
টি-টোয়েন্টি মানেই পুরোনো রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড গড়া। গতকাল শনিবার তাতে আরও একবার প্রমাণ হল সেটি। এলোমেলো হলো রেকর্ডের পাতা। ওল্ড ট্রাফোর্ড ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আগে ব্যাট করে ৩০৪ রানের পুঁজি পায় ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে এটা তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টিতে এটা তৃতীয় সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। এই সংস্করণে তৃতীয় দল হিসেবে ৩০০ রানের কোটা পার করল ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহটা ৩৪৪ রানের। গাম্বিয়ার বিপক্ষে এই সংগ্রহ দাঁড় করিয়েছিল জিম্বাবুয়ে। মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে ৩১৪ রান করেছিল নেপাল, যেটা আছে তালিকার দুইয়ে। জবাবে ১৪৬ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতেছে ইংল্যান্ড। প্রোটিয়ারা অলআউট হয়ে যায় ১৫৮ রানে। টি-টোয়েন্টি সংস্করণে রানের হিসাবে ইংল্যান্ডের এটা সবচেয়ে বড় জয়। এতদিন তাদের সবচেয়ে বড় জয়টি ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৩৭ রানের।
ইংল্যান্ডের জয়ের নায়ক ফিল সল্ট। ৮ ছক্কা ও ১৫ চারে ৬০ বলে ১৪১ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন তিনি। টি-টোয়েন্টিতে ইংল্যান্ডের হয়ে এটা সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। করেছেন ৩৯ বলে ইংল্যান্ডের হয়ে এই সংস্করণে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডও। ২০২১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে লিয়াম লিভিংস্টোন সেঞ্চুরি করেছিলেন ৪২ বলে। রেকর্ড গড়া সল্ট ম্যাচ শেষে জানালেন বিশ্বসেরা হওয়ার স্বপ্নের কথা, ‘ক্রিজে সময়টা উপভোগ করেছি। ভালো স্ট্রাইক রেটে নিজের খেলাকে আমি যতটা গভীরে সম্ভব টেনে নিতে চাই। এ দুটো কাজ সব সময় করা যায় না, তবে আমি এটাই করতে চাই। বিশ্বের সেরা হতে চাই এতে।’
ইংল্যান্ড নিজেদের ইনিংসে চার মেরেছে ৩০টি এবং ছয় মেরেছে ১৮টি। শুধু বাউন্ডারি থেকেই ২২৮ রান তুলেছে ইংল্যান্ড, যা তাদের মোট রানের ৭৫ শতাংশ। জস বাটলার খেলেন ৩০ বলে ৮৩ রানের ইনিংস। তার স্ট্রাইক রেট (২৭৬.৬৬) ফিল সল্টের চেয়ে বেশি (২৩৫.০০)। রান বন্যার ম্যাচে কাগিসো রাবাদার মতো পেসার ৪ ওভারে দিয়েছেন ৭০ রান! ইংলিশ বোলারদের মধ্যে জফরা আর্চার ৩ ওভারে ২৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। এই ম্যাচে হয়েছে ১৫টি রেকর্ড।
দেখে নেওয়া যাক এক নজরে
১. বিশ্বের তৃতীয় দল হিসেবে ২ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ৩০০ বা তার বেশি রানের ইনিংস গড়ল ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় টেস্ট খেলা দেশ হিসাবে ইংল্যান্ড এই কৃতিত্ব অর্জন করল। এত দিন নেপাল এবং জিম্বাবুয়ের এই কৃতিত্ব ছিল।
২. গত শুক্রবারের ম্যাচে জস বাটলার ১৮ বলে ফিফটি করেন। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তৃতীয় দ্রুততম অর্ধশতরান করলেন বাটলার। তার আগে রয়েছেন মইন আলি (১৬ বল) এবং লিয়াম লিভিংস্টোন (১৭ বল)।
৩. প্রথম ৫.৫ ওভারে ১০০ রান তুলেছে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে টেস্ট খেলা দেশগুলোর মধ্যে যা দ্বিতীয় দ্রুততম।
