
ফিল হিউজের অকাল প্রয়াণের পর অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে আবারও নেমে এলো শোকের ছায়া। মেলবোর্নে নেট অনুশীলনের সময় ঘাড়ে বল লাগে উঠতি এক ক্রিকেটারের। হাসপাতালে নিয়েও শেষ পর্যন্ত বাঁচানো যায়নি তাকে। ফলে মাত্র ১৭ বছর বয়সেই অকালে নিভে গেল এক প্রতিশ্রুতিশীল তরুণ প্রতিভার জীবন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে মোনাশ চিলড্রেস হাসপাতালে মারা যান উদীয়মান ক্রিকেটার বেন অস্টিন। এ হাসপাতালেই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন মেলবোর্নের এ ক্লাব ক্রিকেটার। তার মৃত্যুর খবর স্তব্ধ করে দিয়েছে দেশটির ক্রিকেট অঙ্গনকে।
মেলবোর্নে উপকণ্ঠ ফার্নট্রি গালিতে গত মঙ্গলবার আঘাত পান অস্টিন। একটি টি-টোয়েন্টি ম্যাচের আগে নেটে সাইডআর্ম থ্রোয়ারে ব্যাটিং অনুশীলন করছিলেন তিনি। একটি বল লাগে তার ঘাড়ে। হেলমেট পরেই ব্যাট করছিলেন তিনি। তবে সে হেলমেটের ‘স্টেম গার্ড’ ছিল না। হিউজের মৃত্যুর পর হেলমেটে এই স্টেম গার্ডের প্রচলন শুরু হয়। হেলমেটের পেছনে দিকে দুই পাশে বাড়তি প্রতিরোধমূলক অংশ এটি, যা মাথার পেছন দিক ও ঘাড়ের অংশকে সুরক্ষা দেয়। ২০২৩ সালের ১ অক্টোবর থেকে অস্ট্রেলিয়ার ঘরোয়া ক্রিকেটে স্টেম গার্ড বাধ্যতামূলক করে দেয় ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। অস্টিনের মৃত্যুর পর ফার্নট্রি গালি ক্রিকেট ক্লাব, ক্রিকেট ভিক্টোরিয়া ও ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া আলাদা বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করে ও পরিবারের প্রতি সহানুভূতি জানিয়ে সবরকম সহায়তায় প্রতিশ্রুতি দেয়। তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্লাবে ফুল, কার্ড, পানীয়ের বোতল, ব্যাট ও বিভিন্ন বার্তা দিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলি দেন অনেকেই।
ফার্নট্রি গালি ক্রিকেট ক্লাব এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বেনের মৃত্যুতে আমরা সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়েছি। তার এই অকাল প্রয়াণ আমাদের সমগ্র ক্রিকেট সম্প্রদায়ের জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। ক্লাবটির বর্ণনায়, বেন ছিলেন এক উদীয়মান বোলার ও ব্যাটার, একজন তারকা ক্রিকেটার, প্রেরণাদায়ক নেতা এবং অসাধারণ তরুণ। ক্রিকেট ভিক্টোরিয়ার প্রধান নির্বাহী নিক কামিন্স ঘটনাটির সঙ্গে ফিল হিউজের সেই মর্মান্তিক মৃত্যুর সাদৃশ্য খুঁজে পাচ্ছেন, ‘এটা অত্যন্ত কঠিন সময় আমাদের সবার জন্য। বলটি তার ঘাড়ে লেগেছিল, অনেকটা সেই দুর্ঘটনার মতো যা ১০ বছর আগে ফিল হিউজের সঙ্গে ঘটেছিল।’ বিবৃতিতে শোক প্রকাশ করেন অস্ট্রেলিয়া অধিনায়ক প্যাট কামিন্স, ‘ভিক্টোরিয়া এবং গোটা অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট পরিবার এই শোকে একত্রিত হয়েছে। এই ক্ষতি দীর্ঘদিন আমাদের মনে থেকে যাবে। বেন ছিল প্রতিভাবান খেলোয়াড়, সবার প্রিয় সতীর্থ ও অধিনায়ক, যাকে মেলবোর্নের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অনূর্ধ্ব-১৮ ক্রিকেটের সবাই চিনতো। এমন এক তরুণকে হারানো ভীষণ হৃদয়বিদারক। যে তার প্রিয় খেলাই খেলছিল।’ ক্রিকেটে এমন দুর্ঘটনা এখনও বিরল ঘটনা। সর্বশেষ বড় ধরনের মৃত্যু ঘটে ২০১৪ সালে, যখন অস্ট্রেলিয়ার টেস্ট তারকা ফিল হিউজ একটি ঘরোয়া শেফিল্ড শিল্ড ম্যাচে ঘাড়ে বলের আঘাতে প্রাণ হারান। হিউজের মৃত্যু অস্ট্রেলিয়া এবং গোটা ক্রিকেটবিশ্বকে স্তম্ভিত করেছিল। সে ঘটনার পর থেকেই কনকাশন সংক্রান্ত নিয়ম আরও কঠোর করা হয় এবং খেলোয়াড়দের নিরাপত্তা সরঞ্জাম উন্নত করা হয়।