
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষ থেকে যাত্রা শুরু করে এখনও মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি কমিউনিকেশন অ্যান্ড মাল্টিমিডিয়া জার্নালিজম বিভাগ। মাত্র দুটি ক্লাসরুম আর দুইজন শিক্ষকে ভর করে খুঁড়িয়ে চলছে বিভাগটি। দুইজন শিক্ষকই সামাল দিচ্ছেন বিভাগের পাঁচটি ব্যাচ। এছাড়া বাংলা বিভাগ থেকে ধার করা এক শিক্ষক বর্তমানে এই বিভাগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন।
এ দিকে বিভাগের নামের সঙ্গে ‘মাল্টিমিডিয়া’ শব্দ থাকলেও আধুনিক ল্যাব, টেকনিক্যাল সুবিধা, পর্যাপ্ত বই, ক্যামেরা, রেকর্ডিং সেটআপের কোনো ব্যবস্থা নেই। এতে হাতেকলমে সাংবাদিকতা ও মাল্টিমিডিয়া পড়াশোনার কার্যকরী শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। অথচ নাম দেখেই শিক্ষার্থীরা স্বপ্ন দেখে আধুনিক সাংবাদিকতা শিক্ষা ও মাল্টিমিডিয়া সুযোগ-সুবিধার। মাল্টিমিডিয়া শুধু কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ, বাস্তবে নেই কিছুই। সাংবাদিকতা শিক্ষার নামে এখানে চলছে এক ধরনের প্রহসন। শিক্ষকের ঘাটতিতে নিয়মিত পাঠদান ব্যাহত হচ্ছে। একজন শিক্ষক একসঙ্গে কয়েকটি ব্যাচের দায়িত্ব নিতে গিয়ে মানসম্মত লেকচার দিতে পারছেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা হচ্ছে জ্ঞানের চেয়ে চাপের শিকার। ক্লাসরুম সংকটের কারণে একই রুমে একাধিক ব্যাচের ক্লাস চালানো হয়, যা পুরোপুরি বিশৃঙ্খলা তৈরি করে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা।
প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী খন্দকার ফাহিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগ মাত্র ২ জন শিক্ষক নিয়ে কিভাবে চলতে পারে আমি বুঝি না। তার ওপর এক ব্যাচ ক্লাস শুরু করলে অন্য ব্যাচকে বেরিয়ে আসতে হয়। বিভাগের নামে মাল্টিমিডিয়া থাকলেও বাস্তবতায় যার কোনো অস্তিত্বই নেই। ব্যবহারিক অভিজ্ঞতা না থাকায় কর্মক্ষেত্রে দুর্বল প্রতিযোগী প্রতিপন্ন হতে হবে। মাত্র ৫টি ব্যাচ নিয়েই আমরা সেশনজটে ভুগছি। কর্তৃপক্ষ আমাদের শিক্ষক, ক্লাসরুম ও আবশ্যিক প্রয়োজন নিয়ে কেন চিন্তা করছে না তা বোধগম্য হচ্ছে না। বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. রশিদুজ্জামান বলেন, ল্যাব অ্যাসিস্ট্যান্ট এবং লাইব্রেরিয়ান নিয়োগের জন্য ভিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা পাঁচ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইউজিসিতে চাহিদা দিয়েছি, কিন্তু ইউজিসি মাত্র এক জন শিক্ষকের অনুমোদন দিয়েছে। বর্তমানে মাত্র দুই জন শিক্ষক দিয়ে পাঁচটি ব্যাচের শিক্ষা-কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত বাজেট না পাওয়ার বিভাগের অবকাঠামোগত উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে না। এরইমধ্যে আমি পাবলিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের সভাপতির সঙ্গে কথা বলে একটা কক্ষ নিয়েছি। সেখানে আমাদের শিক্ষার্থীরা ক্লাস করতে পারবে। নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যে আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে বিভাগকে এগিয়ে নিতে কাজ করে যাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. নকীব মোহাম্মদ নসরুল্লাহ বলেন, আমরা শিক্ষক নিয়োগের জন্য ইউজিসিতে চাহিদা দিয়েছি। ইউজিসি চেয়ারম্যান আমাদের দ্রুত শূন্য পদ নিয়োগ দেওয়ার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। আশাকরি আমরা দ্রুতই শিক্ষক সংকট নিরসন করতে পারব। এছাড়াও নতুন একাডেমিক বিল্ডিংয়ের নির্মাণ কাজ শেষ হলে শ্রেণি সংকট দূর হবে।