ঢাকা সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

দৌলতপুরে চার বছরেও মেলেনি উপবৃত্তির টাকা

দৌলতপুরে চার বছরেও মেলেনি উপবৃত্তির টাকা

চার বছর আগে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উপবৃত্তি পেলেও এখন পর্যন্ত তারা সে বৃত্তির টাকা পায় নি। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে উপবৃত্তির টাকা না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বৃত্তিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।

দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের দেওয়া তথ্য মতে জানা গেছে, ২০২২ সালে দৌলতপুর উপজেলার ২৮৪টি বিদ্যালয় থেকে ২,৩১০ জন প্রাথমিক পরীক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়। এর মধ্যে মেধা ও সাধারণ গ্রেডে বৃত্তি লাভ করে ১৯৩ জন শিক্ষার্থী। কিন্তু বৃত্তিপ্রাপ্ত হওয়ার ৪ বছর পার হতে চললেও অদ্যাবধি কেউ বৃত্তির অর্থ পায় নি। এ অর্থ না পাওয়ার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যাংক ও শিক্ষা অফিসে যোগাযোগ করেও কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য না পাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অভিভাবকরা। ২০২২ সালে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পাওয়া আবু ওবাইদুল্লাহ সিদ্দিক নামে ৮ম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী বলেন, আমি তারাগুনিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ে থেকে ২০২২ সালে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছিলাম। এখন আমি তারাগুনিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ৮ম শ্রেণিতে পড়ি। প্রায় ৪ বছর হতে চললেও এখন পর্যন্ত আমার প্রাপ্য (প্রতিমাসে ৩০০ টাকা) বৃত্তির টাকা পাইনি। এমন হলে বৃত্তি পেয়ে লাভ কি হলো বলে উল্টো প্রশ্ন করে সে।

বুলবুল আহমেদ নামে অন্য এক অভিভাবক বলেন, টাকা বড় ব্যাপার নয়, কিন্তু জীবনের শুরুতেই এমন অভিজ্ঞতা ওদের মেধা বিকাশে প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে পারে। সরকারের উচিত দ্রুত এ সমস্যা সমাধান করে ভবিষ্যতে যেন এমন না হয় তা নিশ্চিত করা। তহমিনা খাতুন নামে এক অভিভাবক বলেন, আমার মেয়ে কঠোর পরিশ্রম করে বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু আজও সেই পরিশ্রমের স্বীকৃতি মিলেনি। এরফলে সে মনোবল হারাচ্ছে। তারাগুনিয়া সরকারি মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, ২০২২ সালে আমাদের বিদ্যালয়ের ৯ জন শিক্ষার্থী বৃত্তি পেয়েছিল। কিন্তু প্রাপ্য অর্থ না পাওয়ায় অভিভাবকরা বারবার অভিযোগ করছেন। প্রশাসনিক জটিলতার কারণে এ বিলম্ব হচ্ছে বলে আমরা ধারণা করছি। এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাক আহমেদ বলেন, আমি সদ্য যোগদান করেছি। তবে যতদূর জানি, যাচাই-বাছাই শেষে গেজেট প্রকাশিত হয়েছে। অর্থ ছাড় সংক্রান্ত বিষয়টি মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর দেখছে। শুধু দৌলতপুর নয়, দেশের বিভিন্ন জায়গাতেই একই ধরনের সমস্যা রয়েছে। দৌলতপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার কামাল হোসেন বলেন, বৃত্তিপ্রাপ্তদের সম্মান স্বরূপ পুরষ্কার হিসেবে যে টাকাটা দেওয়া হয়, তা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের হাতে কিছু না। এগুলো শিক্ষার্থী যে সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি হয়েছে তারা দেখভাল করেন। দৌলতপুর সরকারি পাইলট মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ইয়ার আলী বলেন, শিক্ষার্থীরা ভর্তির সময় তাদের বৃত্তির কাগজপত্রসহ আমরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠিয়েছি। এখন পর্যন্ত তাদের বৃত্তির টাকা তাদের ব্যাংক একাউন্টে আসেনি। তবে কেন আসেনি তা আমাদের জানানেই। বৃত্তির অর্থ না পাওয়ার বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমার কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য জানা নাই। সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে আলোচনা করে বিস্তারিত পরে জানাতে পারব। মেধার স্বীকৃতি বৃত্তির অর্থ সময়মত পরিশোধ করা না হলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মাঝে সৃষ্টি হবে হতাশা ও ক্ষোভ। তাই প্রয়োজন এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া। আর এমনটি মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত