ে মুখ খুলতে চাইছেন না। তাদের বক্তব্য হলো- ‘যা বলার সভাপতিকে বলেছি। উনি এখন যা করার করবেন।’

তাবিথ বিদ্রোহী ফুটবলারদের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কী ভাবছেন তা জানতে চাইলে শুরুতে বলেছেন, ‘আমি স্পষ্ট করতে চাই যে চ্যালেঞ্জটি ১৮ জন নির্দিষ্ট খেলোয়াড়ের সঙ্গে সম্পর্কিত, পাশাপাশি এটি বাংলাদেশের নারী ফুটবলের একটি সামগ্রিক বিষয়। বাংলাদেশের নারী ফুটবল এগিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা এর উন্নয়নে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ বিদ্রোহী ফুটবলারদের সঙ্গে অনেক আলোচনা হলেও সভাপতি নিজের জবানিতে কিছু বলতে চাইছেন না, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে ১৮ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছি, ঠিক বিশেষ কমিটির রিপোর্ট এবং টেকনিক্যাল রিপোর্ট পাওয়ার পরই। তবে ব্যক্তিগত আলাপের বিষয়বস্তু প্রকাশ করতে চাই না।’ ইমরুল হাসানের নেতৃত্বে বিশেষ কমিটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে। সেই রিপোর্ট মূল্যায়নের ইঙ্গিত দিয়েছেন তাবিথ, ‘কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আমরা ১৮ জন খেলোয়াড়ের সঙ্গে ধারাবাহিকভাবে যোগাযোগ করবো এবং প্রতিটি বিষয় পৃথকভাবে মূল্যায়ন করে সমাধানের চেষ্টা করবো।’

এদিকে গতকালের অনুশীলনের উপস্থিতির ওপর ফেডারেশন একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার চেষ্টা করছিল। ১৮ জনই অনড় থাকায় এখন বাফুফের জন্য সিদ্ধান্ত নেয়াও অনেকটা কঠিন। আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ৪-৫ জন শাস্তি পেলে বাকিরাও পিটারের অধীনে অনুশীলন করবেন না, তারাও ক্যাম্প ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন আগেই। এই ১৮ জনের মধ্যে ১৬ জন অক্টোবর সাফ চ্যাম্পিয়ন দলের সদস্য। বাফুফে পিটারের পক্ষে থাকলে এবং ১৮ ফুটবলার বর্জন করলে নারী ফুটবল দল বড় সংকটের মধ্যে পড়বে। ডিজি বাফুফেতে এসে শৃঙ্খলার নির্দেশনা দিলেও বিকেএসপির তিন শিক্ষার্থী সাবিনাদের সঙ্গেই আছেন এবং জাপানিজ বংশোদ্ভূত সুমাইয়ার অভিভাবকের মাধ্যমে সাবিনাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে বললেও করেননি।

১৮ জন নারী ফুটবলার বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল বরাবর ২৯ জানুয়ারি একটি চিঠি দিয়েছিলেন কোচকে অভিযুক্ত করে। ৩০ জানুয়ারি তারা গণমাধ্যমে বিষয়টি উত্থাপন করেন। এর ঘণ্টা খানেক পরই বাফুফে সাত সদস্যের বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করে। গত বৃহস্পতিবার সভাপতি বরাবর প্রতিবেদন দাখিল করেছিল সেই কমিটি। যেখানে খেলোয়াড়দের শৃঙ্খলা ভঙ্গই বড় অংশ হিসেবে আছে। কোচও খেলোয়াড়দের সমান শৃঙ্খলা ভেঙেছেন। বয়স-অভিজ্ঞতা ও পেশাদারিত্ব বিবেচনায় সেটা আরো গুরুতর হলেও বাফুফের কাছে যেন লঘু। খেলোয়াড়-কোচ কোনো পক্ষের ওপরই নিয়ন্ত্রণ নেই নারী উইংয়ের। নারী উইংয়ের ব্যর্থতায় মূলত এই সংকট ঘনীভূত হয়।

সেই নারী উইং নিয়ে প্রতিবেদনে নেই শাস্তিমূলক কোনো সুপারিশও। খেলোয়াড়-কোচ দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ নেপালের কাঠমান্ডুতে সাফ টুর্নামেন্ট চলাকালে। কোচ ‘সিনিয়র খেলোয়াড়দের পছন্দ করেন না’ বলে মনিকা চাকমা পাকিস্তান ম্যাচ ড্রয়ের পর মন্তব্য করেছিলেন। এর পর অভিজ্ঞ ও পেশাদার কোচ হয়েও বাটলার ‘ইংল্যান্ডে হলে এই খেলোয়াড়দের বহিষ্কার করতেন’ বলে ছোঁড়েন পাল্টা মন্তব্য। দলকে ইন্ধন দেয়ার জন্য সাবেক কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের দিকেও ইঙ্গিত দেন এই কোচ। এত সংকটের মধ্যেও সিনিয়র ফুটবলাররা মাঠে নিজেদের সেরাটা দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। মেয়েদের অভিযোগ সমাধানের আগেই বাফুফে সেই পিটারকে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেয়ায় তৈরি হয় এই সংকট।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত