চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার প্রাণকেন্দ্র কেরানিহাট, যা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এবং বান্দরবান-চট্টগ্রাম এই দুটি গুরুত্বপূর্ণ সড়কের স্টেশন ও মিলনস্থল। প্রতিদিন হাজার হাজার স্থানীয় বাসিন্দা এবং দেশের প্রধান দুটি পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজার ও বান্দরবানে যাতায়াতকারী পর্যটকদের জন্য এটি একটি অপরিহার্য স্টেশন। পর্যটন, বানিজ্য ও গণ পরিবহন সবকিছু মিলিয়ে এই স্টেশন প্রতিদিন লক্ষাধিক যাত্রীর চলাচলের কেন্দ্রবিন্দু। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি এখন অসহনীয় যানজটের কবলে।
প্রশাসনের একাধিক উদ্যোগ ও প্রচেষ্টার পরও কোনোভাবেই যানজট নিরসন সম্ভব হচ্ছে না। উপজেলা প্রশাসন ফুটপাত দখলমুক্ত করণ, অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদসহ রাস্তা প্রসস্থ করার মতো একাধিক উদ্যোগ নিয়েছে, কিন্তু বাস্তবে যানজট পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হয়নি। প্রধান কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে থ্রি-হুইলার সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার অবাধ চলাচল ও স্টেশনে যত্রতত্র অবস্থান।যা সরকারিভাবে নিষিদ্ধ হলেও স্থানীয় প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় অবাধে চলছে।
সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী মহাসড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল নিষিদ্ধ হলেও কেরানিহাটে নিয়মণ্ডনীতি কার্যত উপেক্ষিত। গুরুত্বপূর্ণ এই স্টেশন এবং প্রধান সড়ক দখল করে আছে ধারণক্ষমতার বাইরে বিপুলসংখ্যক থ্রি-হুইলার। এতে যানজট চরম আকার ধারণ করছে এবং সড়ক দুর্ঘটনার ঝুঁকি দিন দিন বাড়ছে। বিশেষজ্ঞরা এই মহাসড়ককে দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ সড়ক হিসেবে বিবেচনা করছেন। গত ১৮ই মার্চ চন্দনাইশ এলাকায় দুই শিক্ষার্থী ও রিকশা চালক সহ ৩ জন একসঙ্গে বাস ও ব্যাটারি চালিত রিকশার সংঘর্ষে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারালে প্রশাসন তৎপর হয়। হাইওয়ে ও ট্রাফিক পুলিশ সতর্কতা প্রচার শুরু করে। কেরানিহাট স্টেশন ও প্রধান সড়কে থ্রি-হুইলার চলাচল বন্ধের জন্য মাইকিং শুরু করে। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, এই নির্দেশনার পর পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে; ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত থ্রি-হুইলার গাড়ি স্টেশন ও প্রধান সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে প্রতিনিয়ত। বাস্তবিক অর্থে তেমন কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। এই অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণেই দেশের অন্যতম ঝুঁকিপূর্ণ মহাসড়ক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার সড়ক ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নূরে আলম জানান, এই গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে ‘আমরা নিরলসভাবে কাজ করছি। কিন্তু জনবল সংকটে হিমশিম খেতে হচ্ছে। এক শিফটে অন্তত ৬ জন সদস্য প্রয়োজন হলেও বর্তমানে মাত্র ৩ জন করে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি স্বীকার করেন যে, থ্রি-হুইলারগুলো ট্রাফিক আইন অমান্য করছে, তবে তারা সাধ্যমতো তা নিয়ন্ত্রণে কাজ করছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, কিছু স্থানীয় প্রভাবশালী নেতাদের হস্তক্ষেপের কারণে আইনগত পদক্ষেপ নিতে গিয়ে আমরা সমস্যায় পড়ি। সিএনজি অটোরিকশা আটক করা হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী নেতার তদবিরের কারণে অনেক সময় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয় না। আটক করা গাড়ি প্রভাবশালী মহলের হস্তক্ষেপে ছাড়িয়ে নেয়া হয়, যা আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে এবং বিশৃঙ্খলা বাড়াচ্ছে। দোহাজারি হাইওয়ে থানার ওসি মাহবুবে আলম জানান, থ্রি-হুইলার যানবাহন প্রধান সড়কে ও স্টেশনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে এবং সরকারি আদেশ অমান্য করছে। স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনতে আমরা দ্রুত কঠোর আইনি পদক্ষেপ নেব। কেরানিহাটবাসীর প্রত্যাশা কেবল ঘোষণায় নয়, বাস্তব পদক্ষেপে পরিবর্তন আনবে প্রশাসন।