ফুটবল বিশ্ব বিরল এক ঘটনার সাক্ষী হলো, যেখানে ম্যাচের নিষ্পত্তি হতে সময় লাগলো সাড়ে চার ঘণ্টা! একটি মাঠে ম্যাচ শুরু হওয়ার পর সেটা স্থানান্তরিত করে নিয়ে যাওয়া হলো আরেক মাঠে। গতকাল মঙ্গলবার বাংলাদেশ ও ভুটান অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ ম্যাচ চ্যাম্পিয়নশিপের ম্যাচের প্রথম ৪৫ মিনিট হয়েছে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনায়। এরপর বাকি ৪৫ মিনিট অনুষ্ঠিত হয়েছে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার ট্রেনিং মাঠে। ম্যাচটি শুরু হয় বিকাল ৩টায়। কাদা মাঠে ম্যাচ চালানোর অনুপযুক্ত হওয়ায় প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার ৩ ঘণ্টা পর অর্থাৎ সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে শুরু হয় পরের অর্ধ। এমনিতেই সকাল থেকেই অঝোরে ?বৃষ্টি ঝরেছে ঢাকার আকাশে। সেই বৃষ্টির মধ্যেই ফ্লাড লাইট জ্বালিয়ে শুরু হয় অনূর্ধ্ব-২০ নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের গতকাল মঙ্গলবারের দিনের প্রথম ম্যাচ। যে ম্যাচে ফেবারিট বাংলাদেশ ৪-১ গোলে হারিয়েছে ভুটানকে। বাংলাদেশের জার্সিতে হ্যাটট্রিক করেন শান্তি মারডি। একটি গোল করেছেন মুনকি আক্তার।
ভুটানের একটি গোল করেছেন সানগাই ওয়াংমো। টানা ৩ ম্যাচে ৯ পয়েন্ট নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে অনেকটা এগিয়ে গেল স্বাগতিকরা। বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার মাঠ টানা বৃষ্টিতে খেলার অনুপযুক্ত হয়ে রয়েছে। এরপর গত কয়েক দিনের বৃষ্টিতে মাঠের অবস্থা আরও বাজে হয়ে পড়েছে। গতকাল মঙ্গলবারের ম্যাচ শুরুর আগে ভারী বর্ষণে মাঠ খেলার একেবারেই অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে। সারা মাঠ কাদাময়। বল পানির মধ্যে পড়লে আটকে গেছে। বুটের স্পাইক আটকে গেছে ফুটবলারদের। বারবার আছাড় খেয়ে পড়েছেন মেয়েরা। বল রিসিভ করতে গিয়ে কাদায় পড়ে গেছেন। সত্যি বলতে কোনো দলের মেয়েরাই তাদের স্বাভাবিক ছন্দে খেলতে পারেনি এমন কাদাভরা মাঠে। ম্যাচ প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার পর তিন দফা মাঠ পর্যবেক্ষণ করেন ম্যাচ কমিশনার। সঙ্গে ছিলেন রেফারি, গ্রাউন্ডসম্যানসহ দুই দলের প্রতিনিধরা।
মাঠ শুকানোর জন্য প্রাণান্ত পরিশ্রম করেন গ্রাউন্ডসম্যানরা। চটের বস্তা ব্যবহার করতে দেখা গেছে মাঠ কর্মীদের। মাঠের পাশে জমে থাকা পানিও সরানোর চেষ্টা করেছেন। এই অবস্থায় বারবার সবাই অপেক্ষা করছিলেন কখন খেলা শুরু হবে। কিন্তু দুই দলই এমন কাদা মাখা মাঠে খেলতে অস্বীকার করেন। এরপর সিদ্ধান্ত হয় ম্যাচটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার। ম্যাচটি মূল মাঠ থেকে সরিয়ে পাশের অনুশীলন মাঠে নিয়ে ?যাওয়া হয়। দর্শকেরা গ্রাউন্ডের ফেন্সিংয়ের চারপাশে দাঁড়িয়ে যাওয়া খেলা দেখেছেন গণমাধ্যম কর্মীদের সেই ব্যবস্থাটুকুও ছিল না।
