
দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ম্যাচে টসের সময় পাকিস্তানের অধিনায়ক আগা সালমানের সঙ্গে হাত মেলাননি ভারতের দলপতি সূর্যকুমার যাদব। ম্যাচ শেষেও পাকিস্তানিদের সঙ্গে করমর্দন না করেই ড্রেসিংরুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দেন ভারতীয়রা। এ ঘটনায় ভারতের আচরণে হতাশ হলেও পাকিস্তান ক্ষোভ প্রকাশ করেছে ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফটের ওপর।
পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) আইসিসির কাছে অভিযোগ করে, টসের সময় ম্যাচ রেফারি পাইক্রফটই দুই অধিনায়ককে হাত না মেলানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন, যা নিয়মবিরুদ্ধ। পাইক্রফটের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ এনে তাকে এশিয়া কাপ থেকে সরিয়ে দিতে আইসিসিকে ই-মেইল পাঠায় পিসিবি। নয়তো টুর্নামেন্ট বর্জনের হুমকি দেয়। শেষ পর্যন্ত পাইক্রফট পাকিস্তান দলের ম্যানেজার ও অধিনায়কের কাছে ক্ষমা চাওয়ায় দলটি আবারও খেলতে নামে। পাইক্রফটের ক্ষমা চাওয়ায় পাকিস্তান ক্রিকেটের জয় দেখছেন রামিজ রাজা। তার ক্ষোভের অবশ্য শেষ হয়নি তাতে। পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ও সাবেক বোর্ড প্রধানের অভিযোগ পাইক্রফট সবসময়ই ভারতীয় দলের কাছে প্রিয় এবং এই ম্যাচ রেফারিকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায় ভারত।
টানাপোড়েনের পর গত বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে পাকিস্তানের ম্যাচ পিছিয়ে দেওয়া হয় এক ঘণ্টা। জরুরি বৈঠকের পর পিসিবি প্রধান মহসিন নাকভি জানান, পাকিস্তান ম্যাচটি খেলবে। পরে জানা যায়, পাইক্রফট ক্ষমা চাওয়ার পর খেলতে রাজি হয় পাকিস্তান। পিসিবির জরুরি বৈঠকে ছিলেন সাবেক প্রধান রামিজ রাজাও। পরে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে সাবেক ব্যাটসম্যান বললেন, পাইক্রফটের ক্ষমা চাওয়ায় নিজেদের নৈতিক জয় দেখছেন তিনি। যদিও তার চাওয়া মাঠের ক্রিকেটে দলের জয়। ‘এটা আমাদের জন্য একটি জয়। পরিস্থিতি খুবই সংকটপূর্ণ ছিল। আবেগের জোয়ার বয়ে যাচ্ছিল। আমি খুশি যে, আবেগপ্রবণ কোনো সিদ্ধান্ত আমরা নেইনি। টুর্নামেন্ট বর্জন করলে আমাদের দেশের ক্রিকেটের বড় ক্ষতি হতো। আমি সবসময়ই বিশ্বাস করেছি, আমাদের দলের উচিত পারফরম্যান্স দিয়েই সব জবাব দেওয়া। এই হতাশা-ক্ষোভের প্রতিফলন মাঠে পড়া উচিত এবং এটা আমাদেরকে আরও ভালো কিছু করতে উজ্জীবিত করা উচিত।’
মাঠের ক্রিকেটে ভারতের সামনে এখন তেমন একটা পাত্তাই পায় না পাকিস্তান। টি-টোয়েন্টিতে দুই দলের ১৪ লড়াইয়ের ১১টিই জিতেছে ভারত। ওয়ানডেতে সর্বশেষ ছয়টি নিষ্পত্তি হওয়া ম্যাচই জিতেছে ভারত। মাঠে ভারত ভালো খেললেও পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ভারতীয় অধিনায়ক যা বলেছেন, তা নিয়ে আপত্তি জানালেন রামিজ। সেদিন ম্যাচের আগে-পরে হাত না মেলানোর পর পুরস্কার বিতরণী আয়োজনে গিয়ে সুরিয়াকুমার জয়টি উৎসর্গ করেন ভারতের সশস্ত্র বাহিনীকে এবং গত এপ্রিলে পেহেলগাম হামলায় আক্রান্তদের ও তাদের পরিবারের পাশে থাকার কথা জানিয়ে সংহতি প্রকাশ করেন তিনি।
খেলার মাঠে এসব টেনে আনার কারণ দেখছেন না রামিজ। ‘আমার সবচেয়ে বড় আপত্তির জায়গা, ম্যাচ শেষে পুরস্কার বিতরণীতে যা বলা হয়েছে (সুরিয়াকুমার ইয়াদাভ)। ক্ষমা চাওয়া হলে ভালো, কারণ ক্রিকেট যদি রাজনৈতিক আঙিনায় পরিণত হয়, তাহলে কিছুই অর্জন করা যাবে না। আমার স্রেফ আশা, আমাদের ক্রিকেট দল যেন ভালো করে।’ পাইক্রফটকে নিয়েও গুরুতর অভিযোগ তোলেন রামিজ। তার মতে, এই জিম্বাবুইয়ানকে নিজেদের স্বার্থে কাজে লাগায় ভারত। ‘আমি সবসময়ই দেখেছি, অ্যান্ডি পাইক্রফট ভারতীয় দলের খুব প্রিয়। ভারতীয় দলের ক্ষেত্রে তাকে একরকম স্থায়ীভাবেই দেখা যায়। ভারতের ৯০টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছে সে। এটা নির্লজ্জ, একতরফা এবং এটা হওয়া উচিত নয়। এটা তো একটা নিরপেক্ষ জায়গা হওয়া উচিত। যাহোক, আশা করি সবার শুভ বোধ উদয় হবে।’
রামিজের দাবির প্রমাণ অবশ্য পরিসংখ্যানে মেলেনি। পাইক্রফট সবচেয়ে বেশি আন্তর্জাতিক ম্যাচ পরিচালনা করেছেন দক্ষিণ আফ্রিকার, ১৩৫টি। এশিয়ার দেশ শ্রীলঙ্কার ম্যাচে ছিলেন তিনি ১৩২ বার। ভারতের ম্যাচ পরিচালনা করেছেন তিনি ১২৪টি। তবে পাকিস্তানের ম্যাচও খুব পিছিয়ে নেই (১০২টি)। এছাড়া দায়িত্বে ছিলেন তিনি ইংল্যান্ডের ১০৭টি ম্যাচে, বাংলাদেশের ৮৩ ম্যাচে ও অস্ট্রেলিয়ার ৮০ ম্যাচে।