ঢাকা বৃহস্পতিবার, ১৪ আগস্ট ২০২৫, ৩০ শ্রাবণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

‘ভালো না হলে বোর্ড আমাকে সরিয়ে দেবে’

‘ভালো না হলে বোর্ড আমাকে সরিয়ে দেবে’

আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সময়টা মোটেও ভালো কাটছে না বাংলাদেশের। সাদা পোশাক কিম্বা রঙিন পোশাক কোনো ফরম্যাটেই নিজেদের মেলে ধরতে পারছেন না শান্ত, মিরাজ ও লিটন দাসরা। বিশেষ করে দলের ব্যাটারদের পারফরম্যান্স খুবই করুণ। দল খারাপ ফল করলে প্রথমেই তার দায় এসে পড়ে কোচিং স্টাফদের ওপর। কিন্তু বাংলাদেশ জাতীয় দলের কোনো ব্যাটিং কোচ নেই অনেক দিন হল। ডেভিড হেম্প বাংলাদেশ দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব ছাড়ার পর থেকেই পদটি খালি। ভারপ্রাপ্ত ব্যাটিং কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সিনিয়র সহকারী কোচ মোহাম্মদ সালাউদ্দিন।

সালাউদ্দিনের অধীনে প্রায় প্রতি ম্যাচেই ধস নামছে ব্যাটিংয়ে। সমালোচনার মুখে বাংলাদেশের সিনিয়র সহকারী এই কোচ গতকাল মঙ্গলবার কলম্বোতে সংবাদ সম্মেলনে রুক্ষ মেজাজে বললেন, ‘দেখুন বাংলাদেশ দল আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি না। ঠিক আছে। কেউ যদি এখানে ভালো না করে, তার সমালোচনা হবেই। এটা স্বাভাবিকভাবে নিতেই হবে। ভালো করলে সবাই বাহবা দেবে। আমি দলের জন্য শতভাগ দিচ্ছি কি না, নিজের জায়গায় সৎ কি না, সেটা আমার কাছে মুখ্য বিষয়। আমি যদি ভালো না হই তাহলে বোর্ড আমাকে সরিয়ে দেবে।’ জাতীয় দল ছেড়ে বয়সভিত্তিক দলের দায়িত্ব নিতেও আপত্তি নেই বলে জানালেন সালাউদ্দিন, ‘দেখুন আমি কোচ। আমাকে যদি কালকে বলে সালাউদ্দিন, যাও তুমি ১৩ বছর বয়সী ছেলেদের কোচিং করাও। আমার কোনো আপত্তি নেই। আমার এখানে ট্যাগ লেখা নেই যে শুধু জাতীয় দলেরই কোচ। এটা নিয়ে আমার কোনো ইগো সমস্যাও নেই। এটা নিয়ে আমি চিন্তিত না।’

সালাউদ্দিন বলেন, ‘হয়তো আমি মানসিকভাবে অনেক শক্ত। অনেক দুর্বল মানুষ হয়তো পড়ে যেতে পারে। আর এমন না যে আমার এখানে চাকরি করতে হবে। আমার অনেক কিছু করার আছে। আর আমি এখানে নিজের ইচ্ছায়ও আসি নাই যে আমি চাইছি, আমাকে চাকরি দেন।’ সাকিব আল হাসানের মতো পারফরমার দলে নেই। এ নিয়ে সালাউদ্দিন জানালেন, ‘আমি আপনাদের একটা আবার বলি। দেখেন আমাদের অনেক কিছু লাক্সারি করার মতো আসলে সুযোগ থাকে না। এটা আমাদের বুঝতে হবে। আমাদের বেস্ট, অনেক সময় ব্যাটসম্যান শর্টেজ হয়, অনেক সময় বোলার শর্টেজ হয়ে যায়। ধরেন সাকিব যখন ছিল, তখন হয়তো আমাদের সেই লাক্সারি করার মতো সুযোগ ছিল। একটা এক্সট্রা বোলার খেলাতে পারতাম, একটা এক্সট্রা ব্যাটসম্যান খেলাতে পারতাম। তো টিমের স্ট্রেন্থ অনুযায়ী আমাদের আসলে সবসময় চলতে হয়।’ এজন্যই নাসুমকে খেলাতে পারছেন না বলে জানালেন সালাউদ্দিন, ‘আমরা জানি যে নাসুমরে খেলালে হয়তো আমাদের বেনিফিট হতে পারে। কিন্তু তখন হয়তো আপনাকে দেখা যাবে রিশাদকে বসাইতে হবে অথবা অন্য কাউকে বসাইতে হবে। তো সব দিকে ব্যালেন্স করে প্রতিপক্ষের ওপর নির্ভর করে আসলে আমাদের দলটা সবসময় করতে হয়। এখানে যেহেতু আবার ব্যাটিংয়ের দিকেও আবার তাকাইতে হবে যে, আপনার ব্যাটসম্যান কতোগুলো আছে, কীভাবে আছে, কেউ ফর্মে আছে কি না, অফ ফর্মে আছে কি না, সেটার উপরে আসলে টিমের অনেক কিছু চলতে হয়।’

বাংলাদেশের ক্রিকেটে বেশ কোচ সালাহউদ্দিন। তিনি ঘরোয়া পর্যায়ে সফলতম কোচদের একজন। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি আসর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ও ওয়ানডে আসর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে (ডিপিএল) কোচ হিসেবে একাধিক শিরোপা জিতেছেন তিনি। সালাউদ্দিন ২০১৪ সালে সিঙ্গাপুরের প্রধান কোচ ছিলেন। তার অধীনে আইসিসি বিশ্ব ক্রিকেট লিগের ডিভিশন চারে পৌঁছেছিল দলটি। এছাড়া এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) লেভেল-৩ কোচিং কোর্সের স্বীকৃতি আছে সালাহউদ্দিনের।

গত বছরের নভেম্বরে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচ হিসেবে নিয়োগ পান মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তারপর থেকে জাতীয় দলের উন্নয়নে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন দেশের সুনামধন্য এই কোচ। অথচ টাইগারদের বাজে পারফরম্যান্সের কারণে কিছু মিডিয়া তাকে নিয়ে নেতিবাচক সংবাদ প্রকাশ করেছে। যে কারণে মিডিয়ার প্রতি খানিকটা ক্ষুব্ধ কোচ সালাউদ্দিন। তিনি হতাশা প্রকাশ করে বলেন, ‘ভালো না করলে সমালোচনা হবে, এটা মেনে নিতে হবে। ভালো করলে সবাই বাহবা দিবে। আমি দলের জন্য শতভাগ দিচ্ছি কি না, নিজের জায়গায় সৎ কি না এটা মুখ্য বিষয়।’ দেশের অভিজ্ঞ এই কোচ আরও বলেন, ‘গত ২৭-২৮ বছর কাজ করার পর যদি কেউ অভিযোগ করেন, তাদের বলবো লিখিত আকারে অভিযোগ দিন। ভুল হলে শুধরে নিব। আমি জানি আমি নিজের জায়গায় শতভাগ সৎ কি না। আমি ভালো কোচ না-ও হতে পারি। ভালো না হলে বোর্ড সরিয়ে দিবে। জাস্টিফাই না করে লিখে দেওয়া ঠিক না। আপনি কি জানেন লোকটা সৎ কি সৎ না? সেটা জেনে লেখা উচিৎ।’

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত