বান্দরবান জেলার পাহাড়ি নারীরা বাড়তি আয়ের জন্য তাদের তৈরি বাহারি পণ্যে বিক্রির উদ্যেশ্যে হাটে নিয়ে আসেন। বিশেষ করে পর্যটকদের উদ্দেশে নিয়ে আসা এসব পণ্য বিক্রি করে তারা বাড়তি আয় করে। সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, বান্দরবান জেলার অধিকাংশ পর্যটন এলাকায় নারীরা নানান রকমের পণ্যের পসরা সাজিয়ে পর্যটকদের অপেক্ষায় থাকে। জেলা সদরে সন্নিকটে ফারুক পাড়া ও লাইমি পাড়া, এই দুই পাড়ায় বসবাস করেন বম ও লুসাই সম্প্রদায়ের মানুষ।
এই দুই পাড়ার নারীর মানুষজন পর্যটক নির্ভর ব্যবসা জুড়িত। পর্যটন স্পট শৈলপ্রপাতে সাপ্তাহিক ধর্মীয় দিন রবিবার ছাড়া প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৫০ জন নারী পাহাড়ি ফল আম, কাঁঠাল, জাম্বুরা, আনারস, লিচুসহ বিভিন্ন ধরনের ফল এবং নিজ হাতে বোনা কাপড় ও হস্তশিল্প নিয়ে পর্যটকদের সেবা দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। প্রতি সপ্তাহে দুই দিন বান্দরবান সদর হাটে গিয়ে পাহাড়ি ফল আম, আনারস, কলা, কাঁঠাল সংগ্রহ করে বিক্রি করেন তারা। পর্যটকদের উপস্থিতির ওপর নির্ভর করে আয় সরকারি ছুটির দিন, বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার স্বাভাবিকভাবে পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকালে ২ থেকে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়। তবে অন্যান্য দিনে বিক্রি নেমে আসে ১ হাজার থেকে ১২০০ টাকায়। প্রতিদিন গড়ে ৫০০ থেকে ৭০০ টাকার মতো আয় হয় বলে জানান।
পাহাড়ি নারী সাংপুই লুসাই (৩০) জানান- গত ১০ বছর ধরে আম, আনারস, জাম্বুরা, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমি ফল বিক্রি করেন। বাড়তি আয়ের জন্য সময় পেলে রাতে কাপড় বুনে বিক্রি করেন তিনি। শৈলপ্রপাতে আরেক ফল বিক্রেতা লেংরোয়েল কিম বম বলেন, সারাদিনে ফল বিক্রি করে যা পায় তা দিয়ে কোনোমতে সংসার চালিয়ে যাচ্ছি। পাহাড়ে কেএনএফ ইস্যুর কারণে আগের মত বান্দরবানে পর্যটকদের আনাগোনা নেই। তাই বেচা বিক্রিও কম হচ্ছে। কোরবানি ঈদের টানা ছুটিতে পর্যটক আসলে কিছুটা বিক্রি বাড়তে পারে বলেও জানান। সম্প্রতি কেএনএফ ইস্যুর কারণে বান্দরবানের বিভিন্ন পর্যটন স্পট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায় আগের মতো গতি নেই বলে জানান তারা। তবু সামনে কোরবানির ঈদকে কেন্দ্র করে প্রায় ১০ দিনের সরকারি ছুটিতে পর্যটকদের আনাগোনা বাড়বে এই আশায় বুক বেধেছেন তারা। শৈল প্রপাতের অস্থায়ী ঝুপড়িতে বসে পর্যটকদের সেবা দিয়ে জীবনের চাকা সচল রাখছেন পাহাড়ী নারীরা। পাহাড়ের বুকে টিকে থাকতে প্রতিদিনই চালিয়ে যাচ্ছেন অক্লান্ত সংগ্রাম।