
ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ দাবিতে বিগত বছরের ৪ আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফেনীর মহিপাল ছাত্রলীগ যুবলীগের গুলিতে ও হামলায় সাতজন নিহত ও শতাধিক আহত হয়েছেন। এই বর্বরোচিত ঘটনায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে সাতটি হত্যাসহ ২২টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে একটির চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। ২২ মামলায় দুই হাজার ১৯৯ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত নামা চার হাজারসহ ৬ হাজার ১৯৯ জনকে আসামি রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় এক হাজার আসামি গ্রেপ্তার হলেও প্রধান আসামিরা সবাই এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে। গ্রেপ্তারকৃতদের আজহারভুক্ত ১১ জন স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে আদালতে।
ঘটনায় নিহতরা হলেন- ফুলগাজীর ইশতিয়াক আহম্মেদ শ্রাবণ, দাগনভুঞার সারওয়ার জাহান মাসুদ, সোনাগাজীর মাহবুবুল হাসান মাসুম, জাকির হোসেন শাকিব, ফেনী সদরের সাইদুল ইসলাম, ওয়াকিল আহম্মেদ শিহাব ও পৌর এলাকার মো. সবুজ। আহত ও হত্যাচেষ্টার শিকার: অন্তত ১৫০ জন, যারমধ্যে দাগনভুঞা, ফেনী সদর, সোনাগাজী ও কুমিল্লা থেকে ছাত্র-জনতা ছিলেন। নিহত ও আহতদের পরিবারের দাবি ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বরোচিত ঘটনায় জড়িতদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও নির্বাচনের আগে বিচার করা হোক এবং আগামীতে আর কোনো ফ্যাসিবাদের সৃষ্টি হতে না পারে এবিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।
ফেনী জেনারেল হাসপাতালে বাঁধভাঙা আমবৃষ্টির মতো, ভিড় হয় গুলিবিদ্ধ আহত ছাত্র-জনতায়। সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. তরিকুজ্জামান বলেন, যমুনা রক্তে ভয়াবহ দৃশ্য, রোগী ও লাশ ভর্তি জরুরি বিভাগ; ছিলেন সিনিয়র ডাক্তার, নার্সসহ সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা। মেডিকেল অফিসার নাজমুল হক সাম্মি যোগ করেন, একটার পর একটা প্রচণ্ড অবস্থার রোগী আসছিল, আমাদের কক্ষপথে দাঁড়ানোর জায়গা ছিল না। ফেনী জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৭টি হত্যা ও ১৫টি হত্যাচেষ্টা মামলায় এখন পর্যন্ত ১ হাজার ১১৯ জন গ্রেপ্তার, যাদের মধ্যে ১১ জন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন; চার্জশিট দেওয়া হয়েছে কাউকে। অন্যদিকে প্রায় ৬ হাজার আসামি এখনও অধরা। মামলায় সাবেক সংসদ সদস্য নিজাম হাজারী, আলাউদ্দিন আহমেদ নাসিম, মাসুদ উদ্দিন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও অন্যান্য নেতাকর্মীরা আসামি। শহিদ শ্রাবণের পিতা নেছার আহম্মদ বলেন, আমাদের সন্তানদের হত্যাযজ্ঞের বিচার না হলে তবল সুপারিশ ছাড়া আমাদের কোনো স্বস্তি নেই। কোটি কোটি টাকা বা অট্টালিকা নয়, শুধু বিচার চাই। আইনজীবী মেজবাহ উদ্দিন ভূঞা বলেন, ‘সিসি ফুটেজ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবৃতিতে দেখা যায় হামলাকারীরা আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। কিন্তু ১৯৯ আসামি এখনও আটক হয়নি। ফেনী পুলিশ সুপার মো. হাবিবুর রহমান বলেন, গ্রেপ্তার করা হয়েছে ১ হাজার আসামি, একের বেশি মোকদ্দমায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে এবং গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।