ঢাকা শনিবার, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩২ | বেটা ভার্সন

পায়রার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-জমি

পায়রার ভাঙনে বিলীন হচ্ছে বসতবাড়ি-জমি

চলতি বছর বর্ষা মৌসুম আসার আগেই পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ উপজেলা বেষ্টিত পায়রা নদীতে ভাঙনের তীব্রতা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর ফলে গত কয়েক দিনের ব্যবধানে উপজেলার পিপড়াখালী গ্রামের অন্তত সাতটি বাড়ি, একটি মসজিদ, কবরস্থান ও একটি স্কুল নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

ভাঙনের এমন ভয়াবহতা দেখে নদীর তীরবর্তী বাসিন্দারা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। অনেকে এরইমধ্যে পাকা ঘরবাড়ি ভেঙে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিচ্ছেন। এমনকি ভাঙনের আশঙ্কায় পূর্বপুরুষদের কবরস্থানও নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে দেখা গেছে।

এছাড়াও উপজেলার রামপুর, ভিকাখালী, সুন্দ্রা-কালিকাপুর, গোলখালি-চরখালী, চিংগড়ীয়া, হাজিখালী, মেন্দীয়াবাদ ও কাকড়াবুনিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় পায়রা নদীর ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন নদী তীরবর্তী বাসিন্দারা। সেইসঙ্গে এমন অব্যাহত ভাঙনের ফলে দিন দিন ছোট হয়ে আসছে মির্জাগঞ্জ উপজেলার মানচিত্র। অন্যদিকে চোখের সামনে কৃষকের একমাত্র সম্বল বাড়ি অথবা আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। আর তা নিজ চোখে দেখতে হচ্ছে অসহায় কৃষকদের। নদীর তীরবর্তী এলাকার অসংখ্য পরিবারের এমন দৃশ্য এখন নৈমিত্তিক ঘটনা। গত কয়েক বছর ধরে পায়রা নদীর অব্যাহত ভাঙনে নদী পাড়ের শতাধিক ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে গেছে। মাথা গোজার ঠাঁই হারিয়ে এসব লোকজন অনত্র বসবাস শুরু করছেন। এভাবে বছরের পর বছর নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলেও ভাঙন রোধে স্থায়ী কোনো উদ্যোগ নেই বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলার ভিকাখালী, পিপড়াখালী, সুন্দ্রা, চিংগড়ীয়া গ্রামের পায়রা নদীর তীরের অস্থায়ী বেড়িবাঁধের অনেক জায়গায় বড় বড় ফাঁটল দেখা দিয়েছে। কোথাও কোথাও বেড়িবাঁধের পুরো অংশই ভেঙে নদীগর্ভে চলে গেছে। ভাঙন একদম বাড়ির নিকটে চলে আসায় কেউ কেউ বিল্ডিংসহ টিনের বাড়িঘর ভেঙে অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন। কেউ আবার পূর্বপুরুষদের কবরস্থান নিশ্চিহ্ন হওয়া থেকে রক্ষা করতে কবরস্থানের মাটি নিরাপদ স্থানে সরানোর কাজ করছেন। ক্ষতিগ্রস্ত জমিহারা অসহায় লোকজন চরম হতাশায় অন্যত্র জীবনযাপন শুরু করছেন। সরকারি কোনো পদক্ষেপ না পাওয়ায় তীব্র ক্ষোভ দেখা গেছে ভাঙন কবলিত বাসিন্দাদের মধ্যে। ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাবাসী সরকারের কাছে তাদেরকে ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা করতে দ্রুত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণসহ দীর্ঘমেয়াদি ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। পিপড়াখালী গ্রামের বাসিন্দা জাকির হোসেন বলেন, আমাদের দাদার ভিটেমাটি পর্যন্ত নদী গিলে ফেলেছে। কোথায় যাব, ভেবে পাচ্ছি না। জীবনভর যা গড়েছি, একে একে সব নদীতে হারিয়ে যাচ্ছে। একই গ্রামের বাসিন্দা রাসেল খান ও আলমগীর হোসেন জানান, গত কয়েক বছরে এ অঞ্চলের সুন্দ্রা-কালিকাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পিপড়াখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা ও শত শত ঘরবাড়িসহ হাট-বাজার নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কয়েক দফা অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার পরেও তা এখনও রয়েছে নদী ভাঙনের ঝুঁকিতে। ভিকাখালী, পিপড়াখালী ও সুন্দ্রা গ্রামেই আগে ১০-১২ হাজার মানুষের বসবাস ছিল। একসময় এই গ্রামে স্কুল, মাদ্রাসা, বাজার সবই ছিল। নদী ভাঙনে নিঃস্ব হয়ে অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। এখন হাতেগোনা কয়েকটি পরিবার এই গ্রামে রয়েছে। যেভাবে ভাঙন চলছে, তাতে অচিরেই গ্রামগুলো পায়রায় বিলীন হয়ে যাবে। মির্জাগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট আবুল বাশার (নাসির) বলেন, এখানে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) নামমাত্র বেড়িবাঁধ দেয়। আবার বন্যায় তা ভাসিয়ে নিয়ে যায়। টেকসই বেড়িবাঁধ তৈরির জন্য বারবার দাবি করেও কোনো ফল হয়নি। আশা করি খুব শিগগিরই সংশ্লিষ্টমহল এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিবেন।

এ বিষয়ে মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, পায়রা নদীর ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। পটুয়াখালী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব বলেন, পিপড়াখালী গ্রামে অন্তত পাঁচ থেকে ছয় কিলোমিটারজুড়ে ভাঙনের তীব্রতা বৃদ্ধি পেয়েছে।

আমি কয়েকদিন আগে ভাঙন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি। দুই-একদিনের মধ্যেই এসব এলাকায় গ্রামের ভিতরের অংশে নতুন বেড়িবাঁধ তৈরির কাজ শুরু হবে।

আরও পড়ুন -
  • সর্বশেষ
  • সর্বাধিক পঠিত