যত তারিফ, যত প্রশংসা সবই প্রাপ্য খোদাওয়ান্দ করীমের, যিনি রাব্বিল আলামীন, যত আমল আছে, যত জগত আছে, যত বিশ্ব আছে সকলেরই পয়দাকারক তিনি। আর রব শব্দ কোরান শরীফের মধ্যে ৬০০০ জায়গায় রয়েছে। রব শব্দের অর্থ খালি পয়দাকারক নয়, পয়দাকারক আর পরিপোষক পরিপুষ্ট করা। যে নিয়ত আছে সে নিয়তকে পূর্ণ করবার জন্য যতকিছু উপায় অবলম্বন করার তিনি সেই সমস্ত উপায় অবলম্বন করেন। দুনিয়াকে সৃষ্টি করেছেন। আর সেই দুনিয়াকে ক্রমে পরিশোধিত করতে আছেন। আর যে পর্যন্ত তার উদ্দেশ্য পূর্ণ না হবে সে পর্যন্ত দুনিয়ার উন্নতি হতে থাকবে। কেয়ামত আসবে না। দুঃখের বিষয়, আমরা পড়ে যাই সুরা ফাতেহা, সেই সুরা ফাতেহার মধ্যে কি আছে সে খেয়াল আমরা করি না।
এখানে আছে সাতটি আয়াত শরীফ। তার মধ্যে ৩টি হচ্ছে খোদাওয়ান্দ করীমের গুণের বয়ান। আর চারটি আমাদের কি কর্তব্য। প্রথমে বলা হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহে রাব্বুল আলামীন- যত তারিফ, যত প্রশংসা, যত চিন্তা সবই প্রাপ্য খোদাওয়ান্দ করীমের। আর তিনি রহমানুর রাহীম, দয়ার সাগর তিনি। খালি দয়ার সাগর নন, তিনি বাকশিশ করনেওয়ালা। আমাদের যত বান্দার যত কিছু গুনা যত কিছু ত্রুটি, হজরত রছুলে করীম (দ:) তাঁর উম্মতের জন্য দোয়া করবেন, আর খোদাওয়ান্দ করীম একবার করে বাকশিশ করবেন। তো বাকশিশ করনেওয়ালা হচ্ছেন খোদাওয়ান্দ করীম। আর কেউ বাকশিশ করতে পারবে না। আর সেই খোদার উপর বান্দার চাই সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করা।
মানুষ হতে হলে পশুত্বকে দূর করতে হবে কিংবা বশীভূত করতে হবে। ইন্দ্রিয়গুলোকে দমন করতে হবে। রিপুগুলোকে দমন করতে হবে। আর তা ছাড়া অন্তরেন্দ্রিয়কে দমন করতে হবে। আমরা আমাদের মধ্যে সকলেরই মধ্যে খোদী আছে, আমিত্ব আছে, অহমিকা আছে। যে পর্যন্ত আমরা অহমিকাকে বর্জন করতে না পারব সে পর্যন্ত খোদার দীদার লাভে এই দুনিয়ার বুকে সম্ভবপর হবেনা। খোদার অনুগ্রহ পেতে হলে নিজেকে একেবারে লয় করে দিতে হবে। নিজের যেন মাত্র কোন প্রকার ফখর না থাকে। খোদার যত বান্দা আছে, যে জাতের হোক, যে ধর্মের হোক, যে স্থানের হোক, সকলকে সমভাবে খেদমত করা। আর তাদের খেদমত করলে খোদাতালার সন্তুষ্টি সাধিত হয়। দুঃখের বিষয়, আমরা মুছলমান মনে করি যে আমরাই সবকিছু।
খোদাওয়ান্দ করীম যত বান্দা সৃষ্টি করেছেন, সকলের মধ্যে তার রূহ আছে, তারই শরীরের অংশ আছে। আমি যদি কোন বান্দাকে যদি একটু ঘৃণা করি তাহলে খোদাকেই ঘৃণা করা হয়। আপনার সন্তানকে যদি আমি ঘৃণা করি তাহলে আপনাকে ঘৃণা করা হবে। দুঃখের বিষয় আমরা তা বুঝি না। সেই জন্য আমাদের চাই, খোদাকে পেতে হলে প্রথমে অহমিকাকে একেবারে ত্যাগ করতে হবে। ঘৃণাকে ত্যাগ করতে হবে। ঈর্ষাকে ত্যাগ করতে হবে। দ্বেষকে ত্যাগ করতে হবে। রীপুকে ত্যাগ করতে হবে।
আর সারা প্রাণটি দিয়ে খোদার বান্দার সেবা করতে হবে। তামাম পৃথিবীতে প্রকৃতি দেখুন, প্রকৃতির দিকে একবার চেয়ে দেখুন, একবার অনুধাবন করুন, প্রত্যেকটি গাছ প্রত্যেকটি পাতা, প্রত্যেকটি পাখি, প্রত্যেকটি পশু, প্রত্যেকটি কীট, প্রত্যেকটি খোদারই গুণকীর্তন করে। শেষ রাত্রি হলে তখন দেখুন, পাখীরা ডাকতে থাকে, পাখীরা যে খোদাকে ডাকে, তাদের নিজের প্রত্যেকের নিজের স্বতন্ত্র স্বতন্ত্র ভাষা, আর সেই ভাষা দিয়ে খোদাকে ডাকে। আর মানুষ নিজের চিন্তায় এত গর্বিত শুয়ে থাকে। পাখীরা ডাকে, মোরগেরা ডাকে, উঠো খোদাকে ইয়াদ করো, ইবাদত করো, আর তারা ঘুমিয়ে নিদ্রায় থাকে। বড়ই আফসোসের কথা।
যাই হোক, আমাদের মনে করতে হবে, যে খোদাওয়ান্দ করীম বড়ই অনুগ্রহ করে আমাদিগকে, মানবকে সৃষ্টি করেছেন। যিনি এতধিক অনুগ্রহ বান্দার জন্য করেছেন, সেই বান্দার কর্তব্য কি?
বি.দ্র : লেখকের বানান হুবহু রাখা হয়েছে।