ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নতুন রত্নকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

নতুন রত্নকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত রিয়াল মাদ্রিদ কোচ

নিয়মিত প্রথম একাদশে যখন সুযোগ পাচ্ছেন গন্সালো গার্সিয়া, কোচের আস্থা তো তার ওপর থাকবেই। কিন্তু চার ম্যাচে তিনি গোল করে ফেলবেন তিনটি, এতটা প্রত্যাশা করেননি রিয়াল মাদ্রিদ কোচ জাবি আলোনসো। কদিন আগেও ফুটবল বিশ্বের খুব কম লোকই চিনত তরুণ এই ফরোয়ার্ডকে। সেই তিনিই এখন ক্লাব বিশ্বকাপের চমক, তারকায় ঠাসা দলের নতুন রত্ন। তাকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত কোচ আলোনসো। কিলিয়ান এমবাপ্পে অসুস্থ না হলে আর এন্দ্রিক চোটে না পড়লে হয়তো ডাগআউটেই বসে থাকতে হতো গার্সিয়াকে। প্রথম একাদশে জায়গা তো মিলত না নিশ্চিতভাবেই। সেই তরুণই এখন ম্যাচের পর ম্যাচে রিয়ালের নায়ক। ক্লাব বিশ্বকাপের চার ম্যাচে সরাসরি অবদান তার চার গোলে। একটি গোলে সহায়তা করেছেন, নিজে করেছেন তিনটি। এর সর্বশেষটি গত মঙ্গলবার শেষ ষোলোয় জুভেন্টাসের বিপক্ষে। ইতালিয়ান দলটির গোলকিপার মিকেলে ডি গ্রেগোরিও একাই বাধার দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন রিয়ালের সামনে। সেভ করেছেন ১০টি! কিন্তু তিনিও পারেননি গার্সিয়ার হেড থামাতে। স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ফ্লোরিযার হার্ড রক স্টেডিয়ামে ৫৪তম মিনিটে গার্সিয়ার দুর্দান্ত সেই হেড রিয়াল মাদ্রিদকে পৌঁছে দিয়েছে ক্লাব বিশ্বকাপের কোয়ার্টার-ফাইনালে।

২০০৪ সালের মার্চে মাদ্রিদেই জন্ম তার। ১০ বছর বয়সে যোগ দেন রিয়ালের একাডেমিতে। ২০১৮ সালে তার পরিবার মায়োর্কা শহরে চলে যাওয়ায় তিনিও চলে যান রিয়াল মায়োর্কার একাডেমিতে। তবে আবার রিয়ালের একাডেমিতে ফিরে আসেন পরের বছরই। রিয়ালের ‘বি’ দল বা কাস্তিয়ার হয়ে তার অভিষেক ২০২২ সালে। তবে আলোয় আসেন তিনি গত মৌসুমে। ২৫টি গোল করেন তিনি, এক মৌসুমে যা কাস্তিয়ার রেকর্ড। এই পারফরম্যান্সের পথচলায় রিয়ালের মূল দলেও সুযোগ পেয়ে যান। গত ফেব্রুয়ারিতে কোপা দেল রেতে লেগানেসের বিপক্ষে শেষ সময়ের গোলে রিয়ালের ৩-২ গোলে জয়ের ম্যাচে প্রথম গোলের দেখাও পান।

তবু এন্দ্রিক ফিট থাকলে হয়তো ক্লাব বিশ্বকাপে তার জায়গা হতো না।

যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পর অনুশীলনে পারফরম্যান্স আর এমবাপ্পের অসুস্থতা মিলিয়ে প্রথম ম্যাচে সেরা একাদশে জায়গা পান। আল হিলালের বিপক্ষে সেদিন গোল করার পর থেকে চলছে তার দারুণ পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা। দ্বিতীয় ম্যাচে পাচুকার বিপক্ষে গোল না পেলেও একটি গোল বানিয়ে দেন তিনি। সালসবুর্কের বিপক্ষে আবার দেখা পান জালের। এবার জুভেন্টাসের বিপক্ষে তো তিনিই নায়ক।

কদিন আগেই কোচ আলোনসো বলেছেন, গার্সিয়াকে দেখে রাউল গন্সালেসকে মনে পড়ছে তার। রাউলকে মনে করা হয় রিয়ালের প্রতীক, ক্লাবের ইতিহাসের সেরাদের একজন তিনি। ক্লাবের এই কিংবদন্তির কোচিংয়ে কাস্তিয়ায় নিজেকে শাণিত করেছেন গার্সিয়া। এমন একজনের সঙ্গে তার নাম উঠে আসা মানে প্রায় সর্বোচ্চ প্রশংসা! এবার কোয়ার্টার-ফাইনালে ওঠার পর কোচ আলোনসোর কণ্ঠে ফুটে উঠল তরুণ এই ফরোয়ার্ডের জন্য আরও প্রস্তুতি। ‘তার জন্য ও দলের জন্য আমি খুবই খুশি। তার কাছে আমার চাওয়া থাকবে, এভাবেই যে ছুটতে থাকে। গোল করে এবং নানাভাবে অবদান রেখে সে খুবই ভালো পারফর্ম করছে। যে সুযোগগুলো সে পাচ্ছে, পুরোপুরিই কাজে লাগাচ্ছে।’

গার্সিয়ার এমন পারফরম্যান্সে প্রশ্নও উঠে যাচ্ছে, সামনের মৌসুমে মূল দলের স্কোয়াডে তাকে রাখা হবে কি না। আলোনসো অবশ্য এখনই সেই গবেষণায় যেতে চান না। তবে মুগ্ধতার কথা তিনি জানিয়ে রাখলেন আবার। ‘এখন ক্লাব বিশ্বকাপ চলছে, সামনের মৌসুমের স্কোয়াড নিয়ে আমরা এখনই বিশ্লেষণ করতে চাই না। এটার সময় আছে। তবে গোল তো আর আমি করব না! (হাসি)। সে এই কাজটা ভালোভাবে করছে। চার ম্যাচে তিন গোল করে ফেলবে, এতটা আশা আমিও করিনি। গোল ছাড়াও সে মাঠে ভালো কাজ করছে, সেন্টার-ব্যাকদের ক্লান্ত করে তুলছে। বিরামহীন চাপ ধরে রাখছে। সবকিছুই দলের জন্য কাজে লাগে। এসবের সঙ্গে যখন এতগুলো গোলও করে, সবকিছুই তখন আরও ভালো হয়ে ওঠে। তার ওপর আস্থা রেখেছিলাম, সে আরও ভরসা আদায় করে নিচ্ছে।’

আলোনসোর বদলি হিসেবে এই ম্যাচে ৬৮তম মিনিটে মাঠে নামেন এমবাপ্পে। দলের মূল ফরোয়ার্ডকে ফিরে পাওয়াটা রিয়ালের জন্য স্বস্তির খবরই বটে। কোচ বললেন, কোয়ার্টার-ফাইনালে এমবাপ্পেকে পুরোপুরি প্রস্তুতই পাওয়া যাবে।

‘সে প্রতিদিনই আরও সুস্থ হয়ে উঠছে। তার অবস্থার বোঝার জন্য প্রতিদিনই কথা বলি আমি। আরও তিন দিন সময় আছে আমাদের হাতে। কোয়ার্টার-ফাইনাল ম্যাচের সময় সে আরও ভালো অবস্থায় থাকবে।’ সেক্ষেত্রে মধুর এক সমস্যায় পড়তে হবে কোচকে। সেরা একাদশে এমবাপ্পেকে রাখবেন নাকি গার্সিয়াকে? উত্তরটি সময়ের হাতেই তুলে রাখলেন আলোনসো। তিনি খুশি দলের জয়ে। ‘এখনই আমি পরের ম্যাচে যেতে চাই না। আপাতত আজকের ম্যাচে থাকতে চাই। আমরা উন্নতি করেছি। এখন নতুন ধাপে যেতে হবে। সবার জন্যই আমি খুশি। ম্যাচ জিতে ভালো লাগছে। নকআউট পর্বে প্রতিটি ম্যাচই হয় জিততে হবে, নয়তো বাড়ি ফিরতে হবে। আমরা কোয়ার্টার-ফাইনালে উঠেছি, আরও দূরে যেতে চাই।’

জুভেন্টাসের বিপক্ষে গোলটি গার্সিয়া করলেও ম্যাচজুড়ে অসাধারণ খেলে ম্যাচের সেরার পুরস্কার জিতেছেন ফেদে ভালভের্দে। ৩০ গজ দূর থেকে তার দুর্দান্ত এক শট ডাইভ দিয়ে ফিরিয়েছেন মিকেলে ডি গ্রেগোরিও, আরেকবার তার ওভারহেড কিক অসাধারণ দক্ষতায় ঠেকিয়েছেন জুভেন্টাসের গোলকিপার। আরও বার দুয়েক গোলের সম্ভাবনা জাগিয়েছেন ভালভের্দে। বরাবরই অবশ্য রিয়ালের সবচেয়ে ধারাবাহিক ফুটবলার তিনি। তার জন্যই বিশেষ প্রশংসা বরাদ্দ রইল কোচের। ‘সবার কাজই সহজ করে তোলে সে। সে শীর্ষ মানের ফুটবলার, খুবই পরিপূর্ণ, সবকিছুই খুব ভালোভাবে করে। মাঠে তার দৃঢ়তা, নেতৃত্ব, সতীর্থদের যেভাবে অনুপ্রাণিত করে, সবই দেখার মতো। দলের অনেককে নিয়েই আমি খুশি, বিশেষ করে ফেদেকে নিয়ে।’ কোয়ার্টার-ফাইনালে রিয়াল মাদ্রিদের প্রতিপক্ষ বরুশিয়া ডর্টমুন্ড। আগামী বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত ২টায় শুরু ম্যাচটি।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত