ঢাকা রোববার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

৮০০ বছরের পুরোনো হারুলিয়া মসজিদ

মোস্তফা কামাল গাজী
৮০০ বছরের পুরোনো হারুলিয়া মসজিদ

ঐতিহাসিক হারুলিয়া মসজিদ। মোঘল আমলে নির্মিত সুপ্রাচীন এ মসজিদ ইসলামি ঐতিহ্যের অনন্য নিদর্শন। এটি নেত্রকোনা জেলার কেন্দুয়া উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়নের হারুলিয়া গ্রামে অবস্থিত।

ইতিহাসের খোঁজে : মসজিদের চারপাশটা সবুজ গাছগাছালিতে ছাওয়া। শ্যাওলা জমে আছে মসজিদের গায়ে। আস্তরণ খসে পড়েছে কিছু জায়গায়। মোঘল শাসনামলে ইখতিয়ার উদ্দিন মোহাম্মদ বিন বখতিয়ার খিলজির অত্যন্ত স্নেহভাজন ও অনুসারী শাইখ মোহাম্মদ ইয়ার নামক এক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি ১২০০ খ্রিষ্টাব্দে এই মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন। মসজিদের দেয়ালে ফার্সিতে শাইখ মোহাম্মদ ইয়ারের নাম ও ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ লেখা প্রমাণ করে, তিনিই এর প্রতিষ্ঠাতা।

মসজিদের স্থাপত্যশৈলী : ৭ শতাংশ ভূমির ওপর নির্মিত মসজিদটির চার কোণায় চারটি পিলার রয়েছে, যার ওপরিভাগ কলসি দিয়ে গম্বুজাকার কারুকার্যমণ্ডিত। চৌকোণ বিশিষ্ট মসজিদের ছাদজুড়ে একটি বিশালাকার গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ দিকে তিনটি লম্বাটে দরগা এবং সামনের অংশে ছোট একটি চৌচালা টিনের ঘর। ধারণা করা হয়, জায়গা কম থাকায় মুসল্লিদের নামাজ আদায়ের সুবিধার্থে এই চৌচালা নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণশৈলী ও অবকাঠামো দেখে বুঝা যায়, পোড়ামাটি, লালি, চুন, চিনি, চিটাগুড়, কস এবং এক ধরনের রসায়নিক পদার্থ দিয়ে এই প্রাচীন মসজিদ নির্মিত হয়েছিল।

লোকে যে নামে চেনে : গ্রামবাসী এটিকে হারুলিয়া দক্ষিণপাড়া পুরাতন জামে মসজিদ বলে চেনে। এলাকার প্রবীণদের অনেকে বলেন, মসজিদটি গাইন সম্প্রদারের লোকেরা নির্মাণ করেছিল। তাই একে গাইনের মসজিদও বলা হয়। মসজিদটির সামনে রয়েছে বিশালকার জালিয়ার হাওর। তৎকালীন দূর-দূরান্ত থেকে বর্ষাকালে নৌকা নিয়ে গাইন সম্প্রদায়ের লোকজন এ এলাকায় এসে ব্যবসা-বাণিজ্য করত। আশপাশের কোথাও মসজিদ না থাকায় নামাজ পড়ার সুবিধার্থে তারাই এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। কালের বিবর্তনে তারা চলে গেলেও রয়ে যায় ঐতিহ্যবাহী এ মসজিদটি।

যত্ন পাক মসজিদটি : অযত্ন আর অবহেলায় দেশের অন্যতম প্রাচীন এই মসজিদ জৌলুস হারিয়ে ক্রমশ জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, ৮২০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটি টিকিয়ে রাখতে হলে মূল অবকাঠামো ঠিক রেখে দ্রুত মসজিদটির সংস্কার করতে হবে। অন্যথায় কালের আবর্তে হারিয়ে যেতে পারে প্রাচীন এই মসজিদটি।

শিক্ষক : জামিয়া ইসলামিয়া শরইয়্যাহ, পাগাড়, টংগী

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত