বিগত তিন দশক ধরে দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় খেলার তালিকায় শীর্ষস্থানটি দখল করে রেখেছে ক্রিকেট। এ সময়ে বেশ কয়েক জন আন্তর্জাতিক মানের তারকার আবির্ভাব ঘটেছে। যারা আপন আলোয় নিজেও যেমন বিকশিত হয়েছেন, তেমনি দেশের ক্রিকেটকেও এগিয়ে নিয়ে গেছেন। বিশ্ব ক্রিকেটের পরাশক্তি প্রায় সব দলকেই হারানোর স্বাদ পেয়েছে লাল সবুজ দল। পরাশক্তিদের সমীহ আদায় করা বাংলাদেশ আস্তে আস্তে তলানীর দিকে যাচ্ছে। খোদ ক্রিকেট বোর্ডে দেখা দিয়েছে বিশৃঙ্খলা। আর সেটি শুরু হয়েছে গত বছর ৫ আগস্টের পর। তখন দেশের ক্রীড়াঙ্গণে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে ক্রিকেট। সেই আগস্টে তৎকালীন সভাপতি নাজমুল হাসান পাপনকে সরিয়ে বোর্ড সভাপতি বনে যান ফারুক আহমেদ। কিন্তু আরেকটি আগস্ট আসার আগেই বিদায় নিতে হলো জাতীয় দলের সাবেক এই অধিনায়ককে। যদিও ফারুকও তার লড়াই চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এমন সঙ্কটের সময়ে রীতিমতো বোমা ফাটিয়েছেন সাবেক ক্রিকেটার তামিম ইকবাল। তার অভিমত, ক্রিকেট বাদে বোর্ডে সবকিছুই হচ্ছে এখন। তার কারণে এবার ক্রিকেটটাও জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে হুহু করে।
ক্রিকেট বোর্ড এ সঙ্কটে পড়েছে মূলত অভ্যন্তরীণ কোন্দলে। ৮ পরিচালক অনাস্থা ভোট দিয়েছিলেন ফারুক আহমেদের বিপক্ষে। এরপর থেকেই ডমিনো ইফেক্টের শুরু। এদিকে মাঠের ক্রিকেটেও বাংলাদেশ ধুঁকছে। তবে সে নিয়ে বিসিবি খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না। তামিম ইকবাল উষ্মা প্রকাশ করলেন তা নিয়েই। গতকাল শুক্রবার সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাবেক এই অধিনায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড, এটা হলো ক্রিকেটের বোর্ড। এখানে ক্রিকেট বাদে বাকি সব কিছুই হচ্ছে। কে আসবে, কে যাবে, কে নির্বাচন করবে, কে করবে না, এটা একটা পার্ট, ছোট্ট একটা পার্ট। আজকে দেখেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতি মানুষের আগ্রহটাও কতটা কমে আসছে। তো আমার কথা হচ্ছে, কে প্রেসিডেন্ট হবে, কে হবেন না তাতে তো আমার বলাতে কিছু যাবে আসবে না, তো আমার কথা থাকবে যারাই আসবেন, ক্রিকেটটা নিয়ে একটু ভাবেন। ক্রিকেট তার চার্মটা হারিয়ে ফেলছে।’ এমন পরিস্থিতি থেকে উঠে আসতে হলে প্রাধান্য দিতে হবে ক্রিকেটকে। তবে তারও আগে নিজেদের খাবি খাওয়ার বিষয়টা মেনে নিতে হবে, পরামর্শ তামিমের। তিনি বলেন, ‘আমরা যে স্ট্রাগল করছি, সেটা মেনে নেওয়াটা গুরুত্বপূর্ণ, আমরা এই বিষয়টা মানতেই চাই না যে আমরা স্ট্রাগল করছি। স্ট্রাগল করার মানে কি, শুধু জাতীয় দল ভালো খেলছে না তা না, ক্রিকেটিং দিক থেকে আমরা প্রত্যেকটা দিক থেকেই স্ট্রাগল করছি। এই জিনিসটা মেনে নিয়ে কীভাবে এখান থেকে বেরিয়ে ভালোর দিকে এগোতে হবে, তা নিয়ে আমার মনে হয় ভাবা উচিত। এখানে ক্রিকেট বাদে সবকিছুই দেখছি, ক্রিকেটটা দেখছি না।’
বেশ কিছু নির্দেশক দিয়ে দেশের ক্রিকেটের দুর্দিনের বিষয়টা আঁচ পাওয়া যায়। তার একটা তামিম নিজেই ধরিয়ে দিলেন। সাবেক এই অধিনায়ক বললেন, ‘দেশের বাইরে কে কী ভাবছে, তা নিয়ে ভাবার চেয়ে দেশের ভেতরে কে কী ভাবছে তা নিয়ে ভাবা উচিত আমাদের। পাকিস্তানে ৪জন সাংবাদিক গেছেন, বাংলাদেশের ক্রিকেটে কি এমন কিছু হয়েছে? বাংলাদেশ আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে খেলুক, জিম্বাবুয়ে বা পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলুক, যে ৪ জন সাংবাদিক আসবেন? আমি তো এমন কোনো দিন দেখিনি, তো এটা আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে? ক্রিকেট তার চার্মটা হারিয়ে ফেলছে। এ থেকে উত্তরণ করতে আমার পরামর্শ হলো প্রথমেই মেনে নেওয়া আমরা স্ট্রাগল করছি। এটা মেনে নেওয়ার পর এখান থেকে কীভাবে এগিয়ে যেতে হবে তা নিয়ে ভাবা উচিত। কে সভাপতি হবে, কে হবে না, আমার মনে হচ্ছে অগুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আমরা বেশি সিরিয়াস। যেটা ক্রিকেট, ক্রিকেটের উন্নয়ন কীভাবে হবে, ক্রিকেটকে আমরা কীভাবে এগিয়ে নিয়ে যাব, সেটা নিয়ে আমাদের কোনো ভাবনা নেই।’
সবশেষে তামিম বোর্ডে নতুন ভাবনা দেখতে চাইলেন। জানালেন, এক্ষেত্রে বয়স কোনো বিষয় নয়। তিনি বললেন, ‘আমার মনে হয় নতুন আইডিয়া নতুন চিন্তা আসার এটাই ভালো সময়। আমার মনে হয় যখন আপনি মেনে নিবেন যে আমরা স্ট্রাগল করছি, তখন আপনারা প্ল্যান করতে পারবেন যে কীভাবে আমরা আজ থেকে পাঁচণ্ডছয় বছর পর ক্রিকেটের পাওয়ার হাউজ হয়ে উঠতে পারি। আমরা সবাই জানি এক দুই বছরে এটা হতে পারব না, এটা অসম্ভব ব্যাপার। তবে এখন থেকে ওই লক্ষ্যে এগোলে একটা সম্ভাবনা আছে। আমি সবসময় একটা বিষয় বলি যে আমাদের ক্রিকেটে সবাই ভাবে যে আমি এসে চেঞ্জ করে ফেলব। আপনি এটা বদলে ফেলতে পারবেন না, আপনি চেষ্টা করতে পারেন, এরপর বদল আনতে পারবেন। কেউ যখন বলে আমি আসলে এটা করে ফেলব, ওটা করে ফেলব, এটা ভুল। আমি আসলে এটা করার চেষ্টা করব, এ জিনিসটা বলা উচিত, এখানে কার বয়স কত, এটা মোটেও বিষয় নয়, আপনি এখানে কী উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছেন, এটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।’