
অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে শুরু হয়েছে এশিয়ান আর্চারি চ্যাম্পিয়নশিপের পদক লড়াই। গতকাল রোববার ঢাকা জাতীয় স্টেডিয়ামে রিকার্ভ পুরুষ ও কম্পাউন্ড নারী বিভাগের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে বাংলাদেশের আর্চারদের মধ্যে আলো ছড়িয়েছেন বন্যা আক্তার ও রামকৃষ্ণ সাহা। কম্পাউন্ড নারী বিভাগের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে বাংলাদেশের আর্চারদের মধ্যে সর্বোচ্চ ১২তম হয়েছেন বন্যা আক্তার। ৬৯৩ স্কোর করেন তিনি। বন্যার এটি ব্যক্তিগত সেরা স্কোর। কম্পাউন্ড ইভেন্টে দলীয় রেকর্ড স্কোর (২০৬১) গড়েছে বাংলাদেশও। আগে ছিল ২০৪৫। ৭২ তীর ছোঁড়ার লড়াইয়ে শুরু থেকে নিশানা ঠিক রেখেছিলেন রামকৃষ্ণ। ৬২ প্রতিযোগীর মধ্যে ৬৬৮ স্কোর গড়ে ষষ্ঠ হন তিনি। কম্পাউন্ড নারী এককে বাংলাদেশের বাকি তিন আর্চার কুলসুম আক্তার ৬৮৮ স্কোর নিয়ে ১৭তম, পুষ্পিতা জামান ৬৮০ স্কোর নিয়ে ২৪তম ও মিথিলা আক্তার ৬৬২ স্কোর নিয়ে ৩২তম হয়েছেন। কম্পাউন্ড নারী এককে বাংলাদেশের চার আর্চারের মধ্যে তিনজন ‘বাই’ পেয়েছে উঠেছেন ১/১৬-এর মঞ্চে। ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করার পর বন্যা আক্তার বলেন, ‘আমি আমার পারফরম্যান্সে খুশি ছিলাম। আশা করি, ভালো কিছু দিতে পারবো। অনুশীলনে যে স্কোর ছিল, সেটা এখানে দিতে পেরেছি। বাতাস এখানে অনেক ছিল। বিশেষ করে প্রথম স্কোরিংয়ের সময় বাতাসটা বেশি ছিল। এতে একটু প্রভাব পড়েছে। তবে আস্তে আস্তে এটা কমে গেছে। আন্তর্জাতিকভাবে প্রথমবার ক্যারিয়ার সেরা স্কোর করেছি। এটা কালকের জন্য কাজে দেবে। আমার আত্মবিশ্বাসও বাড়াবে।’
তিনি যোগ করেন, ‘এর আগেও দক্ষিণ কোরিয়া ও ভারতের প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। শেষবার কোরিয়ার আর্চারকে হারিয়েছিলাম। সেরা স্কোরটা যেন ধরে রাখতে পারি। ভারতের যে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন, তার সঙ্গেও খেলার অভিজ্ঞতা আছে আমার। যদি সেরাটা দিতে পারি, তাহলে ভালো কিছুই হবে ইনশাহআল্লাহ। আমাদের দলটা শক্তিশালী, লক্ষ্যও অনেকদূর। যেহেতু স্কোরিংয়ের দিক দিয়ে এথন আমরা শক্তিশালী, আশা করি ভালো পজিশনে যেতে পারব আমরা।’
এদিকে রিকার্ভ পুরুষ বিভাগে রিকার্ভ পুরুষ এককে সাগর, আলিফ ও রামকৃষ্ণের কাছেই প্রত্যাশা বেশি বাংলাদেশের। এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে অবশ্য এই ইভেন্টে বাংলাদেশের চার আর্চার ‘বাই’ পেয়েছেন। রামকৃষ্ণ সাহা দুটি ‘বাই’ পেয়ে একলাফে পৌঁছে গেছেন সেরা ষোলোতে। বাংলাদেশের বাকি তিন আর্চার মোহাম্মদ রাকিব ৬৪৭ স্কোর নিয়ে ৩২তম, সাগর ইসলাম ৬৩৯ স্কোর নিয়ে ৩৮তম ও আব্দুর রহমান আলিফ ৬৩৭ স্কোর নিয়ে ৪১তম হয়েছেন। রিকার্ভ আর্চার রামকৃষ্ণ এখন এলিমিনেশন রাউন্ডে সেরাটা নিংড়ে দিতে উš§ুখ হয়ে আছেন। সেরা ষোলতে উঠে রামকৃষ্ণ বলেন, ‘আমার যথেষ্ট ভালো র্যাংকিং হয়েছে। ৬ নম্বর এসেছি, এটা আমার জন্য ভালো পজিশন। অবশ্যই বাতাস ছিল, বাতাসের প্রভাব ছিল। তারপরও আমার যা করার ছিল, সেটা দিয়ে চেষ্টা করেছি। এখন যে স্কোর হয়েছে, সেটা ভালো। নকআউট এমন একটা রাউন্ড, যেখানে যে কেউ হারিয়ে দিতে পারে। আমি নিজের সেরা পারফরম্যান্স করতে পারলে অবশ্যই ভালো হবে। একটা পদক আশা করতে পারি।’
