বায়াতের প্রয়োজনীয়তা : আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেছেন, “যে ঈমানদার বান্দাগণ! তোমরা (তার নৈকট্য লাভ হেতু) উসিলা অন্বেষণ কর এবং (স্বীয় নফসের সহিত) জিহাদ কর; নিশ্চয়ই তোমরা সফলতা লাভ করবে।” (সুরা মায়েদা : ৩৫)। ব্যাখ্যা : মানব দেহে রুহ এবং নফসের একত্র সমাবেশ। দেহ রোগগ্রস্ত হলে যেমন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হয় এবং চিকিৎসকের নির্দেশ মুতাবিক ঔষধ ব্যবহার করতে হয়, আহারে-বিহারে পরহেয করতে হয়, তেমনি আত্মা রোগগ্রস্ত হলে আত্মার রোগে চিকিৎসক হচ্ছে কামিল পীর মুরশিদ। তিনি তালকিন (দীক্ষা) দিয়ে নফসের ধোকা হতে বাঁচবার পন্থা শিক্ষা দেন এবং আত্মার উন্নতি কীসে হবে তারই নির্দেশ দান করেন। তাদের সহবত (সঙ্গ) এবং মুখনিঃসৃত বাণীসমূহ রুগ্ন-আত্মার উপর ঔষধস্বরূপ ক্রিয়া করে। সে মুরিদ পীরের অধিনায়কত্ব বরণ করে সে মুরিদের আত্মা ঐ কামিল পীরের তত্ত্বাবধানে থেকে ক্রমশ ইনসানই কামিলে পরিণত হয়।
দীক্ষার বৈশিষ্ট্য : দীক্ষার বৈশিষ্ট্য হইতেছে তছদিক। যে দীক্ষার ফলে তছদিক বা উপলব্ধি নাই, সে দীক্ষা অনুপাদেয়। বায়াতের উদ্দেশ্য সংযোগ-সাধন। মহাশক্তির সহিত সংগোগ করিয়া দেওয়াই বায়াতের উদ্দেশ্য।
পরমাত্মা ও জীবাত্মার মধ্যে একই ঐশী শক্তির সংযোগ আছে। বৈদ্যুতিক মোটরের সহিত শহরের প্রত্যেক বাড়ীর সংযোগ আছে তার যোগে। বাড়ির সুইচটি টানিয়া মোটরের সহিত সংযোগ করিয়া দিলে সারা বাড়ী আলোকিত হয়। সেইরূপ জীবাত্মার মধ্যে আত্মিক বিদ্যুৎ বিদ্যমান। এই বিদ্যুতের সহিত পরমাত্মার সংযোগ আছে। জীবের পরমাত্মার সংযোগ সাধনই মুর্শিদের কার্য্য। যখন ঐ সংযোগ সাধিত হয়, তখন মুরীদ ঐশী আলামত দেখিতে থাকে, মুর্শিদের মধ্যবর্ত্তিতায় মুরীদ খোদায়ী তত্ত্বের অনুসন্ধান লাভ করে, স্বপ্নযোগে বেহেশতী নেয়ামত উপভোগ করে, মহাসত্যের নিদর্শন পায়, জীবন ধন্য হয়। কিন্তু কতজনের ভাগ্যে এই উপলব্ধি হয়? মোছলেম হইয়া যদি সত্যের realisation না হয়, যদি খোদার নৈকট্য মাহছুছ না করা যায়, তবে জীবনই বৃথা। জীবনকে সার্থক করিবার জন্যই মুর্শিদের মধ্যবর্ত্তিতার আবশ্যকতা।
(বি.দ্র. লেখকের বানান হুবহু রাখা হয়েছে।)