৪. সল্ট এবং বাটলার ওপেন করতে নেমে উদ্বোধনী জুটিতে করেন ১২৬ রান। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এই নিয়ে তারা চতুর্থ বার ১০০ বা তার বেশি রানের জুটি গড়লেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ১০০ রানের জুটির তালিকায় তারা এখন যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে।
৫. সল্ট-বাটলার জুটি ৪৭ বলে ১২৬ রান করেছে। ওভার প্রতি তারা তুলেছে ১৬.০৬ রান। টেস্ট খেলা দেশগুলোর মধ্যে ১০০ রানের জুটির ক্ষেত্রে ওভার প্রতি এটাই সর্বোচ্চ রান।
৬. এই ম্যাচে সল্ট অর্ধশতরান পূর্ণ করেন ১৯ বলে। ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের মধ্যে ২০ ওভারের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ দ্রুততম অর্ধশতরান করেন তিনি। তার আগে রয়েছেন মইন (১৬ বল), লিভিংস্টোন (১৭ বল) এবং বাটলার (১৮ বল)।
৭. ১০ ওভারের পর ইংল্যান্ডের রান ছিল ১ উইকেটে ১৬৬। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তৈরি হল নতুন রেকর্ড। এর আগে কখনও প্রথম ১০ ওভারে এত রান ওঠেনি।
৮. ১২.১ ওভারে ২০০ রান তোলেন ইংল্যান্ডের ব্যাটারেরা। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে কোনো দল এত দ্রুত ২০০ রান তুলতে পারেনি। গাম্বিয়ার বিরুদ্ধে জিম্বাবুয়ে ১২.৫ ওভারে ২০০ রান তুলেছিল ২০২৪ সালে। সেই রেকর্ড ভেঙে দিলেন ব্রুকেরা।
৯. ৩৯ বলে সেঞ্চুরি করেছেন সল্ট। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে এটাই ইংল্যান্ডের কোনো ব্যাটারের দ্রুততম শতরান। সল্ট ভেঙে দিলেন লিভিংস্টোনের ৪২ বলে শতরানের রেকর্ড।
১০. সূর্যকুমার যাদবের একটি রেকর্ডও ভেঙে দিয়েছেন সল্ট। টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে চতুর্থ শতরান করতে সল্ট নিলেন ৪২টি ইনিংস। সূর্যকুমার চারটি শতরান করতে নিয়েছিলেন ৫৭টি ইনিংস।
১১. টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে শতরানের সংখ্যায় যুগ্মভাবে দ্বিতীয় স্থানে উঠে এলেন সল্ট। তার এবং সূর্যকুমারের শতরানের সংখ্যা চারটি। রোহিত শর্মা এবং গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের পাঁচটি করে শতরান রয়েছে।
১২. সল্টের অপরাজিত ১৪১ রান টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ইংল্যন্ডের কোনো ব্যাটারের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। ২০২৩ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১১৯ রানের ইনিংসটি ছিল সল্টেরই।
১৩. কোনো টেস্ট খেলা দেশের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের ৩০৪ রানই টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে সর্বোচ্চ। ভেঙে গেল ভারতের রেকর্ড। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২৯৭ রান করেছিল ভারত।
১৪. দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইংলিশ ব্যাটাররা ৪৮টি বাউন্ডারি মেরেছেন। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এক ইনিংসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বাউন্ডারি মারার নজির গড়েছেন তারা। গাম্বিয়ার বিপক্ষে ২০২৪ সালে ৫৭টি বাউন্ডারি মেরেছিলেন জিম্বাবুয়ের ব্যাটাররা।
১৫. টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ রানের ইনিংস গড়েছেন ব্রুকরা। তাদের আগে রয়েছে জিম্বাবুয়ে (৩৪৪/৪) ও নেপাল (৩১৪/৩)।