
লিওনেল মেসি কি ২০২৬ বিশ্বকাপে খেলবেন? বিশ্বকাপ যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে এই কৌতূহল। ২০২২ বিশ্বকাপ জয়ের পর বিভিন্ন সময় মেসির সামনে এসেছে এ প্রশ্ন। আর্জেন্টাইন এই কিংবদন্তি কখনও সরাসরি কিছু বলেননি। তবে মেসির সতীর্থ, কোচ ও সমর্থকেরা ২০২৬ বিশ্বকাপে তার খেলার বিষয়ে সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন। মেসি নিজেও অবশ্য কখনও এই সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দেননি। এবার অবশ্য ২০২৬ বিশ্বকাপ নিয়ে কথা বলতে গিয়ে একটা ধারণা দিয়েছেন মেসি। যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো ও কানাডায় আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এই বিশ্বকাপে খেলতে চান ইন্টার মায়ামি তারকা।
মেসি বলেছেন, বিশ্বকাপ শিরোপা ধরে রাখার লক্ষ্যে দলের সঙ্গে থাকতে চান। তবে বরাবরের মতো এটাও বলেছেন, তার ফিট থাকার ওপর সব নির্ভর করছে। যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মেসি বলেছেন, ‘সত্যি বলতে, বিশ্বকাপে খেলা এক অসাধারণ ব্যাপার। আমি সেখানে থাকতে চাই। আর যদি থাকি, তাহলে জাতীয় দলের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে চাই।’
মেসি যোগ করেন, ‘আগামী বছর ইন্টার মায়ামির হয়ে প্রাক-মৌসুমের প্রস্তুতি শুরু করার পর প্রতিদিন নিজের অবস্থা পর্যালোচনা করে দেখব আমি শতভাগ ফিট কি না। আমি দারুণ উৎসাহী, কারণ এটা বিশ্বকাপ। আমরা তো আগের বিশ্বকাপটা জিতেছি, আর সেটা আবার ধরে রাখার সুযোগ পাওয়া হবে অসাধারণ ব্যাপার। জাতীয় দলের হয়ে খেলা সব সময়ই স্বপ্নের মতো, বিশেষ করে বড় কোনো প্রতিযোগিতায়। আশা করি, সৃষ্টিকর্তা আবারও সেই সুযোগ দেবেন।’ বিশ্বকাপে খেলা নিয়ে ভেবেচিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা গত সেপ্টেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতির সময়ও বলেছিলেন মেসি। সে সময় সাংবাদিকদের তিনি বলেছিলেন, সবকিছু নির্ভর করবে তার শারীরিক অবস্থার ওপর। প্রীতি ম্যাচে ভেনেজুয়েলাকে হারানোর পর সাক্ষাৎকারে মেসি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করছি ভালো থাকতে, আর সবচেয়ে বড় কথা নিজের সঙ্গে সৎ থাকতে। যখন ভালো থাকি, তখন ফুটবল উপভোগ করি। কিন্তু যখন শরীর সাড়া দেয় না, তখন আনন্দ পাই না। তাই ভালো না লাগলে থাকতে চাই না। এখনও কোনো সিদ্ধান্ত নিইনি।
মৌসুম শেষ করব, প্রাক-মৌসুমে প্রস্তুতি নেব, তখন ছয় মাস বাকি থাকবে। তারপর দেখা যাবে কেমন অনুভব করি। আশা করছি, ২০২৬ সালে ভালো প্রস্তুতি নিতে পারব, এই এমএলএস মৌসুমটা ভালোভাবে শেষ করব, তারপর সিদ্ধান্ত নেব।’ পারফরম্যান্স বিবেচনা করলে মেসি অবশ্য বেশ ভালো ছন্দেই আছেন। ইন্টার মায়ামির হয়ে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। মেজর লিগ সকারের (এমএলএস) নিয়মিত মৌসুমে ২৮ ম্যাচে ২৯ গোল করে প্রথমবারের মতো এমএলএস গোল্ডেন বুট জিতেছেন। এ ছাড়া ২০২৫ সালে এমএলএস এমভিপি (সর্বোচ্চ মূল্যবান খেলোয়াড়) পুরস্কারে ফাইনালিস্টও হয়েছেন মেসি। এই পুরস্কার জিততে পারলে তিনি হবেন প্রথম খেলোয়াড়, যিনি টানা দুই মৌসুমে এমভিপি জিতবেন। তবে এই মুহূর্তে মেসির চোখ অবশ্য ইন্টার মায়ামির হয়ে এমএলএস কাপ জেতায়। সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে ন্যাশভিলের বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটিতে ৩-১ গোলে জিতেছে মায়ামি। আগামী ২ নভেম্বর ভোরে প্লে-অফের দ্বিতীয় ম্যাচটি জিতলে নিশ্চিত হবে মায়ামির সেমিফাইনালে খেলা।
মেসির কাছে ম্যারাডোনা সবকিছুর ঊর্ধ্বে : ক্যারিয়ারে লিওনেল মেসি কী পাননি! চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে শুরু করে বিশ্বকাপ মেসির পক্ষে যা যা জেতা সম্ভব, সবই জিতেছেন। এমন অর্জনের সঙ্গে আছে মেসির অসধারণ ফুটবলশৈলীও। সে কারণেই তো মেসি কয়েক প্রজন্মের আইডল। কিন্তু মেসির আইডল বা আদর্শ কে? কোন তারকারা বেড়ে ওঠার পথে মেসিকে অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন? মেসি যুক্তরাষ্ট্রের সংবাদমাধ্যম এনবিসি নিউজকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন। সেখানে ২০২৬ বিশ্বকাপ, ইন্টার মায়ামির পাশাপাশি মেসি কথা বলেছেন তার নায়কদের নিয়েও। মেসি শুরুটা করেছেন প্রয়াত আর্জেন্টাইন কিংবদন্তি ম্যারাডোনাকে নিয়ে। তিনি বলেছেন, ‘আমাদের আর্জেন্টাইনদের জন্য ডিয়েগো ম্যারাডোনাই সবচেয়ে বড় আইডল। তিনি যা করেছেন, তাতে তিনিই আমাদের সর্বোচ্চ অনুপ্রেরণা।
যদিও আমি ছোটবেলায় তাকে খুব বেশি ম্যাচে সরাসরি খেলতে দেখিনি, তবু ডিয়েগো সবকিছুর ঊর্ধ্বে।’ ম্যারাডোনার পাশাপাশি মেসির সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছেন মাইকেল জর্ডান, রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল, নোভাক জোকোভিচ, লেব্রন জেমস ও স্টিফেন কারিও। মেসি বলেছেন, ‘অন্য খেলার কথা যদি বলি, তাহলে ডিয়োগোর মতো মাইকেল জর্ডানের ব্যাপারটাও একই। টেনিসে ফেদেরার, নাদাল ও জোকোভিচ তারা প্রতিযোগিতাকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরে সেরা হওয়ার লড়াই, তাদের মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্দ্বিতা সব মিলিয়ে খেলাটিকে আরও অসাধারণ করে তুলেছে।’ শেষে মেসি যোগ করেন, ‘হয়তো অনেকের নাম ভুলে গেছি, কিন্তু তাদেরই বেছে নেব। বাস্কেটবলে লেব্রন জেমস ও স্টিফেন কারি তারা দুজনেই নিজেদের মতো করে খেলাকে অনেক কিছু দিয়েছেন।’