ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ২০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবিতে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

তিস্তা নদীর ন্যায্য পানির হিস্যা ও তিস্তা মহাপরিকল্পনা দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন করেছে শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (২১ অক্টোবর) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জয়ধ্বনি মঞ্চ থেকে বিক্ষোভ মিছিলটি শুরু হয়ে দোলনচাঁপা ও শিউলিমালা হল এবং প্রশাসনিক ভবন প্রদক্ষিণ করে চির উন্নত মম শির প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।

রংপুর ডিভিশন স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে আয়োজিত এ কর্মসূচিতে শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেন। ‘জাগো বাহে, তিস্তা বাঁচাও, উত্তরবঙ্গের প্রাণ ফিরাও’, ‘ভারত যদি বন্ধু কও, ন্যায্য পানির হিস্যা দেও’, ‘তিস্তা বাঁচাও, দেশ বাঁচাও, কৃষক বাঁচাও’— এমন নানা স্লোগানে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।

রংপুর ডিভিশন স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি এম এস এইচ সাব্বির বলেন, “উত্তরবঙ্গের মানুষ দীর্ঘদিন ধরে অবদমিত হয়েছে। আমরা বারবার তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নের দাবি তুলেছি, কিন্তু কোনো সরকারই তা করতে পারেনি। কারণ, তারা বরাবর ভারতের আনুগত্যে থেকেছে। যদি কেউ ভারতের আনুগত্য করতে চায়, আমরা তাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দেব।”

সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক জান্নাতুন রোমা বলেন, “তিস্তা নদীর প্রাকৃতিক বৈচিত্র্য এবং এর দ্বারা সৃষ্ট চ্যালেঞ্জগুলো আজ প্রজন্মের পর প্রজন্মের প্রাণের দাবিতে পরিণত হয়েছে। ২০২৪ সালের জুলাই বিপ্লবের পর উত্তরবঙ্গের মানুষ তিস্তা মহাপরিকল্পনাকে ঘিরে নতুন করে স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে। আমরা চাই তিস্তা নদী আর অভিশাপ নয়, আশীর্বাদ হয়ে ফিরে আসুক।”

তিস্তা বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান আন্তঃসীমান্ত নদী, যা ভারতের সিকিম থেকে উৎপন্ন হয়ে পশ্চিমবঙ্গ অতিক্রম করে বাংলাদেশের লালমনিরহাট, রংপুর ও নীলফামারীসহ উত্তরাঞ্চল দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদে মিশেছে। এ নদীই উত্তরবঙ্গের কৃষি, সেচ ও জীবিকার মূল ভিত্তি। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে কোনো চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। শুষ্ক মৌসুমে ভারত গজলডোবা ব্যারাজের মাধ্যমে পানি আটকে রাখায় বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের বিশাল এলাকা কৃষিকাজে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ে।

২০২০ সালে বাংলাদেশ সরকার ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ নামে একটি সমন্বিত নদী ব্যবস্থাপনা প্রকল্পের প্রস্তাব দেয়, যার লক্ষ্য নদী খনন, বাঁধ নির্মাণ, জল সংরক্ষণ ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি নদীতীরবর্তী জনপদের টেকসই উন্নয়ন। ২০২৩ সালে প্রকল্পটি আবার আলোচনায় আসে, যখন চীনা সহযোগিতায় প্রায় ১ বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হয়। তবে ভারতের আপত্তি এবং রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার কারণে প্রকল্প বাস্তবায়ন এখনো অনিশ্চিত।

মানববন্ধনে অংশ নেওয়া আইন বিভাগের শিক্ষার্থী প্রমিস বলেন, “আমরা চাই না উত্তরবঙ্গের মানুষ আর তিস্তার পানির জন্য কাঁদুক। সরকারের উচিত জাতীয় স্বার্থে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়া।”

একই বিভাগের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার বলেন, “তিস্তার পানি শুধু কৃষকের নয়, এটি পুরো উত্তরাঞ্চলের অস্তিত্বের প্রশ্ন।”

উল্লেখ্য, ২০১১ সালে প্রস্তাবিত তিস্তা চুক্তি ভারতের কেন্দ্রীয় ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মতবিরোধের কারণে এখনো স্বাক্ষরিত হয়নি। ফলে শুষ্ক মৌসুমে তিস্তায় পানির প্রবাহ কমে গিয়ে নদী প্রায় শুকিয়ে যায় আর বর্ষায় অতিপ্রবাহে দেখা দেয় ভয়াবহ বন্যা। বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্যমতে, তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে উত্তরবঙ্গের কৃষি উৎপাদন প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেতে পারে এবং প্রায় দুই কোটি মানুষের জীবিকা সরাসরি উপকৃত হবে।

তিস্তা মহাপরিকল্পনা,নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়,বিক্ষোভ
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত