আর মাত্র তিনটি ম্যাচ, এরপরই জানা যাবে কার হাতে উঠলো ক্লাব বিশ্বকাপের শিরোপা। ট্রফির লড়াইয়ে এখন টিকে আছে চারটি দল। এই চার দলের মধ্যে যেকোনো দুই দল যাবে ফাইনালের মঞ্চে। ফাইনালে যাওয়ার দৌড়ে থাকা চারটি দলের প্রতিটিতে এমন খেলোয়াড় আছেন, যারা চাইলে এককভাবে বদলে দিতে পারেন ম্যাচের গতিপথ। সেমিফাইনালে কারা সেই নায়ক হতে পারেন, তাদের নিয়েই এই আয়োজন।
জন আরিয়াস : ফ্লুমিনেন্সের সেমিফাইনাল পর্যন্ত আসার অন্যতম নায়কদের একজন জন আরিয়াস। কলম্বিয়ান এই প্লেমেকার এখন পর্যন্ত ফ্লুমিনেন্সের খেলা ৫ ম্যাচের ৩টিতেই ম্যাচসেরা হয়েছেন। যেখানে এক গোল ও একটি অ্যাসিস্ট করেছেন তিনি। তবে পরিসংখ্যান দিয়ে আরিয়াসের প্রভাব ঠিক বোঝা যাবে না। ফ্লুমিনেন্সকে খেলার নিয়ন্ত্রণ এনে দেওয়া পাশাপাশি আক্রমণ গড়তেও দারুণ ভূমিকা রাখেন আরিয়াস। সম্প্রতি ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি কাকা নিজেকে আরিয়াসের ভক্ত দাবি করেছেন। চেলসির বিপক্ষেও কোচ রেনাতো গাউচোর তুরুপের তাস হয়ে উঠতে পারেন তিনি।
থিয়াগো সিলভা : বয়স ৪০ পেরিয়েও থিয়াগো সিলভা যেন চিরতরুণ। ব্রাজিলিয়ান এই সেন্টারব্যাক যে এখনও ফুরিয়ে যাননি এবারের ক্লাব বিশ্বকাপই যেন তার প্রমাণ। ফ্লুমিনেন্সের রক্ষণে অতন্দ্রপ্রহরীর ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন তিনি। তার নেতৃত্বে তৈরি করা রক্ষণ দেয়াল ভেঙে এখন পর্যন্ত মাত্র তিনটি গোল হজম করেছে ফ্লুমিনেন্স। তবে শুধু রক্ষণ সামলানোর ক্ষেত্রেই নয়, নেতৃত্ব গুণেও ক্লাবকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন সিলভা। কোচ রেনাতো গাউচোর মতে, সিলভা মাঠে কোচের মতোও ভূমিকা রাখেন। এর আগে সিলভার দলকে উজ্জীবিত করার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ সাড়া ফেলেছিল। এখন আর দুই ম্যাচে দলকে উজ্জীবিত রাখতে পারলেই ইতিহাস গড়বে সিলভার ফ্লুমিনেন্স।
পেদ্রো নেতো : ক্লাব বিশ্বকাপে চেলসির অন্যতম সেরা তারকাদের একজন পেদ্রো নেতো। বিশ্বকাপে এখন চার ম্যাচ খেলে তিনটিতে গোল করেছেন তিনি। তিন গোল করা নেতোর সামনে এখনও সুযোগ আছে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার। তিনজন চার গোল করলেও টিকে আছেন শুধু রিয়াল মাদ্রিদের গনসালো গার্সিয়া। বাকিরা যে এরইমধ্যে বিদায় নিয়েছেন। এ সুযোগ নিশ্চিতভাবে কাজে লাগাতে মরিয়া থাকবেন নেতো।
কোল পালমার : সেমিফাইনালে চেলসির তুরুপের তাস হতে পারেন কোল পালমার। বিশেষ করে পজিশন বদলে পালমার এখন যেন আরও ক্ষুরধার। পালমেইরাসের বিপক্ষে শেষ ষোলোর ম্যাচে নিজের প্রথম গোল পান এই ইংলিশ তারকা। এখন সেই ছন্দ সেমিফাইনালেও নিশ্চিতভাবে ধরে রাখতে চাইবেন তিনি। পাশাপাশি ফ্লুমিনেন্সকেও পালমারকে থামানোর বিশেষ পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। নয়তো তার হাতেই ভেসে যেতে পারে ব্রাজিলিয়ান ক্লাবটির স্বপ্ন।
উসমান দেম্বেলে : দুর্দান্ত মৌসুম কাটিয়ে ব্যালন ডি’অরে এক হাত দিয়ে রেখেছেন উসমান দেম্বেলে। এখন তার সামনে সুযোগ রঙিন মৌসুমটাকে ক্লাব বিশ্বকাপ জিতে আরেকটু রাঙানোর। এই প্রতিযোগিতায় অবশ্য নিজেকে মেলে ধরার সুযোগ সেভাবে পাননি দেম্বেলে। চোটের কারণে গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। শেষ ষোলোয় ইন্টার মায়ামির বিপক্ষে ২৮ মিনিট এবং শেষ আটে বায়ার্নের বিপক্ষে ২০ মিনিট মাঠে ছিলেন তিনি। কিন্তু এই ৪৮টি মিনিটেই এক গোল করেছেন তিনি। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে গোল করা দেম্বেলের ওপর চোখ থাকবে রিয়াল ম্যাচেও। ম্যাচে রিয়ালের বিপক্ষে পিএসজি আধিপত্য বিস্তার করতে চাইলেও জ্বলে উঠতে হবে দেম্বেলেকে। এখন দেম্বেলে সেই কাজটি করতে পারেন কি না, সেটাই দেখার অপেক্ষা।
খিচা কাভারাস্কেইয়া : পিএসজির আক্রমণভাগের অন্যতম ভরসার নাম খিচা কাভারাস্কেইয়া। গত জানুয়ারিতে নাপোলি থেকে আসার পর থেকেই আলো ছড়াচ্ছেন তিনি। দেম্বেলের অনুপস্থিতিতে আগের ম্যাচগুলোয় দারুণ অবদান রেখেছিলেন এই উইঙ্গার। এখন পর্যন্ত পাঁচ ম্যাচে দুটি অ্যাসিস্ট ও একটি গোল করেছেন এই জর্জিয়ান ফুটবলার। তবে গোলের চেয়েও আক্রমণে ভূমিকা রেখে বেশি আলোচনায় এসেছেন ‘কাভারাডোনা’ নামে পরিচিত এই ফুটবলার। রিয়ালের বিপক্ষে সেমিতেও তাকে প্রয়োজন হবে পিএসজির।
গনসালো গার্সিয়া : গনসালো গার্সিয়া এবারের ক্লাব বিশ্বকাপের অন্যতম আবিষ্কার। রিয়ালের হয়ে সুযোগ পেয়েই নিজেকে চিনিয়ে দিয়েছেন তিনি। ক্লাব বিশ্বকাপে এখন পর্যন্ত খেলা ৫ ম্যাচের প্রতিটিতে অবদান রেখেছেন এই ফরোয়ার্ড। যার মধ্যে ৪ ম্যাচে করেছেন ৪ গোল এবং অন্য একটিতে করেছেন সহায়তা।
দুর্দান্ত স্কোরিং ক্ষমতাসম্পন্ন এই ফুটবলার সামনে সুযোগ আছে প্রতিযোগিতার সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার। এমনকি রিয়ালকে ফাইনালে তুলে শিরোপা জেতাতে পারলে পেতে পারেন টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব। এখন দেখার অপেক্ষা তরুণ এই ফুটবলার ছন্দ ধরে রেখে দলকে ফাইনালে তুলতে পারেন কি না।
কিলিয়ান এমবাপ্পে : কিলিয়ান এমবাপ্পে বরাবরই বড় মঞ্চের খেলোয়াড়। বিশ্বকাপ ফাইনালসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেক ম্যাচে একাই ম্যাচের গতিপথ নির্ধারণ করে দেওয়ার ইতিহাস আছে তার। ক্লাবে বিশ্বকাপে অবশ্য অসুস্থতার কারণে ঠিকঠাক খেলতে পারেননি তিনি। গ্রুপ পর্বের কোনো ম্যাচে মাঠে নামা হয়নি তার। শেষ ষোলোয় বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে খেলেছেন মাত্র ২২ মিনিট এবং শেষ আটে ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে তাকে মাঠে দেখা গেছে ২৩ মিনিটের জন্য। তবে এর মধ্যেই ডর্টমুন্ডের বিপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে দলকে এনে দেন দারুণ এক গোল। শেষ চারেও পিএসজির বিপক্ষে রিয়ালের ভালো কিছু করতে হলে জ্বলে উঠতে হবে এমবাপ্পেকে।