
ভালো অভিজ্ঞতা অর্জন করতে গিয়ে ভয়াবহ অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দল। প্রীতি ম্যাচ খেলতে নেপালে গিয়েছিলেন লাল সবুজের প্রতিনিধিরা। একটি খেলতে পারলেও দ্বিতীয়টি খেলার আগেই বিদ্রোহের আগুনে জলে উঠে নেপাল।
সে আগুনে পুড়ে ছাড়খার হিমালয় কন্যা খ্যাত দেশটি। ওই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলেন বাংলাদেশের ফুটবলাররা। উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা পেরিয়ে বিমান বাহিনীর বিশেষ এয়ারক্রাফটে করে গতকাল বৃহস্পতিবার নেপাল থেকে দেশে ফিরেছেন জামাল ভূঁইয়ারা। বিকাল পৌনে ৫টায় কুর্মিটোলা সামরিক বিমানবন্দরে পৌঁছায় এয়ারক্রাফটি। বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বিশেষ ফ্লাইটে টিম কন্টিনজেন্টের পাশাপাশি ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া ক্রীড়া সাংবাদিকরাও ফিরে আসেন। কাঠমান্ডু থেকে আসা সকল অভ্যর্থনা জানাতে উপস্থিত ছিলেন বিমান, সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বাফুফে সভাপতিও।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত মঙ্গলবার নেপালে কেপি অলি শর্মা সরকারের পতন হয়। কাঠমান্ডু জুড়ে জ্বালাও-পোড়াও হয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ ফুটবল দল কাঠমান্ডুতে যে হোটেলে ছিল তার পাশেও আগুন জ্বলেছিল। এতে ফুটবলাররা খানিকটা শঙ্কায় ছিলেন। দুই-তিন দিন হোটেল বন্দি থাকায় মানষিকভাবেও ছিলেন বিপর্যস্ত। তাই ফুটবলারদের সেই তিন দিনের ট্রমা কাটানোর বিষয়ে বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল কুর্মিটোলায় এসে বলেন, ‘আমাদের চিকিৎসার প্রক্রিয়া রয়েছে। সেখানে অবশ্যই আমরা মানসিক কোচিং, সাইকোলজিক্যাল সাপোর্ট দেব যাদের প্রয়োজন হয়। যাদের লাগবে না তাদেরও আমরা অ্যাসেসমেন্ট করব কারণ অনেক সময় এ রকম পরিস্থিতিতে ফিজিক্যাল শক হয়।
আমরা এই বিষয়ে সচেতন রয়েছি। পাশাপাশি বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের মেডিক্যাল টিম প্রস্তুত ছিল ফুটবলারদের বিশেষভাবে চিকিৎসাজনিত কিছু প্রয়োজন হলে।’
কাঠমান্ডুতে জাতীয় ফুটবল দলের আবাসিক হোটেল ছিল ক্রাউন ইম্পেরিয়ালে। তার পাশেই একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আগুন দেয় হামলাকারীরা। তবে যদি জামালদের হোটেল আক্রান্ত হত তাহলে বাংলাদেশ দলের আবাসন নিয়ে দ্বিতীয় ও তৃতীয় পরিকল্পনা ভেবে রেখেছিল বাফুফে। তাবিথের কথা, ‘আমাদের টিম হোটেলের পাশে আগুন লেগেছিল। আমরা কিন্তু আগেই আমাদের টিমের জন্য দ্বিতীয় ও তৃতীয় লোকেশন ঠিক করে রেখেছিলাম।’ খেলোয়াড়, কোচিং স্টাফ, কর্মকর্তা মিলিয়ে ৩৭ জন ছিলেন কাঠমান্ডুতে। নেপালে ফুটবল ম্যাচ কাভার করতে যাওয়া ১৭ জন সাংবাদিককেও বাফুফে বিশেষ বিমানের তালিকায় রেখেছে। এ নিয়ে ফেডারেশন সভাপতি বলেন, ‘সবাই মিলে আমরা ফুটবল ও ক্রীড়া পরিবার। শুধু ২৩ জন ফুটবলার নন, মিডিয়াসহ সবাইকে নিয়েই আমরা ফুটবলাঙ্গন। যখন আমরা রেসকিউ মিশনে পরিকল্পনা করেছি, তখন কাঠমান্ডুতে থাকা মিডিয়া ভাই-বোনদের নিয়েই কাজ করেছি।’ কাঠমান্ডু এয়ারপোর্ট সচল হওয়ার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যেই বাংলাদেশ দল ও ক্রীড়া সাংবাদিকরা ঢাকায় পৌছানোর জন্য সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাফুফে সভাপতি, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়, পররাষ্ট্র ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ দূতাবাস কাঠমান্ডুর সবাই আন্তরিকভাবে সহায়তা করেছে। বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই বাংলাদেশ বিমানবাহিনী, আর্মি এবং আর্মড ফোসর্ডকে যারা সফলভাবে কাঠমান্ডু থেকে সবাইকে নিয়ে দেশে নিয়ে এসেছে।’ আর্মড ফোর্সড ডিভিশনের ডিজি অপারেশন্স অ্যান্ড প্ল্যান বিগ্রেডিয়ার জেনারেল আলীম নিরাপদে দেশ প্রত্যাবর্তনের এ মিশনে সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে আন্তরিক ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছেন। আগামীতে সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী দেশ ও জনগণের যে কোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী আত্মনিয়োগের জন্য সদা অঙ্গীকারবদ্ধ বলে জানান।