গালিবের আশঙ্কা একেবারেই অমূলক নয়। সাইবেরিয়ার প্রাণিকূল অনেকটাই ক্ষুধার্ত থাকে শীত মৌসুমে। বসন্ত না এলে ওদের খাদ্য সংকট কাটবে না। এমতাবস্থায় মানুষের মতো নিরীহ তিনটা প্রাণীর সন্ধান পেলে চিতাণ্ডনেকড়েরা নিশ্চয়ই চুপচাপ বসে থাকবে না। আর ভূত-প্রেত হচ্ছে মনের ব্যাপার। সেটা নিয়ে সোপান ততটা শঙ্কিত নয় অবশ্য। ছয়. আন্দ্রে দানিয়া গাড়ি থেকে নেমে ইঞ্জিনটা চেক করতে লাগল। পরীক্ষা-নীরিক্ষার পরও সে ইঞ্জিনের সমস্যা খুঁজে পায়নি। দুশ্চিন্তায় তার কপালে ভাঁজ পড়ল। বিষয়টা লক্ষ্য করল পর্যটকেরাও। তারা দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে এসেছে, এখান থেকে ফিরে যাওয়াও বেশ কষ্টসাধ্যের। তাছাড়া চলাচলরত দুই একটা গাড়ির দেখা পেলেও সাহায্য নেওয়া যেত। সেটাও বোধহয় সম্ভব হচ্ছে না, কোন ধরনের যানবাহনের যাতায়াত না থাকায়। পাঁচ ঘণ্টা সময় পেরুলেও এই পর্যন্ত দুই-তিনটা গাড়ি নজরে পড়েছে; তাও শহর এলাকার কাছাকাছি থাকা অবস্থায়। তারপর এই দীর্ঘ পথে আর কোন যানবাহন অথবা জনমানবেরও দেখা পাওয়া যায়নি। এতটাই নির্জনে চলে এসেছে তারা। আসলে এই রাস্তাটা তুন্দ্রায় যাওয়ার সঠিক রাস্তা নয়; তুন্দ্রার রাস্তা ভিন্ন। পিচঢালা রাস্তা ছেড়ে গাড়ি ভুল পথে পাইন বন ধরে এগুচ্ছে।
সময় পেরিয়ে যাচ্ছে; ৪টা বাজে। সূর্য অস্ত যেতে এখনও প্রায় তিন ঘণ্টার মতো বাকি। এমতাবস্থায় গাড়ি ছাড়া ইয়াকুটস্কে ফিরে যাওয়ার কল্পনাও করা যায় না। এদিকে তুষারাচ্ছন্ন থাকায় সূর্যের আলোও তেমন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না।
ফলে চারপাশ অন্ধকারাচ্ছন্ন দেখাচ্ছে। বিষয়টা চিন্তা করেই আন্দ্রে বলল, ‘যে-কোনো একটা গাড়ি দেখতে পেলে তোমাদের তুলে দিতাম।’ উপাল অবাক হয়ে জানতে চাইল, ‘আমরা চলে গেলে তুমি কীভাবে নির্জনে থাকবে?’
‘আমাকে নিয়ে দুশ্চিন্তা করো না। তোমরা ইয়াকুটস্কের মেহমান, তোমাদের নিরাপদে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।’ নিকোলাস বলল, ‘তোমার সাহসের প্রশংসা করতে হয়। আমাদের নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে নির্জন এই বনভূমিতে তুমি একা পড়ে থাকবে কীভাবে!’ আন্দ্রে বলল, ‘আমাকে নিয়ে অতোটা ভেবো না।’
ধারাবাহিক উপন্যাস (পর্ব-১০)