
সময়টা মোটেও ভালো যাচ্ছিল না তার। ব্যাটে রান না পাওয়ায় বারবার সমালোচনায় বিদ্ধ হচ্ছিলেন। সাত মাস আগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সিরিজ শেষে নেতৃত্ব ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে ছাড়েনি। বোর্ডের সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন নাজমুল হোসেন শান্ত। ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম টেস্টে দুর্দান্ত সেঞ্চুরি করে অধিনায়কত্বে প্রত্যাবর্তন রাঙিয়েছেন তিনি। সাদা পোশাকের বাংলাদেশ দলকে নেতৃত্ব দিলেও ক্রিজে গেলে কেবল ব্যাটিং নিয়েই মনোযোগী থাকেন বলে জানিয়েছেন তিনি। সাড়ে তিন দিনের মধ্যে আইরিশদের ইনিংস ও ৪৭ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে চতুর্থ দিনের দ্বিতীয় সেশনে সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস শেষ হয় ২৫৪ রানে। এর আগে স্বাগতিকদের একমাত্র ইনিংসে বাঁহাতি শান্তর ব্যাট থেকে আসে ১১৪ বলে ১০০ রান।
টেস্টে বাংলাদেশের চতুর্থ ইনিংস ব্যবধানে ও সব মিলিয়ে ২৪তম জয়ের পর সংবাদ সম্মেলনে শান্ত বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলি, ব্যাট হাতে ক্রিজে নামলে নিজেকে শুধু ব্যাটার হিসেবেই ভাবি। তখন একবারও মনে হয় না যে আমি অধিনায়ক হিসেবে খেলছি। কীভাবে ব্যাটার হিসেবে দলের জন্য অবদান রাখতে পারি সেটাতেই মনোযোগ থাকে। আর মাঠের বাইরে বা ফিল্ডিংয়ের সময় অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্বটা পালনের চেষ্টা করি।’ বাংলাদেশের ওয়ানডে দলের নেতৃত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার অভিমানে টেস্ট দলের অধিনায়কত্বও ছেড়ে দিয়েছিলেন শান্ত। তবে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) তাকে রাজী করিয়ে লাল বলের ক্রিকেটের নেতৃত্বে রেখেছে। আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের চলমান ২০২৫-২৭ সালের চক্রে অধিনায়কের ভূমিকায় দেখা যাবে ২৭ বছর বয়সি তারকাকে। মাঝের মাসগুলোতে শান্ত নিজেকে নিয়ে কাজ করেছেন এবং কীভাবে ব্যাটিং আরও উন্নত করা যায়, সেদিকে মনোযোগ দিয়েছেন, ‘সত্যি বলতে, প্রথম কয়েকটা দিন কঠিন ছিল। কিন্তু হ্যাঁ, তারপর থেকে আমি বেশ স্বস্তিতে ছিলাম এবং পুরো সময়টাই উপভোগ করেছি। আমি নিজেকে সময় দিয়েছি, পরিবারকেও সময় দিয়েছি। আর কীভাবে দক্ষতার দিক থেকে ও মানসিকভাবে আমার ক্রিকেট আরও উন্নত করা যায়— সেটা নিয়ে কাজ করেছি। তবে আমার মনে হয়, সময়টা আমার খুব ভালো কেটেছে।’ ক্যারিয়ারের ৩৮ টেস্টে অষ্টম সেঞ্চুরির স্বাদ পাওয়া শান্ত আইরিশদের বিপক্ষে নিজের ব্যাটিং পারফরম্যান্স বিশ্লেষণ করেছেন এভাবে, ‘এই ইনিংস নিয়ে যদি বলি, আমি যেসব খারাপ বল পেয়েছি, সেগুলোকে কাজে লাগাতে পেরেছি। এটা ছিল ইতিবাচক দিক এবং ফোকাস সব সময়ই এদিকেই থাকে। কারণ, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে খারাপ বল খুব কমই আসে। তাই যেসব খারাপ বল আসে, সেগুলো যতটা সম্ভব ভালোভাবে কাজে লাগানো গুরুত্বপূর্ণ। সেটা করতে পেরে ভালো লাগছে।’
এই টেস্টে লং-অন ও লং-অফ দিয়ে অনেক রান আনেন বাংলাদেশের অধিনায়ক। প্রতিপক্ষের স্পিনারদের মোকাবিলায় আলাদা কোনো কৌশল ব্যবহার করেছেন কি না, এমন প্রশ্নে তিনি জবাব দিয়েছেন, ‘এই ইনিংসে খুব বেশি সুইপ খেলিনি। মনে হয়, একটি সুইপ আর কয়েকটি প্যাডেল সুইপ খেলেছি। বাড়তি কিছু না। আমি বলের যোগ্যতা অনুযায়ীই খেলেছি।’
প্রথম ইনিংসে অভিষিক্ত হাসান মুরাদ ২টি উইকেট নেন। দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে সফল তিনিই।
৬০ রানে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন এই স্পিনার। মুরাদের প্রশংসা করে শান্ত বলেন, ‘সে (মুরাদ) অনেক দিন ধরে জাতীয় দলে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। প্রথমণ্ডশ্রেণিতে অনেক ম্যাচ খেলেছে এবং দলের জন্য দুর্দান্ত করেছে। অবশেষে জাতীয় দলে সুযোগ হয়েছে এবং নিজের জাত চিনিয়েছে সে। আমি আশা করি, নিজের পারফরমেন্স ধরে রাখবে সে।’ সিলেটের উইকেট নিয়ে খুশি শান্ত। স্পিন সহায়ক উইকেটের পরিবর্তে স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছিলেন তিনি। টাইগার দলনেতা বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা এমন উইকেট চাই। আমরা স্পিন-বান্ধব উইকেট চাইনি। আমরা স্পোর্টিং উইকেট চেয়েছিলাম এবং আমরা পেয়েছি। তিন-চার দিন পরেও, উইকেট এখনও বেশ ভালো ছিল।’