
প্রতিদিনের মতোই জীবিকার টানে করমজল খালের পাড় ধরে কাঁকড়া ধরতে যাচ্ছিলেন সুব্রত মণ্ডল ও তার সঙ্গীরা। জীবনের ঝুঁকি মাথায় নিয়েই শুরু হয়েছিল সেই দিনের যাত্রা। বনের ভেতর নদী-খাল পেরিয়ে কাঁকড়া ধরে ফিরছিলেন সুব্রত। বন থেকে বাড়ি ফিরতেই পার হতে হবে করমজল খাল, যেখানে প্রায়ই কুমিরের দেখা মেলে বনজীবীদের সঙ্গে। সবাই সাবধানে পার হচ্ছিলেন খাল। কাঁকড়া ধরে বাড়ি ফেরা দলের শেষ মানুষটি ছিলেন সুব্রত, ছোটখাটো গড়নের চেহারা ছিল তার। খাল পারাপারের এক মুহূর্তের অসতর্কতায় পানিতে খানিকটা থমকে পড়লেন।
ঠিক সেই মুহূর্তে জল ফুঁড়ে উঠল সুন্দরবনের নীরব শিকারি এক বিশালাকৃতির কুমির। দুই পায়ের মাঝখানে জড়িয়ে ধরে পানির নিচে টেনে নিয়ে গেল সুব্রতকে। চিৎকার করে উঠলেন সহযাত্রীরা, দৌড়ে এসে হাত ধরলেন, চেষ্টা করলেন চারজন মিলে। কিন্তু তিন মিনিটের লড়াইয়ে হার মানতে হলো প্রকৃতির হিংস্রতার কাছে। ডুবে গেলেন সুব্রত।
বনের স্তব্ধতা ভেঙে কেবল কান্না আর আর্তনাদ। ততক্ষণে খবর পৌঁছে গেছে গ্রামে। নৌকা ও ট্রলার নিয়ে অর্ধশতাধিক গ্রামবাসী প্রিয় মানুষটিকে উদ্ধারে। স্ত্রী অন্তঃসত্ত্বা, বাবা অসুস্থ, ছোট তিন ভাই আর বৃদ্ধা মা এই মানুষগুলোর একমাত্র ভরসা ছিলেন সুব্রত। তাকে ফিরিয়ে না নিতে পারলে কেউ ঘরে ফিরবেন না, এমন প্রতিজ্ঞা করে ঝাঁপিয়ে পড়েন কুমিরের আস্তানায়।
পানির নিচে প্রায় সাত ঘণ্টা লুকিয়ে রাখে কুমির তার শিকারকে। মধ্যে কয়েকবার দেখা যায় সুব্রতের নিথর দেহ, মুখে কামড়ে ধরে ঘুরে বেড়ায় কুমির। সন্ধ্যার পর বনরক্ষীরা আসে ট্রলার নিয়ে, কিন্তু তখনও লাশ পুরোপুরি উদ্ধার সম্ভব হয়নি। অবশেষে রাত সাড়ে দশটায় গ্রামের আলম শেখ খুঁজে পান ক্ষতবিক্ষত সুব্রতকে।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ঘটনার পর বন বিভাগের লোকজন ও স্থানীয় গ্রামবাসী করমজল খালে তল্লাশি চালান এবং পরে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিকভাবে বনবিভাগের পক্ষ থেকে তার পরিবারকে ৩ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ প্রদান করা হবে। সুব্রত মন্ডলের স্ত্রী মুন্নি খাতুন বলেন, আমাদের পরিবারের একমাত্র আয়ের মানুষ ছিল সুব্রত। আমি ৫ মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এখন আমার কি হবে।