এদিকে দিনের দ্বিতীয় সেশনে রিকার্ভ নারী এককে ৬৩৭ স্কোর গড়ে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে ৫১ প্রতিযোগীর মধ্যে ২৪তম হন সীমা আক্তার শিমু। এ বিভাগে বাংলাদেশের বাকি তিন আর্চার সোনালি রায় ৬২৩ স্কোর নিয়ে ৩২তম, ইতি খাতুন ৬১০ স্কোর নিয়ে ৩৭তম ও মনিরা আক্তার ৬০৬ স্কোর নিয়ে ৩৮তম হয়েছেন।
রিকার্ভ নারী এককের এলিমেনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে (১/২৪) সোনালি রায় কাজাখস্তানের দিয়ানা তুর্সানবেকের, শিমু কাজাখস্তানের ইলিজাভিয়েতা আভামেভার, ইতি মালয়েশিয়ার মাশাইখ সায়াকিয়ারার ও মনিরা চীনের কাই উফেংয়ের মুখোমুখি হবেন। রিকার্ভ মহিলা দলগত বিভাগে ১০ দলের মধ্যে নবম অবস্থান নিয়ে এলিমিনেশন রাউন্ড শুরু করবে ১৮৭০ স্কোর গড়া বাংলাদেশ। বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবেন ইতি খাতুন, সোনালি রায় ও সীমা আক্তার শিমু।
রিকার্ভ মিশ্র এককের এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রতিপক্ষও চূড়ান্ত হয়েছে। বাংলাদেশ ১/৮ এর লড়াইয়ে লড়বে কাজাখস্তানের বিপক্ষে। রাম কৃষ্ণ সাহা-সীমা আক্তার শিমু জুটি মিশ্র এককে খেলবেন বাংলাদেশের হয়ে। কম্পাউন্ড পুরুষ এককে কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে র্যাংকিংয়ের ৬৮তম খেলোয়াড় হিমু বাছাড় ৭০৪ স্কোর নিয়ে ৫৩ প্রতিযোগীর মধ্যে দশম হয়েছেন। এ বিভাগে তার বাকি তিন সতীর্থ মোহাম্মাদ আশিকুজ্জামান ৬৮৭ স্কোর নিয়ে ৩৫তম, নওয়াজ আহমেদ রাকিব ৬৮৩ স্কোর নিয়ে ৪১তম ও সোহেল রানা ৬৭৯ স্কোর নিয় ৪৫তম হয়েছেন।
এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে ‘বাই’ পেয়ে হিমু সরাসরি উঠেছেন ১/১৬-তে। ১/২৪-এর লড়াইয়ে রাকিব সৌদি আরবের আলি রেজা আলবাকামির, সোহেল ভিয়েতনামের এনগুয়েন এগোক ডুংয়ের এবং আশিকুজ্জামান হংকংয়ের ই তাই ওয়াই দেভিদের মুখোমুখি হবেন। কম্পাউন্ড পুরুষ দলগত বিভাগে ২০৭৪ স্কোর নিয়ে ১৩ দলের মধ্যে নবম হয়েছে বাংলাদেশ। দলের হয়ে এলিমিনেশন রাউন্ডে অংশ নিবেন মোহাম্মাদ আশিকুজ্জামান, হিমু বাছাড় ও নাওয়াজ আহমেদ রাকিব। কম্পাউন্ড মিশ্র দলগত বিভাগে হিমু বাছাড় ও বন্য আক্তার জুটিকে নিয়ে গড়া বাংলাদেশ দল এলিমিনেশন রাউন্ডের প্রথম ধাপে খেলবে কাজাখস্তানের বিপক্ষে।
রিকার্ভ মহিলা এককের নারী এককের কোয়ালিফিকেশন রাউন্ডে সেরা হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার জ্যাং মায়ে। কম্পাউন্ড পুরুষ এককের কোয়ালিফিকেশনে ৭১৫ স্কোর নিয়ে প্রথম হয়েছেন দক্ষিণ কোরিয়ার আরচ্যার কিম জংহো। প্রথম দিনের পারফরমেন্স নিয়ে কোচ মার্টিন ফ্রেডরিখ বলেন, ‘আমাদের ভালো কিছু মুহূর্ত আছে এবং কিছু মুহূর্ত ভালো হয়নি। একটু হতাশই, কিন্তু আমি যেটা উল্লেখ করতে চাইছি, সেটা অবশ্যই ভালো অংশ। সকালের সেশনে বন্যা আক্তার ভালো করেছে। রিকার্ভ পুরুষ এককে রাম কৃষ্ণ সাহা ষষ্ঠ হয়েছে। সেরা দশের মধ্যে থাকা খুবই ভালো বিষয়। বিকালের সেশনে হিমু বাছাড় দশম স্থান পেয়েছে। সেরা দশে থাকা ভালো। রিকার্ভ নারী এককের স্কোয়াড আমাদের সবচেয়ে দুর্বল অংশ, তারপরও শিমু ভালো করেছে।
ফ্রেডরিক আরো বলেন, দল ঐক্যবদ্ধভাবে ভালো পরিশ্রম করছে। তাদের মধ্যেকার বন্ধন ভীষণ দৃঢ় এবং আপনারা জানেন দীর্ঘদিন ধরে তারা একসঙ্গে অনুশীলন করছে। একসঙ্গে থাকছে, যেটা আমাদের দলের জন্য বাড়তি শক্তির জায়গা। বাকি দিনগুলোতে দলের সঙ্গে থাকুন। খেলাগুলো খুবই চ্যালেঞ্জিং ও আঁসসাঁট হবে।