ঢাকা বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

এনওসি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

এনওসি ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক

কর্তৃপক্ষের অনাপত্তিপত্র (এনওসি) ছাড়াই যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানের অভিযোগে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ফারহানা রিয়া দিবাকে ঘিরে শিক্ষক নিয়োগনীতি, শিক্ষাছুটি ব্যবস্থাপনা এবং জবাবদিহিতা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন উঠেছে।

একই সঙ্গে শিক্ষাছুটির বেতন গ্রহণ করে বিদেশে অবস্থান করাকে সরকারি অর্থের অপব্যবহার হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিশ্ববিদ্যালয় ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.ফিল. ডিগ্রি অর্জনের উদ্দেশ্যে তিনি ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে দুই বছরের শিক্ষাছুটিতে রয়েছেন। তবে শিক্ষাছুটির নির্ধারিত মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই চলতি বছরের অক্টোবর মাসে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যান এবং এখনও সেখানে অবস্থান করছেন বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

দপ্তরসূত্র জানায়, সরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে দেশের বাইরে যেতে হলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পূর্বানুমোদন ও অনাপত্তিপত্র গ্রহণ বাধ্যতামূলক। কিন্তু সহকারী অধ্যাপক ফারহানা রিয়া দিবা এ ক্ষেত্রে কোনো ধরনের অনুমোদন নেননি। সংশ্লিষ্টদের মতে, এটি বিশ্ববিদ্যালয়ের চাকরি বিধিমালার সরাসরি লঙ্ঘন।

এ বিষয়ে তার এম.ফিল. সুপারভাইজার, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, তার এম.ফিল. এখনো সম্পূর্ণ হয়নি এবং দীর্ঘদিন ধরে তার সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। তিনি দেশের বাইরে গেছেন কি না, সে বিষয়েও অবগত নন বলে জানান। সুপারভাইজারের এই বক্তব্য এম.ফিল. সম্পন্ন না করেই বিদেশে অবস্থানের অভিযোগকে আরও জোরালো করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. ইমদাদুল হুদা বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই এবং বিভাগ থেকে অবগত করা হলে প্রশাসন প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেবে। তবে একাধিক শিক্ষক মনে করছেন, এমন গুরুতর ঘটনায় ‘জানা নেই’ বলে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. মিজানুর রহমান বলেন, চাকরিরত অবস্থায় কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ছাড়া দেশের বাইরে যাওয়া যাবে না। অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হয়ে উঠেছে শিক্ষাছুটিতে থাকার সময় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়মিত বেতন-ভাতা গ্রহণের বিষয়টি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, এম.ফিল. বা পিএইচডির জন্য শিক্ষাছুটিতে থাকা অবস্থায় শিক্ষকদের বেতন দেওয়া হয়। সেই বেতন গ্রহণ করে ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে না ফিরে বিদেশে থেকে যাওয়া শুধু অনৈতিক নয়, বরং এটি সরাসরি প্রতারণার শামিল।

আরেক শিক্ষক জানান, এমন ঘটনায় প্রশাসনের উচিত বেতন-ভাতার সমপরিমাণ অর্থ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে ফেরত আনার পাশাপাশি আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা।

এ বিষয়ে সহকারী অধ্যাপক ফারহানা রিয়া দিবার বক্তব্য জানতে হোয়াটসঅ্যাপ ও মেসেঞ্জারে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। ফোন কলও রিসিভ করেননি। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তাকে নিয়মিত সক্রিয় থাকতে দেখা গেছে, যা বিষয়টিকে আরও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক ও কর্মকর্তা মনে করছেন, এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত না হলে ভবিষ্যতে শিক্ষাছুটি ব্যবস্থার অপব্যবহার বাড়বে এবং উচ্চশিক্ষা ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি জনআস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক,এনওসি ছাড়াই,যুক্তরাষ্ট্র
আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত