সুখেই ছিলেন দিয়োগো জোতা ও রুতে কারদোসো। মাত্র ১১ দিন আগেই শৈশবের এই প্রেমিকাকে বিয়ে করেছিলে লিভারপুলের তারকা। এই জুটির তিনটি সন্তান আছে। গত ২২ জুন পোর্তোয় বিয়ের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছুদিন আগে (২৮ জুন) পোস্ট করেন জোতা। এরপর নিয়মিতই নিজেদের ছবি পোস্ট করেছেন। এর কয়েক ঘণ্টা পরই মর্মান্তিক মৃত্যু হল পর্তুগালের ফুটবল তারকা জোতার। স্পেনের জামোরা প্রদেশের এ-৫২ মহাসড়কে ২৮ বছর বয়সি এই ফুটবলার তার ভাই আন্দ্রেকে নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছিলেন। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গাড়িটি রাস্তা থেকে ছিটকে পড়লে মৃত্যু হয় জোতা ও তার ভাইয়ের। জোতার মতো সিলভাও ফুটবলার ছিলেন। পর্তুগালের দ্বিতীয় বিভাগের ক্লাব পেনাফিয়েলে খেলতেন ২৬ বছর বয়সি এই তরুণ।
২০১২ সালে রুতে কারদোসোর সঙ্গে জোতার সম্পর্ক শুরু হয়। ২০২২ সালের জুলাইতে তিনি রুতেকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। এ বছর ২৮ জুন পর্তুগালের পোর্তোর এক গির্জায় তাদের বিয়ে হয়। জোতা ও রুতে তিন সন্তানের বাবা-মা। বিয়ের দিন তাদের বাচ্চারাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল। বিয়ের পরে জোতা বলেছিলেন, ‘আমি সবচেয়ে সৌভাগ্যবান’। রুতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বিয়ের ছবি শেয়ার করে লিখেছিলেন, ‘চিরকাল হ্যাঁ। আমার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’ কে জানত তার সৌভাগ্যের বয়স হবে মোটে ১১ দিন, তারপরই আনন্দ রূপ নেবে বেদনায়! জোতার সবশেষ পোস্টটাও বিয়ে নিয়েই। সে দিনের একটি ভিডিও পোস্ট করে ক্যাপশনে তিনি লিখেছিলেন, ‘এই দিনটা আমি কোনো দিনও ভুলব না।’ পোস্টটায় ভক্ত-সমর্থকদের মন্তব্য হওয়ার কথা ছিল শুভেচ্ছা জ্ঞাপনের, সে পোস্টের মন্তব্য বিভাগটা এখন ভরে গেছে তার মৃত্যুতে জানানো ভক্তদের শোক বার্তায়। জোতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর সঙ্গে পর্তুগালের হয়ে দুইবার জিতেছেন নেশনস লিগ। এমন সম্ভাবনাময় এক তারকা চলে গেলেন বড্ড অবেলায়। জোতা ভাইদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে পর্তুগিজ ফুটবল ফেডারেশনের বিবৃতি, ‘দুই চ্যাম্পিয়নকে হারিয়েছি আমরা। তাদের মৃত্যু পর্তুগিজ ফুটবলের অপূরণীয় ক্ষতি। তাদের অবদানকে সম্মান জানাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আমরা।’ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শোক জানিয়েছেন কিংবদন্তি ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো।
পর্তুগাল জাতীয় দলে জোতার এই সতীর্থ লিখেছেন, ‘এর কোনো মানে হয় না (এমন মুত্যুর)। আমরা জাতীয় দলে একসঙ্গে ছিলাম, এখনই তোমার বিয়ে হয়েছে। তোমার পরিবার, তোমার স্ত্রী আর সন্তানদের প্রতি সমবেদনা জানাই। তাদের জন্য পৃথিবীর সব শক্তি কামনা করি। আমি জানি তুমি সবসময় তাদের সঙ্গে থাকবে। শান্তিতে থাকো, দিয়োগা ও আন্দ্রে। আমরা সবাই তোমাকে মিস করব।’ সামাজিক মাধ্যমে শোক প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশের জামাল ভূঁইয়াও। নিজের অফিশিয়াল ফেইসবুক পেজে লিখেছেন, ‘শান্তিতে থেকো দিয়োগো জোতা (১৯৯৬-২০২৫)। কদিন আগে সে লিভারপুলের হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জিতেছে। পর্তুগালের হয়ে জিতেছে নেশনস লিগ। তার ভাইসহ সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছে সে।’
২০১৪ সালে পর্তুগালের ক্লাব পাকোস দে ফেরেইরায় পেশাদার ক্যারিয়ার শুরু করেন জোতা। দুই বছর পর লা লিগার ক্লাব আতলেতিকো মাদ্রিদে যোগ দিলেও ক্লাবটির হয়ে কোনো ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি। ধারে খেলেছেন পোর্তো ও উলভারহ্যাম্পটন ওয়ান্ডারার্সে। ২০১৮ সালে ইংলিশ ক্লাব উলভারহ্যাম্পটনে যোগ দিয়ে দুই বছর কাটিয়ে যোগ দেন লিভারপুলে। ২০১৭-১৮ মৌসুমে উলভারহ্যাম্পটনের হয়ে জেতেন লিগ কাপ। লিভারপুলের হয়ে গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগ জয়ের পাশাপাশি ২০২১-২২ মৌসুমে এফএ কাপও জিতেছিলেন জোতা। পর্তুগালের হয়ে নেশনস লিগ জিতেছেন দুবার ২০১৯ সালের জুনে এবং এ বছর।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে ৪ কোটি ১০ লাখ পাউন্ডে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর ক্লাবটির হয়ে ১৮২ ম্যাচে ৬৫ গোল করেছেন জোতা। পর্তুগালের জার্সিতে তার অভিষেক ২০১৯ সালে ইউরো বাছাইপর্বে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর বদলি হিসেবে। চোটের কারণে ২০২২ বিশ্বকাপে খেলতে পারেননি। গত বছর ইউরোয় তিন ম্যাচ খেলেন। পর্তুগালের হয়ে ৪৯ ম্যাচে ১৪ গোল করেছেন জোতা। মাঠের ফুটবলের বাইরেও আরেকটি বিষয়ে ভীষণ আগ্রহ ছিল জোতার। খুব ভালো গেমার ছিলেন তিনি। ২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে ফিফা ২১ ভিডিও গেমে চ্যাম্পিয়নসের লিডারবোর্ডে গোটা বিশ্বের মধ্যে ১ নম্বর স্থান দখল করেছিলেন নিজেই একটি ই-স্পোর্টস দল বানানো জোতা।