পঞ্চপা-বের তাণ্ডবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে এক সমীহ জাগানিয়া দলে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। বিশেষ করে ওয়ানডে ফরম্যাটে দাপট দেখিয়েছে টাইগাররা। তবে বছর ছয়েক আগে থেকে ভাঙতে থাকে পাঁচ তারকার মিলনমেলা। ২০২৩ বিশ্বকাপের পর থেকেই বাংলাদেশের ওয়ানডে দলে নেই সাকিব আল হাসান। বিশ্বকাপের আগের অবসর নেওয়া তামিম ইকবালও নেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। মাশরাফি বিন মুর্তজা অবসর না নিলেও ২০১৯ বিশ্বকাপের পর থেকেই জাতীয় দলের বাইরে। সবশেষ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি শেষে ওয়ানডে ছেড়েছেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিমও। বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের সেরা পাঁচের কেউই নেই জাতীয় দলের দোরগোড়ায়।
মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহর বিদায়ে মিডল অর্ডার হয়ে উঠেছে অনভিজ্ঞ। তাদের দুজনের জায়গা নিয়েছেন লিটন দাস, জাকের আলী অনিকরা। ২০ বছর ও ৩৩১ ওয়ানডে পর পঞ্চপা-বের অন্তত একজনকে ছাড়া খেলতে নেমে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে বাংলাদেশ। নতুন অধিনায়ক মেহেদী হাসান মিরাজের অধীনে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারীরা হেরেছে ৭৭ রানে। এমন হারের পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে ক্রিকেটারদের সামর্থ্য নিয়ে। প্রথম ম্যাচ শেষে তাসকিন আহমেদ অবশ্য ব্যাট ধরেছিলেন সতীর্থদের হয়ে। মিডল অর্ডারের সামর্থ্যের প্রশ্নে ডানহাতি পেসারের দেশের ক্রিকেটের ট্রানজিশনের কথা সামনে এনেছিলেন। বাংলাদেশের ক্রিকেটের পরিবর্তনের বিষয়টি বুঝতে পারছেন সানাৎ জয়াসুরিয়াও। শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ জানান, তার দেশও এক সময় এমন অবস্থার মধ্যে দিয়ে গেছে। এজন্য বাংলাদেশের তরুণদের উপর ভরসা রেখে তাদেরকে আত্মবিশ্বাস দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে জয়াসুরিয়া বলেন, ‘প্রতিটি দেশই একটা সময়ে পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়। শ্রীলঙ্কাও গিয়েছে খুবই খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে। আত্মবশ্বাসটাই তখন মূল ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। তখন নতুনদের সুযোগ দেওয়া উচিত এবং তাদের ভরসা দেয়া উচিত। আপনি যদি তাদের আত্মবিশ্বাস না দেন, তারা ভেঙে পরবে। তাই এটা নিশ্চিত করতে হবে যে নতুনদের যেনো সেই ভরসা টা দেওয়া হয়। যখনি কোনো দেশ পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যায়, তখন উচিত নতুনদের সুযোগ দেওয়া এবং তাদের উপর ভরসা রাখা। এতে করে তারা ভালো করবে ভবিষ্যতে।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘যেকোনো দলের সঙ্গেই এটা হতে পারে। শ্রীলঙ্কার সঙ্গেও হতে পারে। কিন্তু যদি টিম ম্যানেজমেন্ট এবং অধিনায়ক নতুনদের ভরসা দেয়, সেটাই মূল বিষয়। তাদের চাপে ফেলা যাবে না। আপনি যদি তাদের উপর ভরসা রাখেন, তাহলে তারা ভালো করবেই। এটা অবশ্যই সহজ কোনো কাজ না। কিন্তু নতুনদের উপর ভরসা রাখতে হবে।’
তাসকিন ও তানজিম হাসান সাকিবের বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কাকে ২৪৪ রানে আটকে দেয় বাংলাদেশ। লক্ষ্য তাড়ায় পারভেজ হোসেন ইমন দ্রুত ফিরলেও তানজিদ হাসান তামিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত মিলে সফরকারীদের এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন। একটা সময় মনে হচ্ছিল কয়েক ওভার থাকতেই ম্যাচ জিতে যাবে বাংলাদেশ। অথচ ৫ রানের ব্যবধানে ৭ উইকেট হারিয়ে মিরাজরা ম্যাচ হারে ৭৭ রানে। জয়াসুরিয়া জানান, ক্রিকেটে এমন কিছু হতেই পারে। শ্রীলঙ্কার প্রধান কোচ বলেন, ‘ক্রিকেটে যেকোনো কিছুই হতে পারে। প্রথম ১৫ ওভারে বাংলাদেশ দূর্দান্ত খেলছিল, কিন্তু তখনও আমরা প্যানিক করিনি। আমরা প্রেশার দিয়ে যাচ্ছিলাম। আমরা টাইট বোলিং করছিলাম এবং একটা ব্রেক থ্রু পাবার আশায় ছিলাম। মিলান সেটা এনে দিয়েছিল এবং একটি দুর্দান্ত ক্যাচও ছিলো। এই দুটি ঘটনা পুরো খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলো। আমরা স্পিনারদের দিয়ে আরও প্রেশার তৈরি করছিলাম।’