
দরজায় কড়া নাড়ছে নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপ। হাইব্রিড মডেলে ভারত ও শ্রীলঙ্কায় আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর শুরু হতে আইসিসির এই বৈশ্বিক নারী টুর্নামেন্ট। ক্রিকেটের এই মহাযুদ্ধের মঞ্চে দ্বিতীয়বারের মতো খেলতে নামছে টাইগ্রেসরা। তবে লাল সবুজ দরের প্রস্তুতির চিত্রটা মোটেও আশাব্যঞ্জক নয়। গত এপ্রিলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের পর থেকে আর কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেনি বাংলাদেশ নারী দল। প্রস্তুতি বলতে শুধু ক্যাম্প আর বয়সভিত্তিক দলের বিপক্ষে খেলা। তবুও কোচ সারোয়ার ইমরান আশাবাদী, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তার দল সমানে টক্কর দিতে পারবে। আগের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে একমাত্র জয়ই তাদের স্মৃতিতে জীবন্ত, এবার সেই জয়ের ধারা ধরে নতুন রেকর্ডের স্বপ্ন দেখছে দল। সেই স্বপ্ন নিয়ে আজ দুপুরের ফ্লাইটে শ্রীলঙ্কার উদ্দেশে রওনা দেবে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল। তার আগে গতকাল সোমবার মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে হয়ে গেছে তাদের আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন, ফটোসেশন। বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে কোচ সারওয়ার ইমরান শুনিয়েছেন আশার কথাও। প্রস্তুতির ঘাটতির কথা জানালেও নেতিবাচক চিন্তা করছেন না অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে কোচ সারওয়ার ইমরান বললেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো প্রতিটি ম্যাচ ধরে ভালো খেলা। আমাদের দুটি ম্যাচে ভালো সুযোগ আছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। এছাড়া অন্যান্য দলের সঙ্গেও আমরা... কাউকে বড় করে দেখছি না। শতভাগ দিয়ে চেষ্টা করবো।’ এরপরই বাংলাদেশ নারী দলের কোচ বললেন, ‘প্রতিটি ম্যাচই জেতার জন্য খেলব। তবু অস্ট্রেলিয়া বা আরও দুই-একটা দলের যে স্ট্যান্ডার্ড, তাদের আমরা নিজেদের চেয়ে অনেক ওপরে দেখবো না। আমাদের মতো ভাবব এবং জেতার জন্যই খেলব প্রতিটি ম্যাচ। গত বিশ্বকাপে আমরা পাকিস্তানকে হারিয়েছি। এবার আরও কিছু ম্যাচ জেতার জন্য যাচ্ছি।’
দারুণ ছন্দে থাকার পরও বিশ্বকাপ দলে জায়গা না পাওয়া জান্নাতুল ফেরদৌস সুমনার বিষয়ে কোচ বললেন, ‘সুমনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে অনেক দিন লেগেছে। নির্বাচকদের সঙ্গে আমি ও অধিনায়কও ছিলাম। পাকিস্তানের সঙ্গে যখন আমরা খেলি, তখন তাদের বাঁহাতি ব্যাটার অপরাজিত ছিল। সেই সময় অধিনায়ক যখন সুমনাকে বল করতে বললো, তখন সুমনা বোলিং করেনি।’ আন্তর্জাতিক ম্যাচই নয়, নেটে অনুশীলনের সময়ও বাঁহাতি ব্যাটারের বিপক্ষে বল করতে না পারার অভিযোগ সুমনার বিরুদ্ধে। সারওয়ার বলেছেন, ‘ঢাকাতে হোক বা প্রস্তুতি ম্যাচে হোক, বাঁহাতি ব্যাটারদের বিপক্ষে ও (সুমনা) বোলিং করতে পারে না। আমাদের মূল খেলা হলো পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। আমাদের একজন অফ স্পিনার লাগবে, যে বাঁহাতি ব্যাটারকে বল করতে পারে।আর যে অফ স্পিনারকে নেওয়া হয়েছে তার একুরেসি, সাহস, চিন্তা করার ক্ষমতা অন্যরকম। একুরেসিও সুমনার থেকে অনেক ভালো, ডানহাতি বা বাঁহাতির বিপক্ষে। সেই চিন্তা করে সুমনা বাদ পড়েছে।’
