
জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশ্ব দর্শন দিবস–২০২৫ উপলক্ষ্যে বর্ণাঢ্য র্যালি এবং আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কনফারেন্স কক্ষে দর্শন বিভাগের আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান।
অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম।
সভায় সভাপতির বক্তব্যে উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “দর্শনের শিক্ষার্থী না হয়েও আজকের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করতে পেরে ভীষণ গর্বিত। বিজ্ঞ দার্শনিকদের আলোচনায় সমাজবিজ্ঞানের সঙ্গে দর্শনের যে ঘনিষ্ঠ যোগসূত্র রয়েছে, তা নতুনভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছি।”
তিনি আরও বলেন, “দর্শনের শিক্ষার্থীরা যত গভীরভাবে সমাজকে দেখবে, সমাজে সাম্য প্রতিষ্ঠা ও বৈষম্য দূরীকরণে তত বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে। আজকের শিক্ষার্থীদের মধ্য থেকেই নোয়াম চমস্কি বা এডওয়ার্ড সাঈদের মতো চিন্তাবিদ বেরিয়ে আসবে বলে আমি আশা করি।”
প্রধান অতিথির বক্তব্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন, “দর্শন, বিজ্ঞান এবং ধর্ম— তিনটিই জীবন ও জগৎ নিয়ে কাজ করে। বিজ্ঞান পর্যবেক্ষণ ও পরীক্ষণের মাধ্যমে সত্য খুঁজে পায়, দর্শন যৌক্তিক বিশ্লেষণ ও কার্যকারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে তা ব্যাখ্যা করে এবং ধর্ম বিশ্বাসের ভিত্তি গড়ে। যেখানে বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা দেখা দেয়, সেখানে দর্শন যৌক্তিক উত্তর খুঁজে আনে।”
তিনি আরও বলেন, “যেমন একজন মানুষ একইসঙ্গে বাবা, ভাই ও শিক্ষক হতে পারে, তেমনি একই ব্যক্তি দার্শনিক, বিজ্ঞানী ও ধার্মিকের ভূমিকা পালন করতে পারেন— প্রেক্ষিত ও পরিস্থিতি অনুযায়ী।”
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে গ্লোবাল ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের উপাচার্য ইমেরিটাস প্রফেসর ড. আনিসুজ্জামান বলেন, “প্রতিটি বিভাগের শেকড়ই দর্শনে গাঁথা। ২০০২ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব দর্শন দিবস ঘোষণা করে দর্শনের হারানো গুরুত্ব পুনরুদ্ধারের চেষ্টা করেছে। যেমন বাবা-মায়ের গুরুত্ব কমে যাওয়ায় বাবা দিবস বা মা দিবস এসেছে, তেমনি দর্শনের গুরুত্ব হ্রাস পাওয়ার কারণেই এ দিবস উদযাপনের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।”
বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. জয়নুল আবেদীন সিদ্দিকী, কলা অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. মোহাম্মদ ইমদাদুল হুদা, বিজ্ঞান ও প্রকৌশল অনুষদের ডিন প্রফেসর ড. এ এইচ এম কামাল, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের প্রফেসর মো. জাকির হোসেন এবং নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মো. মিজানুর রহমান।
স্বাগত বক্তব্য দেন দর্শন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও ‘বিশ্ব দর্শন দিবস ২০২৫’ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক মো. তারিফুল ইসলাম। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিভাগের প্রভাষক ও উদযাপন কমিটির সদস্য–সচিব মো. খাইরুল ইসলাম। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রভাষক শায়লা ইসলাম নীপা।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিন, বিভাগীয় প্রধান, প্রক্টর, প্রভোস্ট, ছাত্রপরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালকসহ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
পরে বিশ্ব দর্শন দিবসকে কেন্দ্র করে দর্শন বিভাগের প্রভাষক শুভ চন্দ্র ঘোষ সম্পাদিত ‘বিশ্ব দর্শন দিবস স্মরণিকা–২০২৫’ এর মোড়ক উন্মোচন করা হয় এবং কেক কাটা হয়।
উল্লেখ্য, ২০ নভেম্বর বিশ্ব দর্শন দিবস হলেও বিভাগটির চলমান একাডেমিক পরীক্ষা থাকার কারণে দিবসটি আজ ২৩ নভেম্বর উদযাপন করা হয়েছে।