বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য হচ্ছে, যার শেষ ভালো তার সব ভালো। কারণ, মানুষ দূর অতীতের চেয়ে সাম্প্রতিক বা নিকট অতীতকেই মূল্যায়ণ করে বেশি। শ্রীলঙ্কা সফরের শুরুটা হয়েছিল টেস্ট ড্র দিয়ে। তারপর টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে স্বাগতিকরা। সফরের একেবারে শেষ প্রান্তে রয়েছে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। চলমান টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথম ম্যাচ জিতে এগিয়ে গিয়েছিল লঙ্কানরা। তবে ঘুরে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফিরিয়েছে সফরকারীরা। ফলে তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে পরিণত হয়েছে। এই অঘোষিত ফাইনাল জিতে শেষটা রাঙাতে চায় বাংলাদেশ দল। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মত টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে আজ লঙ্কানদের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। কলম্বোর রানাসিংহ প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়।
প্রথম ম্যাচে ৭ উইকেটে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচেই ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। ৮৩ রানের জয়ে সিরিজে সমতা ফেরায় টাইগাররা। লংকানদের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে রান বিবেচনায় এটিই সবচেয়ে বড় জয়। তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ জিতলেই শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো সিরিজ জয়ের স্বাদ নিবে বাংলাদেশ। সিরিজ জয়ের ব্যাপারে আত্মবিশ্বাসী টাইগাররা। বাংলাদেশ ব্যাটার শামীম হোসেন বলেন, ‘দ্বিতীয় ম্যাচে জয় আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ঐ জয় আমাদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। এখন আমাদের সিরিজ জয়ের ভালো সুযোগ আছে। আশা করি, ভালো খেলতে পারলে এই ম্যাচেও জয় সম্ভব।’ দ্বিতীয় ম্যাচের মতো সিরিজের তৃতীয় ও শেষ টি-টোয়েন্টি ম্যাচেও বাংলাদেশ দলে কিছু পরিবর্তন আসবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন সালাহউদ্দিন। যদিও উইনিং কম্বিনেশন ভাঙার পক্ষে নন জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ। মূলত ক্রিকেটারদের চোটের কথা মাথায় রেখেই পরিবর্তন আনতে হয় বলে জানিয়েছেন তিনি। সিরিজের প্রথম টি-টোয়েন্টি ম্যাচে খেলেছিলেন তাসকিন আহমেদ এবং তানজিম হাসান সাকিব। সঙ্গে মিডল অর্ডারে দেখা গেছে নাইম শেখকেও। কিন্তু দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এদের কাউকেই খেলানো হয়নি।
দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ মোট তিনটি পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নামে। নাইমের পরিবর্তে দলে ফিরেন জাকের আলী অনিক। তানজিমের বদলি হিসেবে একাদশে ফিরেন শরিফুল ইসলাম। আর তাসকিনের বদলি হিসেবে একাদশে ফিরেন মোস্তাফিজুর রহমান। একাদশে পরিবর্তন এনে সুফল পায় বাংলাদেশ। আগে ব্যাটিংয়ে নেমে শ্রীলঙ্কাকে ১৭৮ রানের লক্ষ্য দেয় লিটন দাসের দল। অধিনায়ক নিজেই করেন ৫০ বলে ৭৬ রান। এরপর শ্রীলঙ্কাকে ১৫.২ ওভারে ৯৪ রানে অল আউট করে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে জায়গা করে নিতে পারেন শেখ মেহেদী। সিরিজে এখনও০ খেলার সুযোগ হয়নি এই স্পিন বোলিং অলরাউন্ডারের। অপরদিকে একাদশে ফিরতে পারেন তাসকিন। যদিও সালাহউদ্দিন কারো নাম বলেননি।
সালাহউদ্দিন বলেন, ‘দেখুন কোনো টিমই তো চাইবে না তার উইনিং কম্বিনেশনটা ভাঙার জন্য। এটা তো নরমালি সবাই করে থাকে। বাট আমাদের ছেলেদের দিকেও তাকাতে হয় অনেক সময়। কারণ ছেলেরাও ইনজুরি থেকে অনেকে আসছে, অনেকে ওয়ার্কলোডটাও আমাদের খেয়াল করতে হয়। কারণ আমাদের পেস বোলারদের ফিট রাখাটা আমাদের জন্য খুব জরুরি। আর যেভাবে ধরেন টানা শিডিউল ছিল, এখান থেকে আসলে ছেলেদের প্রতিদিন ম্যাচ খেলানোও আসলে আমাদের জন্য অনেক ডিফিকাল্ট হয়ে যায়। তো আসলে টিমের সব দিকেই ব্যালেন্স করে আমাদের চলতে হয়।’
‘এটা হয়তো আপনারা বাইরে থেকে হয়তো বুঝবেন না। বাট আমাদের কাছে মনে হয় যে আমাদের অনেক কিছু ব্যালেন্স করে চলতে হয়। সো এই কারণে আসলে আমাদের প্লেয়ারদের সেফটিটাও তো আমার দেখা দরকার। এখন তাসকিনকে যদি আপনি টানা খেলাতে থাকেন, ওর একটা বড়সড় ইনজুরি থেকে আসছে। সে যদি আবার খেলে, তার যদি আবার ইনজুরি হয়, তখন দেখা গেল একটা ম্যাচের জন্য হয়তো তাকে এক বছর বসে থাকতে হইতে পারে। তাই আমাদের সবদিকে ম্যানেজ করে চলতে হয়।’
তবে শ্রীলঙ্কাকে হারানোর জন্য যদি কোনো পরিবর্তন আনতে হয়, তাহলে সেটার পক্ষেও থাকবেন সালাহউদ্দিন। সিরিজে এরমধ্যেই দুটি টেস্ট এবং তিনটি ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ। খেলেছে দুটি টি-টোয়েন্টিও। শ্রীলঙ্কা দলের সামর্থ্য-দুর্বলতা নিয়ে তাই ভালোই জানা হয়েছে বাংলাদেশের।
সালাহউদ্দিন আরও বলেন, ‘এই কারণে আমি বলব, যে আসলে টিমের যেটা বেস্ট কালকে হবে, সেটার দিকে আসলে আমরা খেয়াল রাখব। প্রতিপক্ষ, দেখুন আমরা তো এখন তো অলরেডি পুরা সিরিজটা প্রায় শেষের দিকেই। এখন প্রতিপক্ষকে নিয়ে আসলে তো চিন্তা করার আগে আমি মনে করব, যে লাস্ট ম্যাচে কি করেছি সেটাও আসলে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না। কালকে (আজ) আমরা যেন তাদের হারাতে পারি, সেই স্ট্র্যাটেজি নিয়েই আমাদের যেতে হবে। সেটাই হচ্ছে বেশি ইম্পরট্যান্ট এবং তার জন্য আমাদের যা যা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে যাওয়া দরকার সেটা নিয়ে আমরা যাব।’ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে কখনও টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিততে পারেনি বাংলাদেশ। এর আগে পাঁচটি দ্বিপাক্ষীক সিরিজ খেলেছে দু’দল। ২০১৭ সালে শ্রীলঙ্কায় দুই ম্যাচের সিরিজ ড্র, এখন অবধি টাইগারদের সেরা ফলাফল। সব মিলিয়ে ১৯ ম্যাচে মুখোমুখি হয়েছে দু’দল। যেখানে টাইগারদের জয় ৭টিতে এবং হার ১২টিতে। এই ম্যাচ দিয়ে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দীর্ঘ সফরের সমাপ্তি টানবে বাংলাদেশ। সফরের শুরুতে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ ১-০ ব্যবধানে এবং তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। সফরের শেষ ম্যাচ জিতে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের সুযোগ বাংলাদেশের সামনে। কিন্তু ব্যাটিং নিয়ে চিন্তার ভাঁজ রয়েছে টাইগার শিবিরে।