কোচ পিটার বাটলার এদিন বেঞ্চের ফুটবলারদের পরখ করেছেন। নেপালের বিপক্ষে ম্যাচের ফুটবলারদের মধ্যে একাদশে আছেন মাত্র ২ জন- বন্যা খাতুন ও শান্তি মারডি। গোলরক্ষক পজিশনে স্বর্ণা রানী মন্ডলের পরিবর্তে প্রথমবার দেখা মিলল মিলি আক্তারের। অধিনায়ক আফঈদা খন্দকারের বদলে সুরমা জান্নাতের হাতে দেখা গেল আর্ম ব্যান্ড। বেঞ্চে বসে খেলা দেখলেন নবিরন খাতুন, জয়নব বিবি রিতা, স্বপ্না রানী। লাল কার্ডের কারণে এমনিতেই দলে নেই মোসাম্মৎ সাগরিকা। বেঞ্চে বসে খেলা দেখেছেন মুনকি আক্তার, পূজা দাস ও সিনহা জাহান শিখা। ম্যাচের ২ মিনিটে তৃষ্ণা রানীর শট আটকে যায় কাদায়। এরপর ৭ মিনিটে শান্তি মারডি তিন বারের চেষ্টায় গোল দিয়েছে। ভেজা মাঠে বল আটকে যাচ্ছিল বক্সের মধ্যে। প্রথমবার ভুটানের গোলরক্ষক পেমা ইয়াংজম শান্তির শট আটকে দেয়। পরের দু-বার চেষ্টা করে অবশেষে গোল পানে শান্তি। অবশেষে ১-০ গোলে এগিয়ে গেল বাংলাদেশ।
ম্যাচের প্রথমার্ধের বাকি সময়ে আসলে কাদাময় মাঠে দুই দলের ফুটবলাররা শুধু বলের পেছনে দৌড়েছেন। কখনও বল রিসিভ করতে গিয়ে আছাড় খেয়েছেন গোলরক্ষক। কখনও ফুটবলাররা বল পাস দিয়েছেন সতীর্থকে। কিন্তু সেই বল ধরতে গিয়ে কাদামাটিতে গড়াগড়ি করেছেন। এরপরও বাংলাদেশই বেশি আক্রমণ করেছে। বিরতির খানিক আগে বাম প্রান্ত দিয়ে শান্তি মার্ডি বেশ কয়েকটি বল পোস্টে রাখেন। কখনও সেই বলে কানেক্ট করতে পারেননি বন্যা আক্তার, রূপা আক্তার।
এমন মাঠে আর যাই হোক আন্তর্জাতিক ফুটবল হয় না। মেয়েরা তবুও খেলছে। কিন্তু চোটের শঙ্কা থেকেই যায়। এমন মাঠে চোটে পড়লে দিন শেষে দায় নেবে কে? সেই কারণেই কি না শেষ পর্যন্ত সাফের বোধোদয় হয় এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচ ভেন্যু বদল করে আয়োজকরা। দ্বিতীয়ার্ধে ট্রেনিং গ্রাউন্ডে দুই দলই আক্রমণের পসরা সাজায়। আর সেই আক্রমণের ফলে ভুটান গোল শোধ করে। ম্যাচের ৫৩ মিনিটে ভুটানের সানগাই ওয়াংমো সমতা ফেরান (১-১)। তবে গোল খেয়ে আরও উজ্জ্বীবিত দেখা যায় বাংলাদেশের মেয়েদের। এরপর ৬০ মিনিটে আবারও এগিয়ে যায় বাংলাদেশ শান্তি মারডির গোলে (২-১)।
৭৬ মিনিটে মুনকি আক্তার করেন দলের তৃতীয় গোল। মাঝ মাঠ থেকে বল নিয়ে একাই ঢুকে বল জালে জড়িয়ে দেন (৩-০)। ৭৯ মিনিটে শান্তি মারডি হ্যাটট্রিক করেন। মুনকি আক্তারের বাড়িয়ে দেওয়া বলে প্লেসিংয়ে গোল করেন শান্তি। এই দিয়ে প্রতিযোগিতায় তিন ফুটবলার এ পর্যন্ত ৩টি হ্যাটট্রিক করলেন। এর মধ্যে বাংলাদেশের সাগরিকা, নেপালের পূর্ণিমা রায় রয়েছেন। বাকি সময়ে দুই দলের ফুটবলাররাই গোলের চেষ্টা করেছেন কিন্তু কেউ আর গোল করতে পারেনি। ম্যাচের পর ভেন্যু বদলের বিষয়ে জানতে চাওয়া হলেও বাফুফের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেওয়া হয়নি। সাফ থেকেও কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। শুধু তাই নয় ম্যাচ শেষে যে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলন হয়, সেটাও হয়নি এই ম্যাচের পর।