দীর্ঘ পাঁচ মাসের বিরতির পর বিশ্বকাপে খেলতে নামছে নিগার সুলতানা জ্যোতির নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ। অস্ট্রেলিয়া, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড কিংবা ইংল্যান্ড-সবাই বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছে। বাংলাদেশের মতো পাঁচ মাসের লম্বা বিরতি শেষে সরাসরি নারী ওয়ানডে বিশ্বকাপে আর কেউ খেলতে নামছে না। এমন প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে বিশ্বকাপে কেমন করবে বাংলাদেশ- প্রশ্নটা আসাই স্বাভাবিক। সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতি বলেছেন, ‘প্রস্তুতির ঘাটতি নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করে কোনো লাভ নেই।’ শ্রীলঙ্কায় গিয়ে শ্রীলঙ্কা ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ। জ্যোতির মতে দলের শক্তি যাচাইয়ের বড় সুযোগ এই দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন, ‘সবচেয়ে বেশি মনোযোগ থাকবে প্রথম ম্যাচটা জেতার দিকে। আন্তর্জাতিক ভাইবে ফিরতে হলে মাইন্ডসেটই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’
ইংল্যান্ড দল দুবাইয়ে গিয়ে এশিয়ান কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে ক্যাম্প করেছে। বাংলাদেশ দল প্রস্তুতি নিয়েছে সিলেট, বিকেএসপি আর কক্সবাজারে। বোর্ডের দেওয়া সুযোগ সুবিধা নিয়ে জ্যোতি বলেন, ‘অবশ্যই আদর্শ হয়নি, তবে আমরা যা সুবিধা পেয়েছি তার সবটুকু কাজে লাগানোর চেষ্টা করেছি। যতটা সম্ভব শতভাগ দিতে চেষ্টা করেছি।’
প্রস্তুতির ঘাটতিতে বড় চ্যালেঞ্জ আসবে ব্যাটিংয়ে। ভারতের দিল্লিতে অস্ট্রেলিয়া নারী দল ৫০ ওভারে ৪১২ রান তোলে। জবাবে ভারতও ৩৬৯ রান করে হেরেছে মাত্র ৪৩ রানে। দুই দলের এই ব্যাটিং শক্তি চোখে পড়ার মতো। অন্যদিকে বাংলাদেশ প্রস্তুতি ক্যাম্পে অনূর্ধ্ব-১৫ পুরুষ দলের সঙ্গে সিরিজ খেলতে গিয়ে এক ম্যাচে মাত্র ৪৯ রানে অলআউট হয়েছে। জ্যোতির ব্যাখ্যা, ‘সেটি জাতীয় দলের পূর্ণ শক্তির দল ছিল না। জ্যাতি বলেন, অনূর্ধ্ব-১৫ দলের সঙ্গে কিন্তু পূর্ণ জাতীয় দল খেলেনি। সেখানে অনেক ক্রিকেটারকে বাইরে থেকেও নেওয়া হয়েছে। অনেক ক্রিকেটারকে ভিন্নভাবে সুযোগ তৈরি করে খেলার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। তবে হ্যাঁ, আমরা আশানুরূপ খেলতে পারিনি। সেটার প্রভাব খেলোয়াড়দের ওপর পড়ছে।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দীর্ঘদিনের বিরতি থাকলে ভালো প্রস্তুতি যে নেওয়া যায় না, সেটা স্বীকার করছেন জ্যোতিও। বাংলাদেশ অধিনায়ক বলেন,‘একটা হচ্ছে নিয়মিত ক্রিকেট খেললে আপনি আদর্শের ধারাটা বুঝতে পারবেন। একটা সিরিজ আমরা খেলছি। আবার তিন থেকে চার মাস আবার কোনো কিছু খেলছি না। স্ট্যান্ডার্ড ধরে রাখতে হলে নিয়মিত আন্তজাতিক ম্যাচ খেলতে হবে। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেট খেলতে হবে। এই জিনিসগুলো আমাদের বাড়লে আমাদের জন্য ভালো হতো।’ ভালো উইকেটে খেললে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে পর্যাপ্ত রান উঠবে বলে বিশ্বাস জ্যোতির। বাংলাদেশ অধিনায়ত বলেন, ‘আমাদের বোলাররা সবসময়ই ভালো করে। এখন যদি ব্যাটাররা ভালো উইকেটে নিজেদের সামর্থ্য কাজে লাগাতে পারে, তবে আমরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারব। আইসিসি ইভেন্টে সাধারণত ভালো উইকেটই পাওয়া যায়। এটা যেমন বড় চ্যালেঞ্জ, তেমনি বড় সুযোগও।’