ঢাকা বুধবার, ০৯ জুলাই ২০২৫, ২৫ আষাঢ় ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

ভিন্ন ‘সৌরজগৎ’ থেকে আসা বস্তুর ওপর নজর বিজ্ঞানীদের

ভিন্ন ‘সৌরজগৎ’ থেকে আসা বস্তুর ওপর নজর বিজ্ঞানীদের

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা নতুন এক ‘ইন্টারস্টেলার অবজেক্ট’ বা আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তুর খোঁজ পেয়েছেন, যেটি বাইরের কোনো সৌরজগৎ থেকে এসে এখন আমাদের সৌরজগতের মধ্যদিয়েই যাচ্ছে বলে দাবি তাদের। এমন ঘটনা খুবই বিরল। এর আগে ‘ওউমুয়ামুয়া’ ও ‘২আই/বোরিসভ’ নামের এমন শুধু দুটি বস্তুর দেখা পেয়েছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। তাদের নতুন এক ‘আন্তঃনাক্ষত্রিক’ বস্তু খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি সত্যি হলে এটি হবে তৃতীয় পরিচিত এমন বস্তু, যেটি মহাকাশের বাইরের রহস্য বোঝার ক্ষেত্রে আরেকটি সুযোগ হতে পারে বিজ্ঞানীদের কাছে। অন্য এক তারার সিস্টেম থেকে আসা এ মহাকাশীয় বস্তুটিকে মঙ্গলবার খুঁজে পেয়েছে ‘ইউনিভার্সিটি অফ হাওয়াই’-এর ‘অ্যাস্টেরয়েড টেরেস্ট্রিয়াল-ইমপ্যাক্ট লাস্ট অ্যালার্ট সিস্টেম’ বা অ্যাটলাসের গবেষণা দল। তবে বস্তুটি ঠিক কী ধরনের বা দেখতে কেমন তা এখনও স্পষ্ট নয়। বৃহস্পতির কাছ দিয়ে এটি চলাচল করছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট। বিজ্ঞানীরা যা দেখেছেন সেটি সত্যিই আন্তঃনাক্ষত্রিক কোনো বস্তু কি না সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে চাইছেন তারা। তাই এ নিয়ে আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম পোস্টে ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা বা ইএসএ বলেছে, ‘এখন গোটা বিশ্বের টেলিস্কোপ ব্যবহার করে এ বস্তুটি পর্যবেক্ষণ করছে ইএসএ-এর প্ল্যানেটারি ডিফেন্ডার দল, যার অস্থায়ী নাম দেওয়া হয়েছে #এ১১পিএলথ্রিজেড।” এদিকে, যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলেছে, তারাও এ পরিস্থিতির ওপর নজর রাখছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্লুস্কাই’তে এক পোস্টে ‘ইউনিভার্সিটি অফ অ্যারিজোনা’র ‘ক্যাটালিনা স্কাই সার্ভে’-এর গবেষক ডেভিড র‍্যাঙ্কিন বলেছেন, বস্তুটি খুঁজে পাওয়ার কিছুক্ষণ পর থেকেই এর ওপর নজর রাখা হচ্ছে।

এ ছাড়া, ক্যালেটেকের ‘জুইকি ট্রানশিয়েন্ট ফ্যাসিলিটি’-এর আর্কাইভাল ইমেজের প্রিকভারি বা পুরনো ছবি ঘেঁটে দেখা গিয়েছে, বস্তুটি আগেও দেখা দিয়েছিল। এর থেকে ইঙ্গিত মেলে, আমাদের সৌরজগতের বাইরের বা আন্তঃনাক্ষত্রিক উৎস থেকে এসেছে এটি। র‍্যাঙ্কিন ব্লুস্কাই’তে লিখেছেন, ‘কয়েকটি প্রিকভারি পর্যবেক্ষণ ও পরবর্তী অনুসন্ধানের পর স্পষ্ট হয়েছে, এ বস্তুটি সৌরজগতের মধ্য দিয়ে একটি হাইপারবোলিক পথ ধরে চলছে।’ এরপর থেকে নতুন নতুন পর্যবেক্ষণ ‘আসতে শুরু করেছে’, যা জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের বস্তুটির কক্ষপথ আরও ভালোভাবে নির্ধারণ করতে সাহায্য করছে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ইন্ডিপেনডেন্ট। র‍্যাঙ্কিন বলেছেন, আমাদের সৌরজগতে ‘ঘুরতে আসা’ প্রথম পরিচিত আন্তঃনাক্ষত্রিক বস্তু ছিল ‘ওউমুয়ামুয়া’, যেটি দেখা গিয়েছিল ২০১৭ সালে। ‘ওউমুয়ামুয়া’ প্রায় সিকি মাইল দীর্ঘ ও এক-দশমাংশ প্রস্থের এ বস্তুটি দেখতে ছিল লালচে এক রঙের পাথুরে সিগারের মতো। এর দৈর্ঘ্য-প্রস্থের এমন অনুপাত এখন পর্যন্ত আমাদের সৌরজগতের কোনো গ্রহাণু বা ধূমকেতুর মধ্যে দেখা মেলেনি। এ কারণেই অনেকে ধারণা করেছিলেন, বস্তুটি হয়ত কোনও ভিনগ্রহের মহাকাশযান হতে পারে। ওই সময় বস্তুটি নিয়ে নাসার পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছিল, এটি আমাদের তারামণ্ডলে প্রবেশের বহু আগেই কোটি কোটি বছর ধরে মিল্কি ওয়ের মধ্যে ঘুরে বেড়িয়েছে।

দ্বিতীয় পরিচিত বস্তুটি ছিল ধূমকেতু ‘২আই/বোরিসভ’, যার খোঁজ মেলে ২০১৯ সালে। প্রথমবারের মতো নিশ্চিতভাবে শনাক্ত করা আন্তঃনাক্ষত্রিক ধূমকেতু এটি এবং পরে নাসার হাবল স্পেস টেলিস্কোপও বস্তুটিকে পর্যবেক্ষণ করেছে। বিজ্ঞানীদের অনুমান, এ ধরনের আরও অনেক বস্তু নিয়মিতভাবেই পৃথিবীর কাছ দিয়ে এবং প্রতি বছর এদের মধ্যে কয়েকটি আমাদের পৃথিবীর বেশ কাছে দিয়ে উড়ে যায়। তবে এসব বস্তু চিহ্নিত করা বেশ কঠিন।

কারণ, সেগুলো সহজে দেখা যায় না ও ঠিক কোথা থেকে এসেছে তা-ও নিশ্চিতভাবে জানা অসম্ভব হয়ে পড়ে। গবেষকেরা বলছেন, ভবিষ্যতে এসব বস্তু নিয়ে আরও অনেক কিছু জানা এবং এগুলোকে দূরবর্তী তারামণ্ডলী ও গ্রহগুলোর প্রমাণ হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে। সম্প্রতি চালু হওয়া ‘ভেরা সি রুবিন মানমন্দিরে’র মতো নতুন এবং আরও শক্তিশালী টেলিস্কোপের মাধ্যমে ভবিষ্যতে অনেক বস্তু খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন বিজ্ঞানীরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত