ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

সালাউদ্দিনের পদত্যাগ ভাবনায় বিসিবি

সালাউদ্দিনের পদত্যাগ ভাবনায় বিসিবি

দেশের ঘরোয়া ক্রিকেটে অতি পরিচিত এক নাম মোহাম্মদ সালাউদ্দিন। তার কোচিংয়ে অনেক দল সাফল্যে ভেসেছে। সেই সুবাদে গত বছর জাতীয় ক্রিকেট দলের সিনিয়র সহকারী কোচের পদে নিয়োগ দেওয়া হয় সালাউদ্দিনকে। তার সঙ্গে ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ পর্যন্ত লম্বা চুক্তি ছিলো বিসিবির। সহকারী কোচ হলেও দলে ব্যাটিং কোচ না থাকায় ব্যাটিংয়ের দিকটা তিনিই দেখতেন। ডেভিড হেম্পের সঙ্গে চুক্তি শেষ করার পর থেকেই বিসিবির ব্যাটিং ইউনিটের দায়িত্বে থাকা সালাউদ্দিন সাম্প্রতিক সময়ে দলের দুর্বল পারফরম্যান্সের কারণে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন। একের পর এক ব্যাটিং ব্যর্থতা ও দলের ভুল কৌশলের দায় দেওয়া হচ্ছিলো তাকে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে গত সোমবার বিসিবির পরিচালনা পর্ষদের সভা অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে সালাউদ্দিনের পরিবর্তে আসন্ন আয়ারল্যান্ড সিরিজে জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলকে। যদিও বৈঠক শেষে বিসিবির পরিচালক আব্দুর রাজ্জাক গণমাধ্যমে বলেছিলেন, সালাউদ্দিনকে সরাতে নয়, আশরাফুল বাড়তি হিসেবে যোগ দিয়েছেন। কিন্তু বোর্ডের এ সিদ্ধান্ত হয়তো মানতে পারেননি তাই নিজে থেকেই সরে গেলেন সালাউদ্দিন।

আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে আসন্ন দুই টেস্ট ও তিন টি-টোয়েন্টির হোম সিরিজের পর আর জাতীয় দলের কোচ হিসেবে থাকছেন না তিনি। গতকাল বুধবার বিসিবিতে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন। এ বিষয়ে সালাউদ্দিন বলেন, ‘আমি বিসিবিতে আমার পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দিয়েছি। আজ (বুধবার) সশরীরে গিয়ে বাকি আনুষ্ঠানিকতা সারব। তবে আমি আয়ারল্যান্ড সিরিজ পর্যন্ত আছি। পদত্যাগপত্র জমা দিলেও নির্ধারিত নোটিশ পিরিয়ড পর্যন্ত কাজ করে যাব।’ হঠাৎ করে কেন এমন সিদ্ধান্ত জানতে চাইলে সালাউদ্দিন প্রথমে ‘ব্যক্তিগত কারণ’ বলে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চেয়েছেন। পরে অবশ্য বলেছেন, ‘কোচিং করানোটা আমার উপভোগের একটা জায়গা। মাঠই আমার সব। যদি কোনো কারণে সেটা উপভোগ না করতে পারি, তাহলে সরে যাওয়াই ভালো। আমি আমার দায়িত্বটা আর উপভোগ করছি না।’

কেন উপভোগ করছেন না, সে ব্যাপারে অবশ্য তিনি কিছু বলতে রাজি হননি। তবে জানিয়েছেন প্রধান কোচ ফিল সিমন্সের সঙ্গে কাজ করতে তার কোনো সমস্যা নেই। অবশ্য বিসিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, ক্রিকেট পরিচালনা প্রধান নাজমূল আবেদীনের সঙ্গে গত কয়েক মাস ধরে কথাবার্তাই নাকি বন্ধ সালাউদ্দিনের! জাতীয় দল সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো দেখভাল করে বিসিবির এই ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগই। গত পরশু হঠাৎ করেই আশরাফুলকে আয়ারল্যান্ড সিরিজের জন্য জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচ নিয়োগ করে বিসিবি। যদিও ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, বিসিবিতে আগে থেকেই অনেক অভিজ্ঞ কোচ থাকার পরও আশরাফুলকে সরাসরি জাতীয় দলের কোচিং প্যানেলে আনা ঠিক হয়নি। তাকে আগে বয়সভিত্তিক, এইচপি বা ‘এ’ দলের সঙ্গে কাজ করানো উচিত ছিল। ‘সবকিছুতেই একটা প্রক্রিয়া মানা উচিত। আশরাফুলের ক্ষেত্রে তা হয়নি। এটা ভালো উদাহরণ হয়ে থাকবে না’, বলেছেন বিসিবিতে কাজ করা স্থানীয় এক কোচ। তবে এ ব্যাপারে সালাউদ্দিন জানিয়েছেন, কোচিং স্টাফে আশরাফুলের অন্তর্ভুক্তিকে তিনি স্বাভাবিকভাবেই নিয়েছেন।

ফারুক আহমেদ বিসিবি সভাপতির দায়িত্ব নেওয়ার পর সালাউদ্দিনের বেশ ভূয়সী প্রশংসা করেই তাকে জাতীয় দলের সিনিয়র সহকারী কোচের দায়িত্ব দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে দেখা গেছে ব্যাটিং কোচের অনুপস্থিতিতে সালাউদ্দিনকেই বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে ব্যাটিং কোচের কাজ করতে হয়েছে। কাগজ-কলমে ব্যাটিং কোচ না হওয়া সত্ত্বেও ব্যাটিং ব্যর্থতার দায় দেওয়া হয়েছে তাকে। এছাড়া সর্বশেষ আফগানিস্তান সিরিজে নুরুল হাসানকে দিয়ে উইকেটকিপিং না করিয়ে জাকের আলীর উইকেটকিপিং করানোর দায়ও তাকে দেওয়া হয়েছে। অথচ, সালাউদ্দিন চেয়েছিলেন নুরুলই কিপিং করুক। কিন্তু অধিনায়ক জাকের চেয়েছেন কিপিং তিনি করবেন। সালাউদ্দিনের অনুরোধ সত্ত্বেও প্রধান কোচ ফিল সিমন্স তাতে হস্তক্ষেপ করেননি।

এদিকে সালাউদ্দিনের পদত্যাগপত্র পাওয়ার কথা নিশ্চিত করলেও বিসিবির পক্ষ থেকে এখনও কিছু বলা হবে না বলে জানালেন ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের প্রধান নাজমুল আবেদীন। ‘আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের পর সে সরে দাঁড়ানোর ইচ্ছের কথা জানিয়েছে। আর কোনো মন্তব্য করার আগে ব্যাপারটি নিয়ে আমরা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করব।’ আইসিসি সভায় যোগ দিতে বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল আছেন এখন দুবাইয়ে। তিনি দেশে ফেরার হয়তো ব্যাপারটি নিয়ে বোর্ডে আলোচনা হবে। ঘরোয়া ক্রিকেটের সফল এই কোচ ১৪ বছর পর জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে ফেরেন গত বছর। শুরুতে তার মেয়াদ ছিল কেবল পাঁচ মাসের, গত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি পর্যন্ত। পরে সেই মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত। জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে স্থানীয় কোচদের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাচ্ছেন তিনি। বিপিএলের সফলতম কোচকে জাতীয় দলের কোচিং স্টাফে আনার আলোচনাও ছিল অনেক আগে থেকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিসিবির একজন পরিচালক জানিয়েছেন, এখনও পদত্যাগপত্র গ্রহণ করা নিয়ে ভাবেননি তারা। তাকে দলে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। সালাউদ্দিনের সঙ্গে বিসিবির চুক্তির মেয়াদ ২০২৭ বিশ্বকাপ পর্যন্ত।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত