
সরকারবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে নেপাল। পুলিশ প্রতিবাদকারীদের ওপর জলকামান, টিয়ার গ্যাস ও গুলি ব্যবহার করেছে। রাজধানী কাঠমান্ডু ও অন্যান্য বড় শহরে প্রতিবাদ চলছে। সরকারের দুর্নীতি, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বন্ধ করে দেওয়ার বিরুদ্ধে জেন-জি’র আন্দোলনে উত্তপ্ত নেপাল। নিউ বানেশ্বরের পার্লামেন্ট ভবনের এলাকাসহ কাঠমান্ডুর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ বাহিনীর সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের দফায়-দফায় সংঘর্ষ চলছে। জেন-জিদের বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে এখন পর্যন্ত অন্তত ১৮ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
শুধু তা-ই নয়, শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় জারি হয়েছে কারফিউ। এমন পরিস্থিতিতে স্থগিত করা হয়েছে বাংলাদেশ ফুটবল দলের অনুশীলন। গতকাল সোমবার এই অনুশীলন হওয়ার কথা ছিল। নির্ধারিত সূচি অনুযায়ী জামাল ভূঁইয়ার দল অনুশীলন করতে পারেনি। নেপালের কাঠমান্ডু থেকে বাংলাদেশ ফুটবল দলের মিডিয়া ম্যানেজার সাদমান সাকিব জানিয়েছেন, ‘নেপাল সময় গতকাল সোমবার বিকেল সোয়া ৩টায় আমাদের অনুশীলন ছিল। দুপুর আড়াইটার দিকে জানানো হয় বাইরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত। ফলে এই সময়ে অনুশীলনের জন্য রওনা হওয়া যাবে না। বাংলাদেশ দল এখন নিরাপদে হোটেলেই অবস্থান করছে।’
কাঠমান্ডু পোস্টের খবরে বলা হয়েছে, নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের প্রতিবাদ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে তরুণেরা বিক্ষোভ করেন। তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বাধা পেরিয়ে পার্লামেন্ট প্রাঙ্গণে ঢুকে পড়েন। তখন বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল, জলকামান, রাবার বুলেট ও ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। নাম প্রকাশ না করার শর্তে জাতীয় দলের এক ডিফেন্ডার বলেন, ‘আমাদের গতকাল (সোমবার) বেলা তিনটায় অনুশীলনে যাওয়ার কথা। কিন্তু আড়াইটার দিকে হোটেলের লবিতে এসে জানতে পারি পরিস্থিতি ভালো নয়, বের হওয়া যাবে না। স্টেডিয়ামের আশপাশে নাকি শিক্ষার্থীরা অবরোধ করছে। তাই আর যাওয়া হয়নি।’
এমন পরিস্থিতিতে নেপালের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ বাতিল করা হয়েছে। আজ সন্ধ্যা পৌনে ছয়টায় কাঠমান্ডুর দশরথ স্টেডিয়ামে নেপালের সঙ্গে দ্বিতীয় প্রীতি ম্যাচ খেলার কথা ছিল বাংলাদেশের। দুই দলের প্রথম ম্যাচটি গোলশূন্য ড্র হয়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দ্বিতীয় ম্যাচ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়। তবে গতকাল সকালে দুই দলের কোচণ্ডঅধিনায়ক আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনও করেছে।
বাংলাদেশ দলের কোচ হাভিয়ের কাবরেরা জানিয়েছেন, তিনি নেপালের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ ড্র করতে পেরে খুশি এবং দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতেই সিরিজ শেষ করতে চেয়েছিলেন। ‘প্রথম ম্যাচটি ছিল প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। আমি এমনটিই চেয়েছিলাম। যেমন প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিলাম হংকং ম্যাচের জন্য, তেমনই হয়েছে। আরেকটি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত হচ্ছি। নিশ্চিতভাবেই এটি একটি খুবই কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং ম্যাচ হবে। প্রথম ম্যাচটি ড্র করেছি, দ্বিতীয় ম্যাচ জিততে চাই। জিতলে অক্টোবরের জন্য আমাদের জন্য বাড়তি অনুপ্রেরণা হবে। আগের মতো এ ম্যাচেও পারফরম্যান্স ধরে রাখতে হবে। আমরা জয়ের জন্যই নামব। সর্বোচ্চ চেষ্টা করব আগামীকাল জিততে।’ স্প্যানিশ কোচ বলেন, ‘আমি এই দলের উন্নতিতে ভীষণ খুশি ও গর্বিত। চার বছরের প্রক্রিয়ার ফল। তারা পরিকল্পনা অনুযায়ীই এগোচ্ছে। গোলরক্ষক সুজন ভালো খেলেছেন। সে অনেক দিন ধরে সুযোগ পাওয়ার অপেক্ষায় ছিল। সহজ ছিল না তার জন্য। কারণ মিতুল এবং শ্রাবণের ভালো করছে। পরিস্থিতির কারণে সে গত ম্যাচে সুযোগ পেয়েছিল। ক্যাম্পে খুব ভালো করেছে নতুন গোলরক্ষক কোচের অধীনে। জানতাম সে পুরোপুরি প্রস্তুত। তার পারফরম্যান্স নিয়ে কোনো সন্দেহ ছিল না এবং চমৎকার খেলেছে। ক্লিন শিটও পেয়েছে। তাই আমি তার জন্য খুশি, কারণ সে এই সুযোগ পাওয়ার যোগ্য ছিল।’ সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া জানান, ‘আমাদের জন্য একটি ভালো ম্যাচ ছিল। প্রায় ৫০-৫০ ম্যাচ। দুটো দলই কিছু ভালো সুযোগ পেয়েছিল। হ্যাঁ, আমাদের জন্য এটি ভালো ম্যাচ ছিল, তবে আমরা আগামীকাল নিয়ে ভাবছি এবং আমি মনে করি আগামীকাল একটি ভালো ম্যাচ খেলবো।’ হামজা-শমিতরা নেই। নেই মোরসালিনসহ অন্যরাও। নিয়মিতদের অনেকে নেই দেখে সেটা নিয়ে উদ্বিগ্ন নন অধিনায়ক জামাল। তার পরিষ্কার কথা, ‘একজন ফুটবলার হিসেবে যখন মাঠে নামি, তখন অন্য খেলোয়াড়দের অনুপস্থিতি নিয়ে ভাবি না। শুধু আমার সতীর্থদের নিয়েই ভাবি। মাঠে আমার সঙ্গে থাকা সতীর্থদের সঙ্গে নিয়ে লড়াই করতে হয় এবং তাদের সম্মান দিতে হয়। তাই আমি কখনও ভাবিনি- ওহ, এই খেলোয়াড় নেই, ওই খেলোয়াড় নেই। আমার পাশে ১০ জন ভালো সতীর্থ ছিল এবং আমার মনে হয় সবাই ভালো খেলেছে।’
দীর্ঘদিন ধরে নেপালের মাঠে বাংলাদেশের জয় নেই। সেই খরা ঘোচাতে চান জামাল। শেষ ম্যাচ দেখে কোচ কাবরেরার মতো তিন পয়েন্টের জন্য মাঠে লড়াই করতে চান তিনি, ‘কোচ যেমন বলেছেন, আমরা তিন পয়েন্ট নিয়েই বাড়ি ফিরতে চাই। তাই নেপালে ইতিবাচক ফলাফল নিয়ে শেষ করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। অবশ্যই আমাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য হলো তিন পয়েন্ট। যদিও এগুলো প্রস্তুতি ম্যাচ, কিন্তু আমরা সবাই জিততে চাই।’
প্রতিপক্ষ নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ এখনও চলমান। আগের ম্যাচে কোথায় ভুল ছিল, কোথায় উন্নতি করা যায়- সেটা নিয়েও কাজ চলছে। জামাল বলেছেন, ‘একই দলের বিপক্ষে কয়েক দিনের মধ্যে আবার খেললে তখন অবশ্যই ভাবতে হয় কোথায় আরও ভালোভাবে প্রস্তুত হওয়া যায়, কোথায় উন্নতি করা যায়, প্রতিপক্ষের শক্তি, দুর্বলতা কোথায়-এসব নিয়েও আলোচনা করতে হয়।
তাই আজকের মধ্যে আমাদের সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে, আগামী ম্যাচে কীভাবে আরও ভালো করা যায়।’
বাংলাদেশ দল কোনও চাপ নিচ্ছে না। তাদের প্রধান লক্ষ এখনও জয়। জামালের কথা, ‘বাংলাদেশ দল কোনও চাপ অনুভব করবে না। আমরা আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলবো। নেপাল দলের পরিস্থিতি বা তাদের খেলোয়াড় নিয়ে তারা ভাববে, আমাদের ভাবনা শুধু লক্ষ্য নিয়ে-সর্বোচ্চ পারফরম্যান্স দেওয়া।’ তবে নেপালজুড়ে যে উত্তেজনা চলছে তাতে ম্যাচটি শেষ পর্যন্ত বাতিল করা হয়।