
আফ্রিকা মহাদেশের শীর্ষ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম অ্যাঙ্গোলা। বিশ্ব ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ মানুষ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করছে। দেশটির হাজার হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধা, গুরুতর রক্তশূন্যতা ও ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে। তা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনে বিলাসি পরিকল্পনা করেছে আফ্রিকার দেশটি। তার মধ্যে অন্যতম আর্জেন্টিনা দলকে নিজ দেশে নিয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলা। আর এ জন্য তাদের খরচ বলে ১৭০ কোটি টাকা।
জানা গেছে, নভেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতিতে অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে লুয়ান্দায় যাবে আর্জেন্টিনা জাতীয় দল। আঙ্গোলার স্বাধীনতা প্রাপ্তির ৫০তম বার্ষিকী উদযাপনের অংশ হিসেবে আগামী ১৪ নভেম্বর আয়োজন করা হবে ম্যাচটি।
স্বাধীনতা অর্জনের ঐতিহাসিক মুহূর্ত অ্যাঙ্গোলা সরকারের কাছে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, যে কারণে তারা বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আসতে চায় তাদের দেশ সফরে। তবে লিওনেল মেসি, হুলিয়ান আলভারেজ বা লাওতারো মার্তিনেজের মতো তারকা খেলোয়াড়দের আতিথ্য দেওয়াটা মোটেই সহজ বিষয় নয়। ‘স্পোর্টস নিউজ আফ্রিকা’র প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অ্যাঙ্গোলা এই প্রীতি ম্যাচের জন্য আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনকে (এএফএ) প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ ইউরো বা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১৭০ কোটি টাকা দেবে। সাম্প্রতিক সময়ে ফুটবল আঙ্গোলায় বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। ফুটবল ম্যাচগুলোয়ও বেড়েছে দর্শক উপস্থিতি। সেই আবেগকে কেন্দ্র করে এই ম্যাচ আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশটির সরকার। নভেম্বরের আন্তর্জাতিক বিরতিতে মরক্কোর মতো দলও চেয়েছিল তিনবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের বিরুদ্ধে খেলতে। তবে অ্যাঙ্গোলা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া লোভনীয় প্রস্তাব আর্জেন্টিনাকে লুয়ান্দায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ায় প্রভাবিত করেছে।
দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইয়ে সবার ওপরে থেকে শেষ করেছে আর্জেন্টিনা। এখন তাদের চোখ বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতে। প্রস্তুতির পাশাপাশি দলের আশপাশে থাকা তরুণ খেলোয়াড়দেরও ঝালিয়ে নিতে চায় আর্জেন্টিনা। পরীক্ষিত তারকাদেরও বাছাই করে ম্যাচ খেলাতে চান কোচ লিওনেল স্কালোনি। এমন পরিস্থিতিতে অ্যাঙ্গোলার বিপক্ষে মেসি থাকবেন কি না, তা নিয়ে অনেকের মধ্যে তৈরি হয়েছে কৌতূহল। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এএস জানিয়েছে, মেসি প্রায় নিশ্চিতভাবেই দলে থাকবেন, যদি আফ্রিকান সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উল্লেখিত অর্থ প্রদানের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়।
এদিকে অ্যাঙ্গোলার নাগরিক সমাজের চারটি সংগঠন এএফএ, আর্জেন্টিনা জাতীয় দল ও তাদের অধিনায়ক মেসির দাতব্য প্রতিষ্ঠান লিও মেসি ফাউন্ডেশনকে উদ্দেশ্য করে একটি খোলা চিঠি লিখেছে। সেখানে দেশটির সরকারের বিরুদ্ধে ‘কাঠামোগত দমননীতি’ চালানোর অভিযোগ করা হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘জনগণের সম্পদ যখন বড় আকারের ক্রীড়া অনুষ্ঠানে ব্যয় করা হচ্ছে, তখন হাজার হাজার শিশু ও প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক দীর্ঘমেয়াদি ক্ষুধা, গুরুতর রক্তশূন্যতা ও ব্যাপক খাদ্য ঘাটতির সম্মুখীন হচ্ছে।’ সংগঠনগুলোর মতে, পরিকল্পিত আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচটি খেলতে যদি আর্জেন্টাইনরা অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে সেটা হবে ‘আন্তর্জাতিক সংহতি ও মানবাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধার একটি মহৎ নজির’।