প্রিন্ট সংস্করণ
০০:০০, ৩০ আগস্ট, ২০২৫
প্রেম হলো আল্লাহর উদ্দেশ্যে সমস্ত বস্তু উৎসর্গ করার মানসিকতা অর্জন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘খোদা তাআলা দাউদ নবীকে (আ.) বলিয়াছিলেন- ঐ ব্যক্তি আমার প্রিয়তর যে আমাকেই চায়- ‘শাস্তির ভয়ে কিংবা পুরস্কারের আশায় নহে’। অন্যত্র কথিত হয়েছে- তাহা অপেক্ষা অপরাধী কে, যে দোজখের ভয়ে কিংবা বেহেশতের আশায় আমাকে অর্চ্চনা করে। যদি আমি দোজখ বা বেহেশ্ত সৃষ্টি না করিতাম, তবে কি কেহ আমার অর্চ্চনা করিত না?’ (ছূফী পৃঃ ৬৮)।
প্রেমের পথের পথিকদের না থাকবে দুনিয়ার লোভ, না থাকবে পরকালে বেহেশ্ত প্রাপ্তির আকাংখা। আল্লাহ্ প্রেমিক শুধুমাত্র আল্লাহকেই চাইবে। হজরত রাবেয়া বসরীর এবিষয়ক দৃষ্টিভঙ্গি সূফী দর্শনের ইতিহাসের সমস্ত পাঠকদের জানা রয়েছে। তাঁর অনবরত প্রার্থনা এই ছিল- ‘হে আল্লাহ্ আমি, যদি বেহেশতের আশায় তোমার ইবাদত করি তবে বেহেশত আমার জন্য হারাম করে দিও এবং দোজখের ভয়ে যদি তোমার ইবাদত করি তবে দোজখেই যেন আমার স্থান নির্ধারিত হয়’।
হজরত রাবেয়ার একমাত্র আকাঙ্ক্ষা ছিল শুধুমাত্র আল্লাহর জামাল দর্শন। তিনি যেহেতু প্রেমের উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছতে সক্ষম হয়েছিলেন, তাঁর প্রেমাষ্পদ ভিন্ন সবকিছুই তাঁর কাছে তুচ্ছ বলে বিবেচিত হতে থাকে। প্রেমের স্তর সর্বোচ্চ স্তর তা ইমাম আল-গাযালী তাঁর জগৎ প্রসিদ্ধ গ্রন্থ এহয়াউ উলুমিদ্দীন-এ উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন: ‘হে প্রিয় পাঠক, জেনে রাখো আল্লাহর প্রেমের স্তর হলো শেষ স্তর ও সর্বোচ্চ মর্যাদপূর্ণ স্থান (মাকাম)’। আল্লাহর প্রেমের স্তর উপনীত হওয়ার পর আর কোন উচ্চস্তর অবশিষ্ট থাকে না। এই স্তরের আগের স্তরগুলো হলো- তাওবার, ধৈর্র্য্যরে এবং বর্জন (পরহেযের)- এ স্তর।
‘ইছলামের চারিটি স্তর শরীয়ত, তরীকত, হকীকত ও মারেফত। বিশুদ্ধ অনুষ্ঠানের নাম শরীয়ত। ছালেক তত্ত্বজ্ঞান দ্বারা তরীকত, চিত্তাদ্ধি দ্বারা হকীকত ও প্রেম দ্বারা মারেফতে উপনীত হয়। শেষ স্তরেই প্রেমময়ের নৈকট্য লাভ হয়, ইহারই নাম তাওহীদ’ (তরীকত শিক্ষা, ৮ম সংস্করণ, ২০০৪ পৃঃ৩)। এই স্তরে উপনীত হওয়াই সূফী সাধনার পরম লক্ষ্য।
প্রেম শরীর, মন ও হৃদয়কে এক অনির্বচনীয় আনন্দে মুগ্ধ করে (ছূফী: পৃঃ ৭৩)। প্রেমিকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য প্রেমাপিদের মধ্যেই নিজেকে বিলীন করা। পারস্যের সাধক কবি হজরত ফরিদউদ্দীন আত্তারের (রহঃ) ভাষায়- ইশ্ক চে বুদ? কাৎরা দারীয়া সাখতান, আয দো আলম বা খোদা পোর দাখতান। কাৎরা দার দারীয়া ফিতাদ ও শুদ ফানা, আইঁ দারীয়া গাশতানাশ বা’শাদ বা’ক্বা। অর্থাৎ প্রেম কি? প্রেমের কাজ বিন্দুকে সিন্ধুতে পরিণত করা এবং উভয় জগতের ভিতর একমাত্র খোদাতে চিত্তকে সমাহিত করা। বারিবিন্দু সিন্ধুতে পড়িয়া লীন হইয়া যায়। এইরূপে সাগরে পরিণত হওয়াই তাহার পক্ষে শাশ্বত জীবন লাভ।
বি. দ্র : লেখকের বানান হুবহু রাখা হয়েছে।