ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের দুই সদস্যকে গ্রেপ্তার করার কথা জানিয়েছে ইরান। আল জাজিরার প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে। আধা সরকারি বার্তা সংস্থা তাসনিমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই দুই ব্যক্তি আলবোর্জ প্রদেশে বিস্ফোরক ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম বানানোর সময় ধরা পড়েছেন।
ইসরায়েলের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ছায়াযুদ্ধে লিপ্ত ইরান এর আগেও বহুবার মোসাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে অনেক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে ও মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। বিশেষ করে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি ব্যাহত করতে নাশকতা বা হত্যাচেষ্টায় জড়িত থাকার অভিযোগে তাঁদের শাস্তি দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাৎজ ইরানকে হুঁশিয়ার করে বলেছেন, তাঁদের পারমাণবিক সক্ষমতা ও অস্ত্রব্যবস্থা ধ্বংস করে দেওয়া হবে।’ ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো এ তথ্য জানিয়েছে। খবর আল জাজিরার।
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ইঙ্গিত করে কাৎজ বলেন, ‘ইরানের স্বৈরশাসক নিজের শাসন টিকিয়ে রাখতে তেহরানকে বৈরুত বানিয়ে ফেলেছেন এবং তেহরানের জনগণকে জিম্মি করে রেখেছেন।’ এদিকে আজ রোববার তৃতীয় দিনের মতো ইরানে বিমান হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। এর জবাবে ইরানও ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে পাল্টা হামলা চালাচ্ছে।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলীয় শহর হাইফার একটি তেল শোধনাগার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তেল শোধনাগারটি পরিচালনাকারী ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান ‘বাজান’ এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। প্রতিষ্ঠানটির বরাতে ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম এই তথ্য দিয়েছে।
প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ইরানের রাতভর হামলায় তেল শোধনাগার কমপ্লেক্সের ভেতরে পাইপলাইন ও সঞ্চালন লাইনের কিছু নির্দিষ্ট জায়গায় ক্ষতি হয়েছে। তেল শোধনাগারটি এখনো চালু আছে। তবে কিছু ইউনিট ও স্থাপনা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতির প্রভাব মূল্যায়ন করা হচ্ছে।
এই খবর এমন একসময় এল, যখন ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, ইরানি বাহিনী রাতভর ইসরায়েলের দিকে প্রায় ৮০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এগুলোর মধ্যে ৪০টি পড়েছে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলে। এই অঞ্চলেই হাইফা অবস্থিত। খবর আল জাজিরার।
ইসরায়েলি বাহিনী ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় শহর ইস্পাহানে দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালিয়েছে। ইসনা সংবাদ সংস্থার বরাতে ইরানের উপ প্রাদেশিক গভর্নর আকবর সালেহি বলেছেন, ‘ কিছুক্ষণ আগে ইস্পাহানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি স্থাপনা লক্ষ্য করে হামলা চালানো হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কেউ হতাহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।’ তিনি আরও জানান, ‘বিশেষজ্ঞ দলগুলো বর্তমানে সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতি যাচাই করছে।’ এর আগে, ইসরায়েলি বাহিনী শিরাজ শহরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জামের কারখানায় হামলা চালায়। এ সময় সেখান থেকে ঘন কালো ধোঁয়া উড়তে দেখা যায়। খবর আল জাজিরার।
ইরানের হামলায় ইসরায়েলের কেন্দ্রীয় শহর রেহোভতে অবস্থিত গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় উইজম্যান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সেও ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলছে, প্রতিষ্ঠানটির কয়েকটি স্থাপনা নষ্ট হয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেট-এর খবরে বলা হয়েছে, এই হামলায় কেউ হতাহত হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বলেছে, ক্যাম্পাসের কয়েকটি ভবনে হামলা হয়েছে। খবর আল জাজিরার
ইরান গতকাল রাতভর ইসরায়েলের মধ্য ও উত্তরাঞ্চলে পাল্টা হামলা চালিয়েছে। রাতভর হামলার পরের সকালকে ‘অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও কঠিন’ বলে মন্তব্য করেছেন ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট আইজ্যাক হারজোগ। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে এমন মন্তব্য করেন তিনি। হারজোগ বলেন, ‘ইরানের এই অপরাধমূলক হামলায় ইহুদি ও আরব, ইসরায়েলি নাগরিক ও নতুন অভিবাসী—শিশু-বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে—নিহত ও আহত হয়েছেন।’
শোকাহত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানান ইসরায়েলি প্রেসিডেন্ট। তিনি বলেন, এই ভয়াবহ ক্ষতির কারণে তিনি ভুক্তভোগীদের সঙ্গে শোক ভাগ করে নিচ্ছেন। আহতদের সুস্থতা কামনা করছেন। নিখোঁজ ব্যক্তিদের খুঁজে পাওয়ার জন্য প্রার্থনা করছেন। তাঁরা একসঙ্গে শোক করবেন। একসঙ্গে এই দুঃসময় কাটিয়ে উঠবেন।
ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি বলেছেন, ইসরায়েল হামলা বন্ধ করলে ইরানও হামলা থামাবে। গত শুক্রবার ইসরায়েলের হামলার পর এই প্রথমবারের মতো জনসম্মুখে এলেন আরাগচি। তেহেরানে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। ইসরায়েলকে উদ্দেশ করে আরাগচি আরও বলেন, ‘হামলা বন্ধ হলে, আমরাও থেমে যাব।’
আজ রোববারও ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। গতকাল শনিবার রাতেও হামলা হয়েছে। পাল্টা হামলা চালাচ্ছে ইরানও। ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই বক্তব্যে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। খবর আল জাজিরার।