চার বছর ধরে নির্মাণাধীন চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলার শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের কেরানী বাজার সেতু। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি আর অব্যবস্থাপনার কারণে এখনও শেষ হয়নি কাজ। ফলে খরণদ্বীপ ও চরণদ্বীপের মানুষের একমাত্র ভরসা হয়ে দাঁড়িয়েছে জরাজীর্ণ একটি কাঠের সাঁকো। প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে হাজারো মানুষ। স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্মাণ কাজে একাধিকবার ঠিকাদার পরিবর্তন হলেও বাস্তবে দৃশ্যমান অগ্রগতি নেই। ঈদসহ বিভিন্ন মৌসুমে সাঁকো ভেঙে গেলে পুরোপুরি যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তখন দুর্ভোগের মাত্রা আরও বেড়ে যায়। জানা গেছে, কালুরঘাট-ভান্ডালঝুরি সড়কের সৈয়দখালী খালের ওপর নির্মিতব্য ৪২ মিটার দৈর্ঘ্যরে সেতুটির কাজ শুরু হয় ২০২১ সালের শুরুর দিকে। ৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে কাজটি পায় ‘ACNT-JV’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২২ সালের অক্টোবরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তবে নির্মাণসামগ্রীর মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে প্রতিষ্ঠানটি কাজ বন্ধ রেখে চুক্তি বাতিল করে।
পরে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নতুনভাবে দরপত্র আহ্বান করে ৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকায় ‘মেসার্স নুর সিন্ডিকেট’ নামের আরেক ঠিকাদারকে কাজ দেওয়া হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার শর্ত থাকলেও অগ্রগতি চোখে পড়ার মতো নয়। ব্রিজের পাশে বিকল্প হিসেবে কাঠের সাঁকো তৈরি করে কোনোভাবে চলাচল করছেন স্থানীয়রা। সেই সাঁকোও বর্তমানে ভাঙা আর জোড়াতালি দিয়ে টিকে আছে। এই সাঁকো দিয়েই চলছে ব্যাটারিচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল ও সিএনজি অটোরিকশা। ফলে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা স্থানীয়দের। স্থানীয় বাসিন্দা মো. জাবেদ হোসেন বলেন, ‘বছরের পর বছর শুধু কাজের নাটক চলছে। কাজ শুরু হয়, কিছুদিন চলে, আবার বন্ধ। এখন কাঠের সাঁকো ছাড়া বিকল্প নেই। চিকিৎসাকর্মী সবিধা দে বলেন, ‘ভাঙা সাঁকো দিয়ে রোগী পার করাতে আমাদের অনেক কষ্ট হয়। বিশেষ করে গর্ভবতী নারীদের হাসপাতালে নিতে ভয় লাগে। রিকশাচালক মো. জাকির বলেন, সরকারের অপেক্ষা করতে করতে আর পারি না। নিজের ঘরের কাঠ এনে সাঁকো মেরামত করি।
চরণদ্বীপের বাসিন্দা মো. রাশেদ বলেন, প্রতিবার ঈদ এলেই আতঙ্ক শুরু হয়। সাঁকো ভেঙে গেলে পুরো যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এ বিষয়ে বোয়ালখালী উপজেলা প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, প্রথম ঠিকাদার কাজ ফেলে যাওয়ায় নতুন ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। দুই ঈদের কারণে কিছুটা ধীরগতি ছিল। এখন আবার কাজ চলছে। আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ হবে।