চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার সর্তা খালের ওপর নির্মিত হতে যাচ্ছে আধুনিক মানের সেতু। এক সেতুতে ভাগ্য খুলতে যাচ্ছে দুই উপজেলার কয়েক লাখ মানুষের ভাগ্যের চাকা। সর্তা খালের মধ্যে বিভক্ত দুই উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল সর্তা খালে সেতু নির্মিত হলে শুধু যোগাযোগ নয় খুলে যাবে দু'পাড়ের মানুষের কৃষি, ব্যবসা, বাণিজ্যের অপার নতুন সম্ভাবনা দ্বার। বাড়বে দুপাড়ের মানুষের মধ্যে আত্মীয়তার মেল বন্ধন। এই সেতু হওয়ার ফলে দুই উপজেলার শিক্ষার্থীদের যাতায়ত ব্যবস্থার দীর্ঘদিনের জন দুর্ভোগ লাগব হবে।
আর যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার ফলে বাড়বে দুই উপজেলার শিক্ষার মান উন্নয়ন। সেই সঙ্গে বদলে যাবে দুই এলাকার মানুষের অর্থনীতির চিত্র। প্রায় ২৩ কোটি টাকার ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার। আগামী সাপ্তাহে এই স্বপ্নের সেতুর কাজ শুরু হতে যাচ্ছে, এই খবরে রাউজান ফটিকছড়ি উপজেলার মানুষের মাঝে আনন্দ ছড়িয়ে পড়েছে। জানা গেছে, স্বাধীনতার আগ থেকে দুই উপজেলার মানুষ এই খালের পানি সাঁতরিয়ে এপার-ওপার চলাফেলার করতেন। বিশেষ করে বর্ষাকালে দুপাড়ের মানুষকে ঝুঁকি নিয়ে এই খাল পার হতে হয়। বর্ষার সময়ে দুই পাড়ের শিক্ষার্থীরা ভয়ে শিক্ষা- প্রতিষ্ঠানে যেতে চায় না। প্রায়ই সময়ে ছোট খাটো দুর্ঘটনা ঘটে যেত। এছাড়া কৃষিপণ্য ও অসুস্থ রোগীদের নিয়ে দুর্ভোগে পড়তে হতো। বর্ষাকাল আসলে মানুষের দুর্ভোগ আরও দ্বিগুণ হয়ে যেত। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, রাউজানের এপার থেকে ফটিকছড়ির ওপারে কোমড় ও হাঁটু পরিমাণ পানি সাঁতরিয়ে মানুষ পারাপার হচ্ছেন। এই দুপাড়ের মানুষের মধ্যে সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। এছাড়াও খালের দুই পাশে নানা রকমের সাকসবজির ব্যাপক উৎপাদন করা হচ্ছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার আধুনিক সুযোগ সুবিধা না হওয়া অনেক সময় উৎপাদিত ফলমূল বাজারে ও বিভিন্ন জায়গা হতে আসা বেপারিদের হাতে পৌঁছাতে সময় চলে যেত। এতে নষ্ট হয়ে যেত তরিতরকারি। এখন সেতু হওয়ার কথা শুনে দুই উপজেলার মানুষের মাঝে ব্যাপক আনন্দ সৃষ্টি হয়েছে। ৭০ বছর বয়সি রহিম আলী বলেন, একসময় দুই উপজেলার মানুষ নৌকা দিয়ে এই খাল পারাপার করতেন। তখন ভাড়া ছিল ১০ পয়সা। স্বাধীনতার অনেক পর ১ টাকা মতো ভাড়ায় চড়ে এই খাল মানুষ পার হত। আমরা মরে যাওয়া পথে যাওয়া আগে সেতু হচ্ছে এটাই মনের মধ্যে শান্তি পাচ্ছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের রাউজান উপজেলা প্রকৌশলী আবুল কালাম জানান, এই সেতুর নির্মাণ কাজে ব্যয় হবে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ১২০ মিটার, সেতুর দুই পাশে করা হবে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। আগমী সাপ্তাহে ব্রিজটি কাজ শুরু করা হবে। শেষ হবে ২০২৭ সালের ডিসেম্বর মাসে, এই সেতুর কাজ শেষ করে সাধারণ মানুষের জন্য খুলে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, যাতায়াত ব্যবস্থা উন্নত হওয়ার বাড়বে দুই উপজেলার শিক্ষার মান উন্নয়ন। সেই সঙ্গে বদলে যাবে দুই এলাকার মানুষের অর্থনীতির চিত্র। এই সেতু করা হচ্ছে একটি আধুনিক মানের যেটি দেখতে হাতিরঝিল সেতুর মতো, যেটি দেখতে দেশের বিভিন্ন জায়গায় থেকে মানুষ এখানে আসবে।
পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হবে এই সেতুকে কেন্দ্র করে। এছাড়াও খাগড়াছড়ি সঙ্গে এই সেতুর মাধ্যমে আরও বেশি যোগাযোগ ব্যবস্থার সহজ হবে। এই সেতু হওয়ার ফলে রাউজান ও ফটিকছড়ির মানুষের দীর্ঘদিনের কষ্ট দূর হবে। যোগাযোগ ব্যবস্থার নতুন দিগন্ত উম্মোচিত হবে।