
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে রায়কোট উত্তর ইউনিয়নে মানবসৃষ্ট কারণে সৃষ্টি হওয়া জলাবদ্ধতা কৃষিক্ষেত্রে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করছে, যার মধ্যে রয়েছে ফসলের জমি ডুবে যাওয়া, বীজতলা নষ্ট হওয়া এবং বিভিন্ন ধরনের ফসল (যেমন- ধান, সবজি, আখ, ভুট্টা) উৎপাদন ব্যাহত হওয়া। এই ধরনের জলাবদ্ধতা মূলত অপরিকল্পিত নির্মাণ, খাল দখল এবং পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার ত্রুটির কারণে সৃষ্টি হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের আর্থিক ও জীবিকাগতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রায়কোট উত্তর ইউনিয়নের উত্তর মাহিনী, দক্ষিণ মাহিনী, লক্ষিপদুয়া, খোঁসাড়পাড়া, ছুপুয়া উত্তরপাড়া গ্রামের মধ্যেখানে প্রায় ৬০০ একর ফসলি জমি পানির নিচে ডুবে আছে। প্রভাবশালী ব্যক্তিরা সেচ ও পানি নিষ্কাশন ড্রেন দখল করে পুকুর ও অপরিকল্পিত বাড়ি নির্মাণ করায় পানি নিষ্কাশন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, ফলে নিচু জমিতে পানি জমে যায়।
স্থানীয় কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, গত ৮ থেকে ১০ বছর আগেও আমাদের এসব জমিতে পানি জমেনি। আগে এসব জমিতে আমরা বছরে তিনটি ফসল করেছি। এখন বছরে মাত্র একটি ফসল করতে পারছি। এসব জমিনের অতিরিক্ত পানিগুলো বিভিন্ন কালভার্টের নিজ দিয়ে চলে যেত। কিন্তু গত ৮ থেকে ১০ বছর আগে উত্তর মাহিনী গ্রামের মৎস্য ব্যবসায়ী উসমান (মেকার) তার বাড়ির পশ্চিমপাশে পানি নামার রাস্তায় অপরিকল্পিতভাবে বেশ কয়েকটি পুকুর খনন করে এই জমিগুলোর পানি পূর্বদিকে ডাকাতিয়া নদীতে নামার রাস্তা বন্ধ করে দেয়। যার কারণে বছরের পর বছর আমাদের ফসলি জমিগুলোতে পানি জমে থাকায় কচুরিপানার স্তূপ জমে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
অন্যদিকে খোঁসাড়পাড়া ও দক্ষিণ মাহিনী গ্রামেও অপরিকল্পিতভাবে নতুন নতুন বাড়ি নির্মাণ, পুকুর খননের ফলে পানিপ্রবাহের স্বাভাবিক গতি নষ্ট হয়ে পানি জমিতে আটকে গেছে। এতে করে বৃষ্টির পানি সহজে সরতে না পেরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে।
ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় প্রায় ৬০০ একর জমির ফসল পানিতে ডুবে থাকে মাসের পর মাস। ধান, গম, সরিষা, পেঁয়াজ, তরমুজ, মরিচ, পেঁপে, ভুট্টা এবং অন্যান্য শাকসবজিসহ নানা ধরনের কৃষিজাত ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জলাবদ্ধতার কারণে মাছের ঘের ও পুকুর ভেসে যায়, যা মৎস্য চাষিদের জন্য একটি বড় ক্ষতি। এতে করে আউশ ও আমন ধানের বীজতলা এবং বিভিন্ন সবজির চারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ফলে কৃষকের ভবিষ্যৎ ফসল উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বছরের পর বছর। এতে করে কৃষকরা চরম আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়ে আসছে দীর্ঘ বছর ধরে যা তাদের জীবিকা নির্বাহকে কঠিন করে তুলছে। দীর্ঘ বছর ধরে চলা মানবসৃষ্ট জলাবদ্ধতায় অত্র এলাকার কৃষকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর সরকারি সহায়তার জন্য অপেক্ষা করেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউনিয়ন ব্লক সুপার সুব্রত সাহা বলেন, এই এলাকার আটকে থাকা ফসলি জমির পানি ডাকাতিয়া নদীর দিকে নামানোর জন্য স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে আমি বারবার কথা বলেছি; কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।