
দাম কম ও খরচ বেশি হওয়ার কারণে কুষ্টিয়ায় পান চাষে আগ্রহ হারাচ্ছেন প্রান্তিক কৃষকরা। পানের দাম কম হওয়ায় উৎপাদন খচরটাও ঘরে তুলতে না পারায় চাষিরা হতাশ। জেলার অনেক এলাকায় পান চাষিরা ভেঙে ফেলছেন তাদের পানের বরজ। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়নে প্রায় ৬৪৫ হেক্টর, দৌলতপুর উপজেলায় প্রায় ৬২০ হেক্টর খোকসা উপজেলায় প্রায় ৬১৫ হেক্টর জমিতে পান চাষ হয়। যেখানে প্রতি বছরে ১৭ হাজার টন পান উৎপাদন হয়। ব্রিটিশ আমল থেকে জেলার এই অঞ্চলগুলো পান চাষের জন্য প্রসিদ্ধ।
সরেজমিনে ভেড়ামারা উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন জুনিয়াদহ, ধরমপুর ও বাহাদুরপুর, খোকসা উপজেলার দুটি ইউনিয়ন বেতবাড়িয়া ও ওসমানপুর এবং দৌলতপুর উপজেলার তিনটি ইউনিয়ন প্রাগপুর, মথুরাপুর ও হোগলবাড়িয়ার প্রান্তিক পান চাষিদের দুর্ভোগের চিত্র দেখা যায়। তারা জানান, প্রতি বিঘা নতুন পান বরজে খরচ হয় ৩-৪ লাখ টাকা। সেখানে পান বিক্রি করে আসছে ১ লাখেরও কম। পান বরজের সরঞ্জামের দাম বেড়েছে তিনগুণ। আগে যে শ্রমিকের মজুরি ছিল ৪০০-৫০০ টাকা। বর্তমানে তা হয়েছে ৮০০-১০০০ টাকা। তাই অনেকেই পান বরজ মেরামত না করে ফেলে রেখেছেন। দাম কম হওয়ায় কেউ আবার বরজের পান ভাঙছেনও না।
অন্যদিকে ঋণের দায়ে জর্জরিত কেউ কেউ বরজ ভেঙে অন্য চাষাবাদ করার মনস্থির করেছেন। বরজের ওপর ঋণ নিয়ে পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে এলাকা ছাড়া হয়েছেন। গতকাল বুধবার সকালে ভেড়ামারা উপজেলার বৃহত্তম হাট জগশ্বর পান হাটে গিয়ে দেখা যায়, ৫০-২০০ টাকা বিড়ার পান বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫-৩০ টাকায়। খুব ভালো মানের পান বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা বিড়া।
পান বিক্রি করতে আসা চাষি মো. রিফাজ উদ্দিন বলেন, প্রতি বিড়া মাত্র ৭ টাকায় বিক্রি করলাম, যা গত বছর করেছি ৯০-১০০ টাকায়। পান ভাঙা আর যাতায়াত খরচই উঠল না। এই ব্যবসা আর হবে না।’ খোকসার একতারপুরের চাষি বিমল বিশ্বাস বলেন, আমার জীবনে পানের দাম এত কম দেখিনি। আমার ৯০ পিলি পান বরজ ছিল কিন্তু দাম না পেয়ে ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
জগশ্বর পানহাটের সাধারণ সম্পাদক মঈন উদ্দিন বলেন, উৎপাদন বেশি ও রপ্তানি না থাকায় এ বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় পানের দাম অনেক কম। কিন্তু শ্রমিক ও পান বরজের সরঞ্জামের দাম আগের থেকে ২-৩ গুণ বেশি। সরকারি কোনো প্রণোদনা না থাকায় প্রান্তিক চাষিদের মধ্যে হাহাকার লক্ষ্য করছি। ঋণের ভারে জর্জরিত চাষিরা এই আবাদ ছেড়ে দিচ্ছেন। অর্থকরী এই খাতটিকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের সাহায্য চাই।
কুষ্টিয়া জেলা কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক সূফি রফিকুজ্জামান বলেন, দাম কম হওয়ায় পান চাষিদের বেহাল দশার বিষয়টি আমরা শুনেছি। আগে মধ্যপ্রাচ্যসহ বেশকিছু দেশে পান রপ্তানি হলেও এখন সেটা হচ্ছে না বললেই চলে। আপাতত পান চাষিদের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কোনো প্রণোদনার ব্যবস্থাও নেই। তবে খুব শিগগিরই সরকারের পক্ষ থেকে পান চাষিদের জন্য প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।