
এশিয়া কাপ জয়ের পরও ট্রফি ছুঁতে পারেনি ভারতীয় দলের খেলোয়াড়রা। সেই ট্রফি ও পদক ঘিরে তৈরি হয়েছে বড়সড় বিতর্ক। বিষয়টি আরও জটিল আকার নিয়েছে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এএসসি) বার্ষিক বৈঠকে। সভায় বিসিসিআই দাবি তুলে অবিলম্বে ট্রফি হস্তান্তরের, কিন্তু এসিসি ও পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি সাফ জানিয়ে দেন-ভারতকে তাদের অধিনায়ককে এসিসির কার্যালয়ে পাঠিয়ে ট্রফি নিতে হবে। গত মঙ্গলবার নাকভি বলেন, ‘ভারতকে ট্রফি নিতে হলে সূর্যকুমার যাদবকে এসে নিতে হবে। অন্য কাউকে তিনি ট্রফি দেবেন না। ভারতীয় বোর্ড কোনো প্রতিনিধি পাঠালে তাকে ট্রফি দেওয়া হবে না। শুধু তা-ই নয়, ভারত অধিনায়ককে ট্রফি নিতে হলে দুবাইয়ে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের সদর দপ্তরে এসে ট্রফি নিতে হবে।’
পাকিস্তানের চ্যানেল জিও সুপার জানিয়েছে, গত মঙ্গলবারের বৈঠকে ভারতীয় বোর্ডের সহ-সভাপতি রাজীব শুক্লা নাকভিকে বলেছিলেন, এশিয়া কাপের ট্রফি যেন ভারতকে দিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নাকভি প্রথমে বলেন, এই মিটিংয়ের বিষয় নয় এটি। ফলে এই নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। কিন্তু ভারতীয় বোর্ডের দুই কর্মকর্তা চাপ দিতে থাকেন। তখনই নাকভি বলেন, সূর্যকে দুবাইয়ে নিজে হাজির হয়ে ট্রফি নিতে হবে। এর ফলে কোনো সমাধান হয়নি এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলের বৈঠকে। ভারতের দাবি ছিল, দ্রুত এশিয়া কাপের ট্রফি ও ভারতীয় ক্রিকেটারদের মেডেল তাদের দিয়ে দিতে হবে। বৈঠকে নাকভিকে নিয়ে একের পর এক অভিযোগ করে ভারত। কিন্তু তার পরেও ট্রফি-সমস্যার সমাধান হয়নি। নাকভি আলোচনা করতে না চাওয়ায় মাঝপথেই বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে যান শুক্লা ও শেলার।
বৈঠকের শুরু থেকেই নাকভিকে একের পর এক কঠিন প্রশ্ন করতে শুরু করেন শুক্লা। ভারতকে ট্রফি না দেওয়ায় নাকভির সমালোচনা করেন তিনি। শুক্লা নাকভিকে মনে করিয়ে দেন যে ট্রফি তার ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। ফলে তিনি ট্রফি ও মেডেল নিজের সঙ্গে করে হোটেলের ঘরে নিয়ে যেতে পারেন না। এই একই অভিযোগ এশিয়া কাপ শেষে করেছিলেন বোর্ডের সচিব সাইকিয়াও। বৈঠকে শুক্লা স্পষ্ট করে দেন, ভদ্রভাবে ট্রফি ও মেডেল ভারতের হাতে তুলে দিতে হবে। এশীয় ক্রিকেট কাউন্সিলকে দ্রুত এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন তিনি। শুক্লার আক্রমণের পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পাল্টা নাকভি অভিযোগ করেন, তাকে দীর্ঘক্ষণ পুরস্কার বিতরণের মঞ্চে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিল। তার নিজেকে কার্টুনের মতো লাগছিল। তিনি আরও দাবি করেন, ভারতীয় দল যে তার হাত থেকে ট্রফি নিতে চায় না, সেটা মৌখিকভাবে বলা হয়েছিল। লিখিত কিছু দেওয়া হয়নি। তাই তিনি পুরস্কার মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে, ক্রিকেট বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজ জানিয়েছে- ভারত, পাকিস্তান, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের প্রতিনিধিরা দ্রুত একটি বৈঠকে বসবেন। সেখানে এই ট্রফি-সমস্যার সমাধান হতে পারে।
সব মিলিয়ে এশিয়া কাপ ট্রফি নিয়ে একটা নাটকীয় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনার সূত্রপাত ফাইনালের পর পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে। নিয়ম অনুযায়ী ট্রফি দেওয়ার কথা টুর্নামেন্টের আয়োজক এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিলের (এসিসি) প্রধান মহসিন নাকভির, যিনি আবার পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের (পিসিবি) চেয়ারম্যান এবং দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। কিন্তু তার হাত থেকে ট্রফি না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় ভারতের ক্রিকেট দল। ফলে নাকভিও সোজা জানিয়ে দেন, সভাপতি হিসেবে তিনিই ট্রফি দেবেন, না হলে ট্রফি দেওয়া হবে না। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায়, ব্যক্তিগত পুরস্কার বিতরণের পর নাকভিসহ অতিথিরা মঞ্চ ছেড়ে চলে যান। ট্রফিটি তখন পড়ে ছিল এক পাশে। পরে একজন সেটি হাতে নিয়ে ভেতরে চলে যান। তাতে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সাক্ষী হলো নজিরবিহীন এক ঘটনার। চ্যাম্পিয়ন দল ট্রফি নেয়নি!