ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

আবিদের বক্তব্য নিয়ে ইবি শিবির কর্মীদের ব্যঙ্গ, যা বললেন অভিযুক্তরা

আবিদের বক্তব্য নিয়ে ইবি শিবির কর্মীদের ব্যঙ্গ, যা বললেন অভিযুক্তরা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদে (ডাকসু) ছাত্রদল সমর্থিত ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলামের জুলাই আন্দোলনে বলা ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ অংশটি নিয়ে ব্যঙ্গাত্মক ভিডিও ধারণ করে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (ইবি) শাখা ছাত্রশিবিরের বিভিন্ন পর্যায়ের সাতজন নেতাকর্মী।

এ ঘটনায় শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৩ শিক্ষার্থী। এর আগে দূঃখ প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্ট দেন একাধিক অভিযুক্ত শিক্ষার্থী।

গত মঙ্গলবার রাতে ডাকসুর ফল ঘোষণার সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নাইমুর রহমান নামে এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেন। গতকাল শনিবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সেটি ভাইরাল হলে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।

২৬ সেকেন্ডের মূল ভিডিওতে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ‘তুমিও জানো আমিও জানি, সাদিক কায়েম পাকিস্তানি’ স্লোগান নেন। পাশাপাশি ‘প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যায়েন না’ নিয়েও ব্যঙ্গ করেন। তবে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে কাঁটছাট করে শুধু ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যাইয়েন না’ অংশ প্রচার করা হয়।

ভিডিওতে থাকা শিক্ষার্থীরা হলেন, ওমর ফারুক (ইইই ২০-২১ সেশন), নাহিদ হাসান (আল কুরআন ২০-২১), নাইমুর রহমান (অর্থনীতি ২১-২২), সোহান (ল ১৭-১৮), রোকনুজ্জামান রোকন (মার্কেটিং ১৯-২০), মোজাম্মেল (দাওয়াহ ২১-২২), আবদুল্লাহ নুর মিনহাজ (আল হাদিস ২০-২১)। তারা সবাই ইবি শাখা ছাত্রশিবিরের হল ও ফ্যাকাল্টির নেতাকর্মী।

এ বিষয়ে ফেসবুকে ঢাবি ছাত্রদল নেতা আবিদুল ইসলাম খান লেখেন, পাঁচজন শহীদের রক্তে ভেজা ঐতিহাসিক এই লাইনটুকুও শিবিরের উগ্রতা থেকে রেহাই পায়নি। আমি বিশ্বাস করি এই উগ্রতায় পুরো জাতি লজ্জিত হবে।

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদী লেখেন, এইসব স্টুপিডিটি বন্ধ করতে হবে। আবিদের রাজনীতি আপনার পছন্দ না হতে পারে। কিন্তু সে জুলাইয়ের নিবেদিতপ্রাণ যোদ্ধা। তার বক্তব্যটা জুলাইয়ের অনবদ্য দলিল।

ছাত্রদল নেতা শেখ তানভীর বারী হামিম লেখেন, “প্লিজ, কেউ কাউকে ছেড়ে যেয়েন না” বাংলা ব্যাকরণে একটি অনুরোধসূচক বাক্য কিন্তু এর প্রভাব আন্দোলনের সেই মুহূর্তে ছিল অসীম। আমি সকলকে অনুরোধ করবো—বহু মানুষের রক্ত, অনেক পরিবারের অশ্রু ও আত্মত্যাগের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের কোন মুহূর্তকে নিয়ে ব্যঙ্গ করবেন না। এটা জাতি হিসেবে অত্যন্ত লজ্জার। মনে রাখবেন, ব্যক্তি থেকে দল বড়, দল থেকে দেশ।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীদের হাতে ‘আবু সাইদ-ওয়াসিমের রক্ত, বৃথা যেতে দিব না’, ‘জুলাই আগষ্টের বিপ্লবী স্লোগান নিয়ে মককারীদের শাস্তি চাই’, ‘স্ফুলিঙ্গ থেকে দাবানল’, ‘জুলাইয়ের অবমাননা মানি না মানব না’, ‘আমরা দোষীদের শাস্তি চাই’, ‘আবিদ ভাই আপনাকে আমরা ছেড়ে যাইনি’, ‘বাকস্বাধীনতা চেয়েছি কিন্তু জুলাই অবমাননা চাইনি’ ইত্যাদি প্লাকার্ড দেখা যায়।

মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যেই স্লোগান আমাদেরকে জুলাইয়ে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়ার সেই স্লোগানকে ব্যঙ্গ করা হয়েছে। এটি তো সেই স্লোগান যার অনুপ্রেরণায় সেখানে একসাথে ৫জন শহিদ হয়েছিল। এমনকি সেদিন ছোট্ট শিশু আনাস শহিদ হয়েছিল। তাই এ ব্যঙ্গ আমরা কোনোভাবেই সহ্য করতে পারি না। জুলাই যোদ্ধাদের শানে কোনো ধরনের বেয়াদবি আমরা মানি না। আমরা জেনেছি এগুলো করা হয়েছে ছাত্রশিবিরের কিছু জনশক্তি দ্বারা। আমরা বলতে চাই যেখানে আপনার কেন্দ্রীয় সভাপতি ডাকসু জয়ের পর বললো যে আমরা পরাজিতদের সম্মানে কোনো বিজয় মিছিল করব না, সেখানে আপনারা ইবিতে থেকে এরকম মকারি করলেন। তাও এমন ব্যক্তিকে নিয়ে করলেন যিনি ছিলেন জুলাই যোদ্ধা। এমন স্লোগানকে নিয়ে করলেন যা আমাদেরকে জুলাইয়ে জীবন দিতে উজ্জীবিত করেছিল। তাহলে কী ব্যাপারটা এমন হয়ে গেল না যে আপনাদের সেন্ট্রাল কমান্ড মানেন না।’

এদিকে আজ সকালে অভিযুক্ত সোহান হাসান শাকিব দূঃখ প্রকাশ করে ফেসবুকে লেখেন, ‘গত ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৫ ডাকসু নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমাদের করা একটি ভিডিওর কিছু অংশকে অনেকেই সমালোচনাসহ প্রচার করছেন, যেখানে ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান ভাইয়ের ‘প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না’ অংশটুকু ছিল। এই বিষয়টি নিয়ে কিছু বলা প্রয়োজন মনে করে এই পোস্ট।

এই ভিডিওটি আমরা করেছি সহপাঠীদের মধ্যে আড্ডার ছলে। এটি সেন্স অব হিউমার থেকে করা। এটি উদেশ্যমূলকভাবে কাউকে আঘাতের জন্য করা হয়নি। ভিডিওটিতে আবিদ ভাইয়ের কথার পাশাপাশি সাদিক কায়েম ভাইকে নিয়েও মন্তব্য ছিল। কিন্তু ভিডিওটির একটি অংশ পোস্ট করে আবিদ ভাইয়ের বিষয়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করে একটি নেগেটিভিটি তৈরি করা হয়েছে।

তিনি আরও লেখেন, ভিডিওটি ছিল কেবলই হলের একটি রুমে বসে বন্ধুদের মাঝে আড্ডার অংশ। এটি কোনো রাজনৈতিক বৈঠক বা উদ্দেশ্যমূলক প্রচারণা ছিল না। এছাড়া এটি কেবলই ডাকসু নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে করা হয়েছে, অনেকে এটিকে জুলাই আন্দোলনে আবিদ ভাইয়ের সেই বিখ্যাত আহ্বানকে অবমূল্যায়নের কথা বলছেন, এটি কোনোভাবেই তেমন উদ্দেশ্য নিয়ে করা হয়নি। বরং বিষয়টির এমন অর্থ নিয়ে অনেকে কষ্ট পেয়েছেন যা আমাদের মর্মাহত করেছে।

জুলাই যোদ্ধা আবিদ ভাইয়ের অবদান অনস্বীকার্য। তার হৃদয়গ্রাহী আহ্বান—“প্লিজ কেউ কাউকে ছেড়ে যাইয়েন না”—অন্দোলনের কঠিন মুহূর্তে হাজারো শিক্ষার্থীর মনোবল ধরে রেখেছিল, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিল। আমরাও আন্দোলনের মাঠে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম। মজার ছলে করা আমাদের এই ভিডিওটি এভাবে মানুষকে কষ্ট দেবে, বিশেষ করে আমাদের জুলাই সহযোদ্ধাদের, এটি কখনোই ভাবতে পারিনি। আবিদ ভাইসহ যারা আমাদের এই কর্মকাণ্ডে ব্যথিত হয়েছেন, সবার কাছে আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি।

প্রসঙ্গত, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পূর্ব মুহূর্তে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের নেতা আবিদুল ইসলাম খান আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘প্লিজ কাউকে ছেড়ে যায়েন না।’ তার এ আহ্বান আন্দোলনকারীদের শক্তি, সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল।

এছাড়া ডাকসু নির্বাচনে ‘প্লিজ কেউ ছেড়ে যায়েন না’ উক্তির ব্যবহার করে প্রচার-প্রচারণা করেন তিনি। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তা নিয়ে অনেকে ইতিবাচক ও নেতিবাচক মন্তব্য করতে দেখা যায়।

অভিযুক্তরা,ইবি শিবির কর্মীদের ব্যঙ্গ,আবিদের বক্তব্য
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত