
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে শহিদ ও আহতদের স্মরণে কিশোরগঞ্জে অনুষ্ঠিত হয়েছে এক ব্যতিক্রমী ধর্মীয় আয়োজন। গত মঙ্গলবার জেলা শহরের শহীদি মসজিদ চত্বরে আয়োজন করা হয় স্কুল শিক্ষার্থীদের কোরআন খতম। এই আয়োজনে অংশ নেয় কিশোরগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্কুল-মাদ্রাসায় অধ্যয়নরত তিন শতাধিক কোমলমতি শিক্ষার্থী। পুরো আয়োজনটি পরিচালনা করে আফতার স্কুল মাক্তাব বাংলাদেশ। সহযোগিতায় ছিল তরুণ আলেম প্রজন্ম কিশোরগঞ্জ। প্রথমবারের মতো আয়োজিত এই ব্যতিক্রম ধর্মী কর্মসূচিতে দারুল আরকাম ইনস্টিটিউটের কিশোরগঞ্জ অঞ্চলের বিভিন্ন শাখার স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও একযোগে অংশগ্রহণ করে। আয়োজনে ঘণ্টাব্যাপী ইবাদতের মাঝে সম্পন্ন হয় ১০ খতম কোরআন, এরপর শহিদদের স্মরণে করা হয় বিশেষ মোনাজাত। কোরআন খতম ও মোনাজাত শেষে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত অতিথিরা বলেন, গণঅভ্যুত্থানের শহিদরা দেশের জন্য যে আত্মত্যাগ করেছেন, তার প্রতি শ্রদ্ধা জানানো ও শিক্ষার্থীদের মাঝে দেশপ্রেম জাগ্রত করতেই এই আয়োজন। পাশাপাশি শহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা।
আলোচনায় বক্তৃতা রাখেন, জামিয়া ইমদাদিয়ার প্রিন্সিপাল মাওলানা শিব্বীর আহমদ রশীদ, কবি ও লেখক মাওলানা সাইফ সিরাজ, দারুল আরকাম ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাওলানা আব্দুল কাইয়ুম, জামিয়ার নায়েবে মুহতামিম, আবু বকর মুফতি আব্দুল্লাহ সাদেক, দারুল আরকাম ইনস্টিটিউটের সহকারী পরিচালক মাওলানা আকরাম খন্দকার, শিক্ষক ও সংগঠক মাওলানা একেএম নাজিম উদ্দিন প্রমুখ।
সংক্ষিপ্ত সভায় বক্তারা বলেন, শহিদদের স্মরণে শিশুদের নিয়ে কোরআন খতম কেবল একটি আনুষ্ঠানিকতা নয়; এটি নতুন প্রজন্মকে ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত করার এক অনন্য পন্থা। কিশোর বয়স থেকেই দেশপ্রেম, আত্মত্যাগ ও ইসলামী চেতনার বীজ বপন করতে হবে, এই আয়োজনে তা ঘটেছে।
বক্তারা বলেন, মৃত্যুর পর মাইয়াতের জন্য, কোরআন তেলাওয়াত ও বেশি বেশি দোয়া পড়তে হবে। যা তাদের আমলে লিপিবদ্ধ হবে। সেজন্যই যারা আন্দোলনের শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মার মাগফেরাতের জন্য এমন আয়োজন খুবই কার্যকরী। সেই সঙ্গে আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনার জন্য এমন আয়োজন হওয়া উচিত দেশব্যাপী।
শেষে এক আবেগঘন পরিবেশে শহিদদের আত্মার মাগফিরাত কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন মাওলানা শিব্বীর আহমদ রশীদ।
প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থীর এই স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ও সম্মিলিত কোরআন খতম আয়োজনটি কিশোরগঞ্জ শহরের ধর্মপ্রাণ মানুষ ও সচেতন মহলের নজর কেড়েছে। অনেকেই বলছেন, ইতিহাসের সঙ্গে প্রজন্মের সেতুবন্ধন তৈরিতে এমন উদ্যোগ আরও নিয়মিত হওয়া উচিত। আয়োজক পক্ষ জানান, ভবিষ্যতে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবসগুলোতেও এ ধরনের আয়োজন চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। সত্য-শ্রদ্ধা-স্মরণে এক ভিন্নধর্মী আয়োজনে কিশোরগঞ্জের মাটি যেন আবারও জানালো শহিদদের আমরা ভুলিনি।