
সকালে অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংস আগেভাগে থামিয়ে ৪০ রানের লিড নিল ইংল্যান্ড। এরপর প্রতিপক্ষের বোলিং তোপে ফের তারা গুটিয়ে গেল দুইশর নিচে। সব মিলিয়ে অজিদের সামনে জয়ের জন্য দাঁড়াল ২০৫ রানের লক্ষ্য। ম্যাচের আগের গতিপথ বিবেচনায় এমন পুঁজি নিয়েও হয়তো স্বস্তিতে ছিল ইংলিশরা। কিন্তু তাদেরকে ছারখার করে হতাশায় পোড়ালেন ট্রাভিস হেড।
গতকাল শনিবার পার্থ টেস্টে মাত্র দুই দিনের মধ্যে জিতে অ্যাশেজ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে অস্ট্রেলিয়া। যে পিচে প্রথম তিন ইনিংসে দাপট ছিল পেসারদের, সেখানে জ্বলে উঠে বিস্ফোরক সেঞ্চুরি হাঁকান হেড। তার নৈপুণ্যে নিশ্চিত হয় স্বাগতিকদের ৮ উইকেটের স্মরণীয় জয়।
মাত্র ৬৯ বলে সেঞ্চুরি ছুঁয়ে তিনি খেলেন রেকর্ডে রাঙা ১২৩ রানের ইনিংস। ওপেনিংয়ে নেমে ৮৩ বল মোকাবিলায় বাঁহাতি ব্যাটার হাঁকান ১৬টি চার ও চারটি ছক্কা। প্রথম দিনে মিচেল স্টার্ক-বেন স্টোকসদের গোলায় উইকেট পড়েছিল ১৯টি। ইংল্যান্ড ১৭২ রানে অলআউট পর অস্ট্রেলিয়া দিনের খেলা শেষ করে ৯ উইকেটে ১২৩ রান নিয়ে। বাকি উইকেটটি হারিয়ে এদিন তারা আটকে যায় ১৩২ রানে। এরপর সফরকারীদের দ্বিতীয় ইনিংস ১৬৪ রানে থামিয়ে মাত্র ২৮.২ ওভারে লক্ষ্যে পৌঁছায় স্টিভেন স্মিথের দল। ইংল্যান্ডের পেসারদের পরিকল্পনা সামলে বাহারি শটের পসরা মেলে ধরেন হেড। জোফ্রা আর্চার, গাস অ্যাটকিনসন, ব্রাইডন কার্স ও মার্ক উডের ওপর চড়াও হয়ে ৩৬ বলে ফিফটি পূর্ণ করার পর তিন অঙ্কে পা রাখেন ৬৯ বলে। টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাসে চতুর্থ ইনিংসে বা রান তাড়ায় সবচেয়ে কম বলে সেঞ্চুরির বিশ্বরেকর্ড এটি। পাশাপাশি ওপেনার হিসেবে এই সংস্করণে দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ডে ভাগ বসিয়েছেন তিনি। ৬৯ বলে টেস্ট সেঞ্চুরি আছে অস্ট্রেলিয়ারই সাবেক ব্যাটার ডেভিড ওয়ার্নারের। চমকপ্রদ ব্যাপার হলো, ওপেনিংয়ে নামার কথা ছিল না হেডের। প্রথম ইনিংসে তিনি খেলেছিলেন পাঁচ নম্বরে। উসমান খাওয়াজার চোটের কারণে নতুন বল মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ নিয়ে খুনে ব্যাটিং উপহার দেন তিনি। টেস্টে এই নিয়ে কেবল নবম বারের মতো অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসের সূচনায় দেখা যায় তাকে। আগের আটবারই ছিল ভারতীয় উপমহাদেশে।
কার্সের বলে ডিপ মিডউইকেটে ওলি পোপের তালুবন্দি হয়ে সাজঘরে ফেরেন হেড। তাকে দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে অভিবাদন জানান পার্থের গ্যালারিতে থাকা দর্শকরা। লক্ষ্য থেকে অস্ট্রেলিয়া সে সময় ছিল মাত্র ১৩ রানের দূরত্বে। সেই পথটুকু স্মিথকে নিয়ে পাড়ি দেন মারনাস লাবুশেন। হেডের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১১৭ রানের জুটি গড়া লাবুশেন অপরাজিত থাকেন ৫১ রানে। তার ৪৯ বলের ইনিংসে চার ছয়টি ও ছক্কা একটি। দীর্ঘ ১০৪ বছর পর অ্যাশেজের কোনো টেস্ট শেষ হলো দুই দিনে। সর্বশেষ ১৯২১ সালে নটিংহ্যাম টেস্টের ফল এসেছিল দুই দিনের ভেতরে। সেবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০ উইকেটে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্যাট কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউডের অনুপস্থিতিতে দুর্দান্ত বোলিং করা মিচেল স্টার্ক হন ম্যাচসেরা। হেড অতিমানবীয় ব্যাটিং করার আগে অজিদের জয়ের মূল ভিত্তি গড়ে দেন অভিজ্ঞ বাঁহাতি পেসার। দুই ইনিংস মিলিয়ে তার শিকার ১০ উইকেট। প্রথম ইনিংসে ক্যারিয়ারসেরা বোলিংয়ে ৫৮ রানে ৭ উইকেট নেওয়ার পর দ্বিতীয় ইনিংসে ৫৫ রানে ৩ উইকেট পান তিনি।