
অতি বৃষ্টি ও উজানের পানিতে কেশবপুর পৌরসভা ও ১১টি ইউনিয়নের ৮৩টি গ্রামের ২০ হাজার ৬৫০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। বাড়িঘরে পানি ঢুকে পড়ায় পৌরসভা ও ১১ ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকার পাঁচ হাজার পরিবারের মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানির সংকট। এ সমস্ত এলাকার মানুষ গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন বিপাকে। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষি জমি প্লাবিত হওয়ায় কৃষকেরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। শহরের ধান বিক্রির হাট, কাঁচা বাজার, গম পট্রি ও ট্রাক টার্মিনালের পূর্বাংশ তলিয়ে গেছে। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টি, উজানের পানি ও হরিহর নদের উপচে পড়া পানিতে পাঁচ পরিবারের এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল বুধবার পর্যন্ত ৮৩টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে বলে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে জানা গেছে। তবে এখনও পর্যন্ত পানিবন্দি মানুষের মাঝে কোনো ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়নি। সরেজমিন পৌরসভার ৭নং ওয়ার্ড (মধ্যকুল) এলাকায় দেখা যায়, বৃষ্টির ভেতরেই জলাবদ্ধ পানির ভেতর দিয়ে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে অন্যত্র চলে যাচ্ছে ওই এলাকার মানুষ। ওই এলাকার বাসিন্দা ফতেমা খাতুন বলেন, বসতঘরে পানি ঢুকে যাওয়ায় মালামাল নিয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হচ্ছে। তাদের এলাকাটি গতবছরও হরিহর নদের উপচে পড়া পানিতে ছয় মাস জলাবদ্ধ ছিল। সদর ইউনিয়নের মধ্যকুল গ্রামের ছখিনা খাতুন বলেন, গত কয়েকদিনের বৃষ্টির পানি সরতে না পেরে বাড়ির উঠানে এখন হাটুপানি হয়েছে। নলকূপ তলিয়ে যাওয়ায় বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। একই গ্রামের রহিমা বেগম বলেন, পানির ভেতর দিয়েই সাংসারিক কাজকর্ম করতে হচ্ছে। গরু-ছাগল নিয়ে রয়েছি দুশ্চিন্তায়। হরিহর নদীর পানি উপচে মধ্যকুল নাথপাড়া ও আশপাশ এলাকায় ঢুকে যাচ্ছে। তবে ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের জন্য এখনও পর্যন্ত আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়নি বা কোনো ত্রাণ সামগ্রী দেওয়া হয়নি।
শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হরিহর, বুড়ভিদ্রা ও আপারভদ্রা নদী দীর্ঘ বছর পুনখনন না করায় পলিতে ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কচুরিপনায় আবদ্ধ হয়ে রয়েছে নদীগুলি। এলাকা জলাবদ্ধ হয়ে পড়ায় স্থানীয় উঠতি বয়সের যুবকেরা নিজ উদ্যোগে হরিহর নদের কচুরিপনা অপসারণের আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, জলাবদ্ধতার কারণে গতকাল বুধবার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকার পাঁচ হাজার পরিবারের ২০ হাজার ৬৫০ জন মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে এবং ৮৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। বেশ কিছু কাঁচা ঘরবাড়ির ক্ষতি হয়েছে। কেশবপুর পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল ফজল মো. এনামুল হক বলেন, পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডেই কমবেশি জলাবদ্ধতা হয়ে পড়েছে। এ পর্যন্ত দুই হাজার ৫০০ জলাবদ্ধ পরিবারের তালিকা করা হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জলাবদ্ধ পরিবারের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি পাবে।
কেশবপুর সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আলা বলেন, তার ইউনিয়নের মধ্যকুল, আলতাপোল, মূলগ্রাম, মাগুরাডাঙা, সুজাপুর ও ব্যাসডাঙা গ্রামে প্রায় দুইশত পরিবার জলাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এলাকায় টানা বৃষ্টি ও নদ-নদীর পানি ঢুকে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রেকসোনা খাতুন বলেন, নদ-নদীতে পানিপ্রবাহের জন্য কচুরিপানা অপসারণ অব্যাহত রয়েছে। আপার ভদ্রা নদীতে একটি স্কেভেটর মেশিন দিয়ে খনন কাজ চলছে। আরেকটি স্কেভেটর দিয়ে বুড়িভদ্রা ও হরিহর নদেও খনন করা হবে। জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করা হচ্ছে।