মঙ্গলবার, রাত ১২টা। অস্ত্রধারী নয়জন আনসার সদস্য নিয়ে টি-শার্ট পরে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. রাশেদুল ইসলাম। এসময় ড্রাইভার, আনসার সদস্য-কাউকেই বলেন নি তিনি কোথায় যাচ্ছেন।
এদিকে রাতের সাথে দাপট বাড়ছিল রামুর মাটিখেকোদের। হঠাৎ সাহস করে নয় আনসার সদস্যকে নিয়ে অভিযানে ইউএনও। একপর্যায়ে রাত ১২টা থেকে ভোর ৪টা পর্যন্ত একে একে জব্দ করেন মাটি বোঝাই নয়টি ডাম্পার। ভোরের আলো ফুটলে অভিযানের বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলাজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।
গেল ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর কক্সবাজার জেলাজুড়ে পাহাড় কাটা, বালু লুট ও কৃষিজমি থেকে টপসয়েল কাটা মহোৎসব চলে আসছে।
প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট মহল কোনোমতেই থামতে পারছেনা পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রম। বিশেষ করে রাতের আঁধারে রামু উপজেলার কাউয়ারখোপ, চাকমারকুল, রাজারকুল, রশিদনগর এলাকায় ব্যাপকহারে টপ সয়েল কাটার মহোৎসব চলে আসছিল। উপজেলা প্রশাসন নানা কৌশলে অভিযান চালিয়েও এইসব কর্মকাণ্ড থামাতে পারছিল না।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ছদ্মবেশে অভিযানে নামেন রামু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.রাশেদুল ইসলাম। শ্বাসরুদ্ধকর পাঁচ ঘণ্টার অভিযানে আসে ব্যাপক সফলতা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার অনেক স্থানে নতুন করে মাটি, বালু লুটে যুক্ত হয়েছে বিএনপি ঘরনার লোকজন। আবার অনেক স্থানে আ.লীগ-বিএনপি মিলেমিশে পরিবেশ বিধ্বংসী কার্যক্রমে চালানোর তথ্য মিলেছে।
এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় রামুর ইউএনও মো. রাশেদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, 'সাধারণত মাটিখেকোরা আতঙ্কে থাকেন এসিল্যান্ডের অভিযান নিয়ে। তাই এসিল্যান্ড কোথায় যাচ্ছেন, বেশির ভাগ সময় গতিবিধি লক্ষ্য রাখেন। মঙ্গলবার রাত ১২টায় কাউকে কিছুই না বলে নয় আনসার সদস্য নিয়ে বের হয়। মাটি কাটার ধ্বংসাত্মক দেখে অভিযান চালায়। ওই সময় মাটি বোঝাই নয় গাড়ি জব্দ করা হয়।'
ইউএনও রাশেদুল ইসলাম বলেন, 'এই কৃতিত্ব শুধু আমার নয়, অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়েছে আনসার সদস্যরাও।' এক প্রশ্নের জবাবে 'দেশের সম্পদ, মা ও মাটি রক্ষায় এ নির্ঘুম রাতের তৃপ্তি অন্যরকম।' বালু-মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে উপজেলা প্রশাসনের এ যুদ্ধ চলমান অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।