ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

নির্বাচন আয়োজনে ফেডারেশনে ক্রীড়া পরিষদের চিঠি

নির্বাচন আয়োজনে ফেডারেশনে ক্রীড়া পরিষদের চিঠি

গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর ক্রীড়াঙ্গনে সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সেই লক্ষ্য সামনে রেখে একটি কমিটি গঠন করে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়। এই কমিটি গঠনের মূল উদ্দেশ্য ক্রীড়াঙ্গনে কার্যকরী সংস্কারের মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করা এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ অধিভুক্ত ফেডারেশনগুলোর গঠনতন্ত্র ও অ্যাফিলিয়েশন নীতিমালা যুগপোযোগী করে সুপারিশ প্রদান করা। বিশেষভাবে, আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালার অভাব ছিল যা এই কমিটি সংশোধন ও প্রস্তাবনা দেওয়ার কাজ করবে। এছাড়া, আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির চার্টারের আলোকে বাংলাদেশে ক্রীড়া ফেডারেশনের সংখ্যা নির্ধারণ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা প্রদানও এই কমিটির কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত। তবে ক্রীড়া ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও উন্নয়ন নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তী সরকার নানা উদ্যোগ গ্রহণ করলেও বছরের শেষ পর্যন্ত এর ফলাফল মিশ্র।

ক্রিকেট ও ফুটবল বাদে সব ফেডারেশন ও সংস্থায় অ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই সব ফেডারেশন ও অ্যাসোসিয়েশনে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতির জন্য চিঠি দিয়েছে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ। গতকাল বৃহস্পতিবার ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক ক্রীড়া আমিনুল এহসানের স্বাক্ষরিত এই সংক্রান্ত নির্দেশনা ফেডারেশনগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত হয়েছে। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ চিঠিতে উল্লেখ করেছে, ‘দেশের ক্রীড়া ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা আনয়নের জন্য ৪৯টি জাতীয় ক্রীড়া সংস্থার (ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশন-সংস্থা) আগের কমিটি ভেঙে দিয়ে বর্তমান আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব হলো নির্বাচন আয়োজন এবং নির্বাচিত প্রতিনিধির নিকট দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া। সে প্রেক্ষিতে অনতিবিলম্বে নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ গ্রহণ করার অনুরোধ করা হলো।’

জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অধিভুক্ত ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনের সংখ্যা ছিল ৫৫। তিনটি ফেডারেশন একীভূত করায় এখন সংখ্যা ৫২। ফুটবল, ক্রিকেটে আলাদা নির্বাচন হয়েছে। আন্তর্জাতিক তায়কোয়ান্দো এসোসিয়েশনে কমিটি বিলুপ্ত করলেও নতুন কমিটি প্রদান করেনি। এ ছাড়া বাকি ৪৯ ফেডারেশন-অ্যাসোসিয়েশনে অ্যাডহক কমিটি। সেই কমিটিগুলোকে নির্বাচন আয়োজনের নির্দেশনা দিয়েছে এনএসসি। গত বছর ১৫ নভেম্বর এক যোগে নয়টি ফেডারেশনের কমিটি ভেঙে অ্যাডহক কমিটি গঠন করে এনএসসি। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে বিভিন্ন সময় কমিটি পুর্নগঠন হয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার মহিলা ক্রীড়া সংস্থার কমিটি গঠন হয়েছে। ফেডারেশনগুলো মূলত জেলা ক্রীড়া সংস্থা, ক্লাব, সার্ভিসেস সংস্থার প্রতিনিধি দিয়েই মূলত গঠিত হয়। জেলা-বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোতেও অ্যাডহক কমিটি। ফেডারেশনগুলোর আগে স্থানীয় ক্রীড়া সংস্থাগুলোতে নির্বাচন প্রয়োজন। এই বিষয়ে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের পরিচালক ক্রীড়া আমিনুল এহসান বলেন, ‘আমরা ফেডারেশনগুলোকে নির্বাচনের জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিতে বলেছি। প্রস্তুতিগ্রহণকালে ফেডারেশনের কোনো বিষয়ে প্রয়োজনীয়তা বা সহায়তা চাইলে আমাদের জানাবে। আমরা সেই অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা বা পদক্ষেপ গ্রহণ করব।’

ক্রীড়াঙ্গনে অনেক ফেডারেশনে সাধারণ সম্পাদক দুই-তিন যুগের বেশি সময় ছিলেন অনেকে। গঠনতান্ত্রিক সংস্কারের মাধ্যমে এই অসঙ্গতিগুলো রোধ করার কথা ছিল। ক্রীড়াঙ্গনে এখনও সেই সংস্কার হয়নি। সেই সংস্কার হওয়ার আগেই নির্বাচনের চিঠি এনএসসির। ফলে ক্রীড়াঙ্গনে আদৌ সংস্কার হবে কি না সেই সংশয় তৈরি হয়েছে। আবার ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচনের আগে ক্রীড়াঙ্গনে ফেডারেশনগুলো নির্বাচন আয়োজন সম্ভব কি না সেটাও আলোচিত হচ্ছে। দেশের অন্যতম শীর্ষ ক্রীড়া সংগঠন বাংলাদেশ অলিম্পিক এসোসিয়েশন (বিওএ)। ৩০ নভেম্বর বিওএ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। বিওএ মূলত ফেডারেশনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয়। বিওএ নির্বাচনের কাউন্সিলর হবেন বর্তমান কমিটির কর্মকর্তারা। বিদ্যমান ফেডারেশনের কর্মকর্তারা বিওএ নতুন নির্বাচিত কমিটিতে থাকলে পরবর্তীতে ফেডারেশনে নির্বাচনে তারা পরাজিত বা অংশগ্রহণ না করলে কার্যকর প্রতিনিধিত্ব হবে না। ফলে নতুন সাংগঠনিক সংকট তৈরি হতে পারে ক্রীড়াঙ্গনে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত