ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভারতের বিপক্ষে রোমাঞ্চের অপেক্ষায় হামজার বাংলাদেশ

ভারতের বিপক্ষে রোমাঞ্চের অপেক্ষায় হামজার বাংলাদেশ

ভারতের বিপক্ষে আগেও বহু ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। কিন্তু এবারের মতো এমন আবহ তৈরি হয়নি কখনোই। অতীতের চেয়ে আত্মবিশ্বাসী এবং মানসিকভাবেও ভীষণ অনুপ্রাণিত হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যরা। তাই ঠান্ডার শহর শিলংয়ে রোমাঞ্চের অপেক্ষায় লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। এই শহরেই আজ বাংলাদেশের জার্সিতে অভিষেক হতে যাচ্ছে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে শেফিল্ডের হয়ে খেলা হামজা দেওয়ান চৌধুরীর। এটাই বড় উত্তাপ ছড়িয়েছে শিলংয়ে। সমর্থকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দ্রতে এখন হামজা চৌধুরী। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের আজকের ম্যাচটি নিয়ে আগ্রহের আরও একটি কারণ ভারতীয় দলের অন্যতম কিংবদন্তী ফরোয়ার্ড সুনীল ছেত্রী। যিনি অবসর ভেঙ্গে ফিরেছেন ১২ ম্যাচে জয়বুভুক্ষু ভারতকে জয় এনে দিতে। তবে হামজাকে সামনে রেখেই আজ ভারতকে হারিয়ে মাঠ ছাড়তে চায় লাল সবুজের দল। শিলংয়ের জওহরলাল নেহেরু স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় শুরু হবে ম্যাচটি। বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল টি স্পোর্টস ম্যাচটি সরাসরি সম্প্রচার করবে।

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচ ঘিরে মাতামাতি, উত্তেজনা ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দু’দেশের সমর্থকদের তর্কবিতর্ক আলাদা উচ্চতায় পৌঁছে গেছে। ফুটবল এত দিন তার ধারেকাছেও ছিল না। কিন্তু আজকের এই ম্যাচকে ঘিরে দু’দেশের ফুটবল প্রতিদ্বন্দ্বিতাতেও নতুন একটা ধারা যে তৈরি হতে যাচ্ছে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। ম্যাচটিকে ঘিরে উন্মাদনার পারদ দু’দেশেই ঊর্ধ্বমুখী। ফিফা র‍্যাংকিংয়ে ২১০টি দেশের মধ্যে ভারতের বর্তমান র?্যাংকিং ১২৬, আর বাংলাদেশের ১৮৫। বিশ্ব ফুটবলে নিচের সারির দু’টি জাতীয় দলের ম্যাচকে ঘিরে আপাতদৃষ্টিতে তেমন কোনো হইচই হওয়ার কারণই ছিল না, অথচ হচ্ছে। যার কিছু কারণ হামজা ও সুনীল। তারকার বিচ্ছুরনে আলোকিত হলেও বাংলাদেশ দলের প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার অভাব থেকেই গেল। কারন সৌদি আরবের তায়েফে কন্ডিশনিং ক্যাম্প করলেও কোনো প্রস্তুতি ম্যাচ খেলতে পারেননি জামাল ভূঁইয়ারা। সুদানের বিপক্ষে খেলার কথা থাকলেও তারা রাজী হয়নি। তাই সৌদি আরবের একটি ক্লাবের সঙ্গে খেলে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে হয়েছে স্প্যানিশ কোচ হাভিয়ের কাবরেরার শিষ্যদের। যদিও ভারত নিজ দেশে মালদ্বীপকে ডেকে এনে ৩-০ গোলের দুর্দান্ত একটি প্রস্তুতিমূলক জয়ী ম্যাচ খেলেছে। যেখানে সুনীল ছেত্রীর ছিল এক গোল।

এই ম্যাচের মধ্য দিয়েই প্রথম বাংলাদেশের জার্সি পরে মাঠে নামছেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ তারকা হামজা চৌধুরী। এ রকম আন্তর্জাতিক মাপের ফুটবলার এর আগে কখনো দক্ষিণ এশিয়ার কোনো দলের হয়ে কখনো খেলেননি। সুতরাং হামজা চৌধুরীর যোগদান পুরো বাংলাদেশ দলের কাছে সমর্থকদের প্রত্যাশা এক লাফে অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে। এই ম্যাচের ঠিক আগেই অবসর ভেঙে আবার জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তুলে নিয়েছেন ভারতের সফলতম ফুটবল অধিনায়ক ও সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক গোল স্কোরার সুনীল ছেত্রী। ৪০ পেরোনো সুনীল ছেত্রী শিলংয়ের মাঠেই মালদ্বীপের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলে ‘কামব্যাক’ করেছেন, নিজে গোল করেছেন এবং দলকে ৩-০ জেতানোর পেছনেও তার বড় ভূমিকা ছিল। তার ক্যারিয়ারটাও চোখজুড়ানোর মতো। ১৫২টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলে তিনি গোল দিয়েছেন ৯৫টি, যা সারাবিশ্বে চতুর্থ। পর্তুগালের ক্রিশ্চিয়াানো রোনালদো, ইরানের আলি দাইয়ি এবং আর্জেন্টিনার লিওনেল মেসি ছাড়া নিজের দেশের হয়ে এত গোল আর কেউ করেননি। ফুটবল টিমগেম হলেও আজকের ম্যাচকে দু’দেশের অনেক সমর্থকই হামজা চৌধুরী বনাম সুনীল ছেত্রীর মোকাবিলা হিসেবেই দেখছেন। দুই দলের দুই জায়ান্ট ফুটবলের দ্বৈরথ দেখতে ইতোমধ্যে দর্শক আগ্রহ তুঙ্গে।

সূত্রে জানা গেছে, ৩০ হাজার দর্শক ধারণক্ষমতার স্টেডিয়ামের আজকের ম্যাচের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে সময়ের আগেই। সাত দিনের ব্যবধানে এই স্টেডিয়ামে দু’টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ হচ্ছে। প্রথমটি হয়েছে মালদ্বীপের বিপক্ষে ভারতের প্রীতি ম্যাচ। দ্বিতীয়টি আজ এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাই পর্বের ম্যাচ। অথচ শিলংয়ে এর আগে কখনো ভারতের জাতীয় দল খেলেইনি। তাই ম্যাচটিকে ঘিরে সমর্থকদের মনে আগ্রহের কমতি নেই। পরিসংখ্যানের দিকে তাকালে নিঃসন্দেহে ভারতকেই সেরার দিকে ঠেলে দেয়া যায়। ১৯৭৮ সাল থেকৈ ’২১ পর্যন্ত নানা টুর্নামেন্টে দু’দেশ ২৬বার মুখোমুখি হয়েছিল। যার মধ্যে মাত্র তিনবার জিতেছে বাংলাদেশ। ১০টি ম্যাচ ড্র হয়েছে।

বাকি ১৩টিতে জিতেছে ভারত। তবে বাংলাদেশের তিন জয়ের মধ্যে দুটি লাল সবুজদের সুখস্মৃতি। ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে এই ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে সেমিফাইনাল বাধা কাটিয়ে ফাইনালে উঠেছিল বাংলাদেশ। পরে অবশ্য ফাইনালে মালদ্বীপকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সাফের শিরোপাও জিতে নেয় বাংলাদেশ পুরুষ ফুটবল দল। তারও আগে ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডুতে অনুষ্ঠিত সাউথ এশিয়ান গেমসের ফুটবলে সেমিফাইনালে ভারতকে ১-০ গোলে হারিয়ে বিদায় করে দেয় লাল সবুজের দল। ওই আসরের ফাইনালে স্বাগতিক নেপালকে ১-০ গোলে হারিয়ে স্বর্ণপদক জিতে নেয় বাংলাদেশ। ১৯৯১ সালে কলম্বো সাফ গেমস আসরে গ্রুপ পর্বের খেলায় ভারতকে ২-১ গোলে হারিয়ে বিদায় করে দিয়েছিল লাল সবুজের দল।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত